১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিরহবিধুর

-

সদর হাসপাতালে ১০ তলার রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাফিন। হাতে একটি সাদা পাতা মোড়ানো। প্রচণ্ড বাতাসে ফরফর করে উড়ছে সেটা। লম্বা লম্বা চুল এসে চোখ ঢেকে দিচ্ছে তার, তবুও নিথর সে। রাফিনের দৃষ্টি চুল পেরিয়ে থেমে গেছে মহাসড়কে। যে সড়কে ব্যস্ত মানুষের চলাচল, হর্নের আওয়াজ এবং কোলাহল। একজোড়া কপোত-কপোতি হাত ধরে সড়কের একপাশে দোকানগুলোর কোল ঘেঁষে হেঁটে চলেছে। এমন চলমান দৃশ্যপট রাফিনের হৃদয়ের কোলাহল বাড়িয়ে তুলল। চোখ বন্ধ করে বারবার নিঃশ্বাস নিতে শুরু করল সে। বন্ধ চোখের পাতায় নিঃসঙ্গ পাখি উন্মাদনায় ভেসে নিয়ে এলো কিছু স্মৃতি। একসময় এই মহাসড়কের ধারে দোকানগুলোর পাশ ঘেঁষে সেও চলত। পাশাপাশি চলত হাস্যরসে ভরপুর এক মেয়ে, প্রীতিলতা। ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত সড়কে চলন্ত যানগুলোকে সে খুব বেশিই ভয় করত। সে জন্য রাফিনের হাত ছাড়া হতো না কখনোই। কতবার যে চোখে চোখ পড়েছে, কতবার যে হয়েছে অন্তরে অন্তরে আলিঙ্গন; সে হিসাব কারো কাছে নেই। প্রতিদিনের মতো জীবনযাত্রা চলছিল রাফিন ও প্রীতিলতার। তারপর সহসা কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই এক ঝড়ের আগমন। হঠাৎ করেই তাদের মাঝে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। প্রীতিলতার বাড়িতে খোঁজ নিতে গেলে উল্টো এলোপাতাড়ি আঘাতের শিকার হয় রাফিন। ঝুলন্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রীতিলতা ফুঁঁপিয়ে বলে ওঠে, ‘আমাকে ক্ষমা করো’। এতটুকু কথা কেমন করে যেন রাফিনের মনে দাগ কেটে বলে, প্রীতিলতা আর রাফিনের নেই। রাফিন জানে প্রীতিলতা তাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। তবুও অন্যের স্ত্রী হতে রাজি হওয়ার নিশ্চয় যথোপযুক্ত কারণ আছে। দেহটাকে এমন কথা বলে শান্ত করতে পারলেও রাফিন কিছুতেই নিজের অন্তরকে শান্ত করতে পারেনি। প্রীতিলতা তার জীবনে বনলতা সেন হয়ে এসেছিল, আজ ঠিকই বেলা বোস হয়ে হারিয়ে গেল! যাক। কিছু প্রীতিলতা থেকে যাওয়ার জন্য আসে না। তাদের চলে যাওয়ার তাড়া থাকেÑ একটা যাত্রী ভরপুর বাস যেমন পথে তাড়া নিয়ে চলতে থাকে ঠিক তেমন। জোরে বয়ে চলা বাতাসের বেগ ছাড়িয়ে আকাশে কালো মেঘের পুঞ্জ ছোটাছুটি করতে শুরু করল। চোখ খুলে খোলা আকাশে উদ্দেশ্যহীন চাহনি ছুড়ল রাফিন। মø­ান মুখে হাতে থাকা চিঠিতে চোখ বুলাল সে। সুনিপুণ হাতে সেখানে প্রীতিলতার আত্মহত্যার কাহিনী লেখা। চিঠির শেষে লাল কালিতে বেশ যতেœ লেখা দু’টি লাইন, ‘আমাকে ছাড়া ভালো থাকবে না জেনেও ভালো থাকতে বলে গেলাম। আমাকে ক্ষমা করো। আমি জানি, তুমি তোমার প্রীতিলতাকে ক্ষমা করতে পারবে।’ হাসপাতালের র্যাক থেকে শন্তর্পণে একটি কলম বের করল রাফিন। চিঠির উল্টোপাশে লিখল, ‘তুমিও আমাকে ক্ষমা করো প্রীতিলতা’। রেলিংয়ের বাইরে পা দুটি বের করে বসল রাফিন। এখান থেকে পড়ে গেলে খুব জোরে লাগবে হয়তো। আচ্ছা, হৃৎপিণ্ড কি চুরমার হয়ে যাবে? অথবা মগজ! ম­ান হেসে, আলতো করে শরীর ছেড়ে দিলো রাফিন। জোরালো বাতাসের হুঙ্কার আর দ্রুত নিচে পড়তে থাকার শোঁ শোঁ শব্দে হারিয়ে গেল সে। এই যেন প্রীতিলতা এসে জড়িয়ে ধরবে, আর রাফিন বলে উঠবে, ‘আমাকে ছেড়ো না প্রীতিলতা। আমি উঁচু থেকে পড়তে বড্ড ভয় পাই!


আরো সংবাদ



premium cement
রাঙ্গামাটিতে বজ্রপাতে কিশোরীর মৃত্যু জামালপুরে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে অটোরিকশা চুরির মামলা কেএনএফ সদস্যদের আদালতে উপস্থাপন, ৫২ জনের রিমান্ড মঞ্জুর ৬ জেলায় বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ, মর্টার শেলের শব্দে প্রকম্পিত সীমান্ত এলাকা হামলার ব্যাপারে ইসরাইল নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে : নেতানিয়াহু ইরানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে পাশ্চাত্যের দেশগুলো সিদ্ধিরগঞ্জে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, নগদ টাকাসহ ৮০ লাখ টাকার মালামাল লুট প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী পরীমণির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন স্থায়ী যুদ্ধবিরতি না হওয়ায় গাজায় মানবিক প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ : রাশিয়া

সকল