মানুষের জীবন ও বিজ্ঞান
- আবু এন এম ওয়াহিদ
- ২৮ নভেম্বর ২০২১, ০০:২২
আমরা এমন এক জামানায় বাস করছি, বিজ্ঞানী হই বা না হই, তবু বিজ্ঞান নিয়ে ভাবতে হয়। দিনে দিনে আমাদের জীবন আগাসে গোড়া এমনভাবে বিজ্ঞানমুখাপেক্ষী হয়ে উঠছে যেন, আমরা সচেতন অথবা অবচেতন মনে প্রতিনিয়ত গভীর বিজ্ঞানসায়রে ডুবে হাবুডুবু খাচ্ছি, অথচ কিছুই টের পাচ্ছি না। এমতাবস্থায় মনের অজান্তে কেউ কেউ অতিরিক্ত বিজ্ঞানবান্ধব ও বিজ্ঞানপ্রেমী বনে গেছেন। বিজ্ঞান যাই বলুক তারা তাই সঠিক মনে করেন এবং বুঝে না বুঝে সেসব অন্ধের মতো অনুসরণ করেন। তারা ভাবেন, বিজ্ঞান মানেই আধুনিকতা, বিজ্ঞান মানেই অগ্রগতি, বিজ্ঞান মানেই নিষ্কলুষ কল্যাণ। পক্ষান্তরে, অনেকে আবার বিজ্ঞানবিরূপও হয়ে উঠছেন। এসব মানুষ বিজ্ঞানের নিত্যনতুন ধারণা ও নতুন নতুন উপকরণের সাথে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারেন না। তারা মনে করেন, বিজ্ঞানকে না মানাটাই যেন বলিষ্ঠ চরিত্র ও ব্যক্তিত্বেরই বহিঃপ্রকাশ। এই দুই কিসিমের মাঝখানে যে আরেক দল মানুষ আছেন, সে কথা অনেক সময় আমরা বেমালুম ভুলে যাই। তারাও আছেন এবং তাদের ভারসাম্যপূর্ণ চিন্তাশক্তি এবং পরিমীতিবোধসম্পন্ন জীবন ধারণ সমাজ ও সভ্যতার জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় বটে। এ পর্যায়ে আপনারা ভাবতেই পারেন, আমি নিজেকে মাঝখানের কাতারে ফেলে বুঝি বাহাদুরি নেবো; কিন্তু সত্যি বলতে কি, এই তিন দলের মধ্যে আমার অবস্থানটি কখন কোথায় গিয়ে ঠেকে তা আমি নিজেও জানি না। এমনি এক পটভূমিতে আজ আমি বিজ্ঞান নিয়ে আমার জানা, বুঝা ও মনের দুটো কথা অকপটে আপনাদের উদ্দেশে নিবেদন করতে চাই। ভুলত্রুটি পেলে ধরিয়ে দেবেন। খুশি মনে শুধরে নেবো।
আমরা জানি, বিজ্ঞান প্রধানত দুটো শাখায় বিভক্তÑ তাত্ত্বিক ও ফলিত। তাত্ত্বিক বিজ্ঞানের তামাম তত্ত্ব ও সূত্র আসে খোদ বিজ্ঞানীর মাথা থেকে, আর এসবের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলে কতেক গবেষণাগারে চার দেয়ালের ভেতরে, আবার কতেক হয়ে থাকে সরেজমিন বাইরের বাস্তব জগতে। পরীক্ষিত সূত্রগুলো ব্যবহার করে ফলিত বিজ্ঞান মানবসমাজকে উপহার দিচ্ছে নিত্যনতুন প্রযুক্তি। কালের পরিক্রমায় এই প্রযুক্তির পরিসর বিস্তৃত হচ্ছে, নতুন নতুন ডালপালা মেলছে, গুণেমানে সমৃদ্ধ হচ্ছে। পৃথিবীব্যাপী ছোটবড় অসংখ্য কোম্পানি নিরন্তর নব নব প্রযুক্তিকে লুফে নিয়ে, নাড়াচাড়া করে, মানুষের জীবন ও জীবনযাত্রাকে সুন্দর, সহজ ও সহনীয় করে তোলার জন্য প্রত্যহ নানা জাতের প্রযুক্তিজাত যন্ত্রপাতি, উপকরণ ও উপাদানের ডালি নিয়ে ভোক্তা সাধারণের দুয়ারে এসে কড়া নাড়ে। এর মাঝে যেমন নিহিত আছে মানব সেবা ও মানব কল্যাণ, তেমনি আছে ব্যবসা-বাণিজ্য, কেনাবেচা ও তাগড়া মুনাফা হাসিলের তাগাদা। কোনটার চেয়ে কোনটা বড়, সে-ও এক রসালো বিতর্কের অনুষঙ্গ। সেদিকে আজ আর যাবো না। বাজারে নিত্যনতুন জিনিসপত্রের আমদানি-রফতানির ডামাডোলে হাজারো জাতের ছোটবড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তাদের লাভের কঠিন ও জটিল অঙ্কগুলো সহজেই মিলিয়ে নেয়। ভোক্তা হিসেবে আমরাইবা কম কী। প্রয়োজন ও খায়েশ মেটানোর উদ্দেশ্যে আমরা রঙ-বেরঙের উপকরণগুলো দেওয়ানা হয়ে কিনি, এস্তেমাল করি, উপভোগ করি, উপকার পাই। একটা বিকল হওয়ার আগেই ছুড়ে ফেলে দিই, তারই উন্নত সংস্করণ আরেকটি কিনি। এভাবে দিনে দিনে আমাদের জীবন বৈচিত্র্যে, আনন্দে আর উত্তেজনায় ভরপুর হয়ে উঠছে। আজকাল প্রযুক্তির ওপর আমরা এমনভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি যে, নিজেদের অন্নটা পর্যন্ত নিজ হাতে উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত করে খাবার টেবিলে হাজির করতে পারি না। পরনের কাপড়Ñ সেও তো প্রযুক্তিরই ফসল। বসবাসের জন্য ঘরবাড়ি বানাতে গেলে বিশাল বিশাল যন্ত্রপাতির আঞ্জাম দিতে হয়। চিকিৎসাসেবা ও ওষুধপথ্যের কথা কী আর বলব! বিমার যখন শরীরে এসে আছড় করে, তখন অসহায় হয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে করুণা মাগি। প্রযুক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করি চিঁড়ে-মুড়ির মতো ওষুধ গিলিÑ দামী দামীÑওষুধ। জীবনের আরেকটি অতি প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গÑ ছেলেমেয়েদের পাঠদান ও জ্ঞানদান। প্রযুক্তির কোমল স্পর্শ ছাড়া সেটিও আজ অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে বিজ্ঞান ও যান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা আমাদের জীবনকে অর্থপূর্ণ করছে কিনা জানি না, তবে আমরা মনে করি, প্রযুক্তির কারণে আমাদের যাপিত জীবন হয়েছে অনেক সহজ, সুন্দর ও আরামদায়ক। এই মনে করাটাও কতটা নিভুুল ও যৌক্তিক তাও যুক্তিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। (বাকি অংশ আগামী সংখ্যায়)
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা