১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শীতের হাতছানি

-

ভোর হতে না হতেই পিয়াসের ফোনে ঘুম ভেঙে গেল। আজ হাঁটতে বেরুনোর কথা। ঘুম থেকে উঠে যখন ব্রাশ হাতে ব্যালকনিতে গেলাম, দেখি চারদিক কুয়াশায় ঢেকে গেছে। রাতের কালো চাদর সরে গিয়ে শুভ্রতার জাল বিছিয়ে রেখেছে শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। কাছ থেকেও ল্যামপোস্টের আলোটা আবছা আবছা লাগছে। হেডলাইট জ্বালিয়ে দু-একটি মোটরসাইকেল চলছে ধীর গতিতে। বাসার নাইটগার্ডগুলো গলায় মাফলার পেঁচিয়ে লাঠি হাতে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। আজ রাস্তায় তেমন লোকজন নেই। দু-একজন হকার সাইকেল করে পত্রিকা নিয়ে ছুটছে। ক্ষণে ক্ষণে একটি হিম বাতাস এসে আঁছড়ে পড়ছে তিনতলার ব্যালকনির উঠোনে। যদিও রুমে হালকা স্পিডে ফ্যান চলছে। তবে বাইরের আবহাওয়া পুরোটাই ভিন্ন। মনে হচ্ছে শীতের আগাম বার্তা!
নানা ঋতুর আগমনে এ বাংলায় নানা রূপ ধারণ করে। ঋতুর বৈচিত্র্যে বাংলার প্রকৃতি বৈচিত্র্যময়। প্রকৃতির নানা মিশ্রণে বাংলার দিন-রাত সাজে অলৌকিক সৌন্দর্যে। সেই ঋতুর সাজে আবারো হেমন্তের সোনালি ডানায় ভর করে আসছে শীত মৌসুম। উত্তরের পথ ধরে হিম-শীতল বাতাসে শীতের আবির্ভাব। হিমালয়ের বরফচূড়া থেকে ছড়িয়ে পড়ে শীতের শীতল হাওয়া। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্যরূপ শীতের মৌসুম ছাড়া কল্পনা করা যায় না। হলদে সরিষা ফুলের গন্ধে এ মায়া যেন আরো বেড়ে যায় দ্বিগুণ। ফুলের গায়ে গড়িয়ে পড়া শিশির ভেজা জলে, ঝরে পড়া শুকনো পাতার প্রাঙ্গণে সবাই যেন মিলেমিশে একাকার। শীতের সকাল যেন এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। চারদিক ঘন কুয়াশার চাদরে আবৃত। টিনের চালে বিন্দু বিন্দু জল। প্রশস্ত খোলা মাঠে, নির্জন বনে, নদীর তীরে কুয়াশারা যেন ছাউনি ফেলে রেখেছে। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে পুরো সকাল যেন জেগে উঠেছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে পুকুর পাড়ে বাঁশঝাড়ে সূর্য উঁকি দিয়ে ওঠে। টিনের ঘরের ছিদ্র দিয়ে সূর্যের কিরণ ঘুমন্ত চোখের ওপর গিয়ে পড়ে। শিশু বৃদ্ধরা জ্বলন্ত উনুনের পাশে গোল হয়ে বসে আগুন পোহাতে। কেউ বা পাতা পুড়িয়ে আগুন জ্বালিয়ে বসে পড়ে উঠানেই। কৃষকরা দড়ি কাঁচি নিয়ে রওনা করে ধান ক্ষেতে। গ্রামীণ মহিলারা ধান সিদ্ধ করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সকাল থেকেই। নানামুখী কার্যক্রম দিয়ে তারা শীতের সকালকে বরণ করে নেয়।
গ্রামবাংলার শীত মানেই পিঠার উৎসব। প্রত্যেক ঘরে ঘরে তৈরি হয় বাহারি রকমের সুস্বাদু সব পিঠা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসে ভাপা পিঠার দোকান। পিঠা উৎসব গ্রাম-বাংলার এক প্রাচীন ঐতিহ্য। এই শীতের পিঠা উৎসবে আত্মীয়স্বজনদের মেলা বসে গ্রামের প্রতিটি পরিবারে।
শহুরে জীবনে শীতের এই আমেজ থেকে আমরা খানিকটা বঞ্চিত। চার দেয়ালের বন্দী জীবনে শীতের সকাল দেখা আমাদের ভাগ্যে জোটে না। কখন কুয়াশা জেঁকে বসে আবার কখন তার চাদর উঠিয়ে মিষ্টি রোদের স্নিগ্ধ আভা বিলিয়ে যায় তা এই ঘন দালানকোঠার শহরে বসে একদমই উপলব্ধি করা যায় না। এই ব্যস্ত শহরের শীত কেবল ফুটওভারব্রিজে, স্টেশনে, আর ফেরিঘাটের কিছু বঞ্চিত মানুষের কান্না। আনন্দের হাওয়ায় ভাসিয়ে দুঃখও নিয়ে আসে শীতের সকাল। আমাদের দেশে শীত মৌসুমে মৃত্যুর সংখ্যাটাও কম নয়। ঘন কুয়াশার কারণে রোড এক্সিডেন্টে মারা যান অনেক মানুষ। রীতিমতোই ঘটতে থাকে এসব মৃত্যু ঘটনা। অনেক বৃদ্ধ শীতের প্রকোপে কোণঠাসা হয়ে পড়েন।


আরো সংবাদ



premium cement