২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নগরে নগণ্য পাতা

নগরে নগণ্য পাতা -

প্রিয় অচেনা নগরী, চলো ঘুরে আসি কোথাও আমার অস্বস্তিকর দিনক্ষণে। কুড়িয়ে নিয়ে আসি কোঁচড়ভর্তি ক্লান্তি আর কিছু ধুলোবালি।
দূরের পথ পাড়ি দিয়ে এসে সামান্য সময়ের জন্য থেমে থাকে যাত্রীবাহী রবরব গাড়ি। জিরিয়ে নিচ্ছে একটু। কুতে কাচ্চি; একটি মানসম্পন্ন আধুনিক রেস্টুরেন্টের নাম। আমরা যেই বাসে উঠেছি, সেই বাসের বয়স বেড়ে যাওয়া ছাদের বিভিন্ন জায়গায় জেগে উঠেছে মরীচিকার কালচে রঙের শরীর। ঘষামাজা করলে কেমন দেখা যাবে; সেই দৃশ্য আমি কল্পনার ভেতর আঁকি উপস্থিত ছাদের নিচে বসে বসে। পুরাতন সিট। কোথাও কোথাও আবার কভার ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছে সিটের গোপন আর নরম শরীর। কুয়াশায় বাষ্প আসক্ত হয়ে থাকার মতো ঝাঁপসা জানালা টেনে টেনে খুলে দিয়েছে সবগুলো। আমি আর নাঈম পাশাপাশি বসেছি দুজন। ঢলে পড়া দুপুরের কড়া রোদ ঝলমল করছে তখনো। নাঈম খুব বিরক্ত বোধ করছে। অপর পাশে দুটি সিট খালি পাওয়া গেলে বড় ভালো হতো। এই পাশে রোদ খুব আর গরম। উপায় নেই। উপায়হীন আমরা ঝলসানো রোদের ভেতর বসে আছি সীমাহীন বিরক্তি নিয়ে। বাসের খোলা জানালার ফাঁক গলে হাওয়ার কাঁধে ভর নিয়ে বাসের ভেতর প্রবেশ করে সুস্বাদু খাবারের গায়েবি ঘ্রাণ। আমি বড় বড় অক্ষরের লেখাটা মূর্খের মতো বারবার বানান করে পড়ি; কুতে কাচ্চি। বিরিয়ানি তো লেখা নেই, তবু আপনাআপনি এসে যায় উচ্চারণে। স্মৃতিতে ভাসে বিরিয়ানির হরেক রকমের ছবি। বিরিয়ানি আমার প্রিয় খাবার। তাই হয়তো সুযোগ পেয়েই এইভাবে হানা দিচ্ছে স্মৃতিতে। তার উপর আবার নাকের ডগায় সুড়সুড়ি দিচ্ছে বিরিয়ানির সুস্বাদু ঘ্রাণ।
কাচের বয়ামে ভর্তি করা অর্থলতার কাঙাল দৃশ্যের মতো ঘুরছে শহর, শহরের মানুষ। বাস দ্রুতবেগে ছুটে চলেছে গন্তব্যের উদ্দেশে। একে একে ছাড়িয়ে যাচ্ছে গুলশান, খিলক্ষেত, এয়ারপোর্ট এবং উত্তরা। আমরা নেমে যাব উত্তরার চার নম্বর সেক্টরে। তারপর ১০ নম্বর রোড ধরে এগিয়ে গেলেই পৌঁছে যাব আমাদের কাক্সিক্ষত গন্তব্যে।
ফাঁকা রেললাইন ধরে হেঁটে যায় বাদামিমুখো বৃদ্ধ। যার হেঁটে যাওয়া থেকে পেয়ে যাই নেয়ামতুল্লাহ হুজুরের দূরত্বের ধারণা। রেললাইনের অপর পাশে হুজুরের তিলে তিলে গড়ে তোলা প্রাণপ্রিয় প্রতিষ্ঠান। আমি ভাবি; একবার দেখা করে আসা উচিত হুজুরের সাথে। মিজানের বছর হুজুরের সাথে আমার শেষ দেখা এবং স্মৃতি। তারপর কথা হলেও দেখা হয় না অনেকদিন। আমরা মাদরাসার কাছাকাছি আছি জেনে ছুটে আসে আফিফ। দুপুরের পর ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আমাদের এগিয়ে নিতে এসেছে বার্তা পেয়েই। তার পায়ে ব্ল্যাক হিল। মাথায় সাদা সুতোর ফুল তোলা গোল টুপি খাপ খেয়ে বসে আছে। আমাদের মোয়ানাকা হয়- আমরা পায়ে পায়ে সিঁড়ি বেয়ে চলে যাই চারতলার রুমে।
আফিফের সাথে এভাবে দেখা হওয়ার কথা তো ছিলই না, কল্পনাতেও ছিল না। আমার হাতের ঘড়িটি হারিয়েছিলাম গত শীতের শেষের দিকে। সেই কথা মনে হলে মনে পড়ে যায় আফিফকে। তুমুল ভিড় আর চিৎকার চেঁচামেচির ভেতর কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিল আমার মানিব্যাগ। আফিফ আমার সাথে ছিল সেদিন। খুব আফসোস করেছিল সে। আমার থেকেও বেশি। মোবাইলের কোমল আলো জ্বালিয়ে দুজন চক্কর দিয়েছিলাম পুরো সার্কিট হাউজ মাঠ। সেই চিন্তিত সন্ধ্যার কথা মনে হলে মনে পড়ে যায় আফিফ। আমার হাতঘড়িটি হারিয়ে গেছে। ঘড়িটির সাথে হারিয়ে গেছে সেই সময়ও।


আরো সংবাদ



premium cement