২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বৃষ্টি দিন

-

সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি চলছে। কখনো হালকা থামলেও তেমন বিরাম নিচ্ছে না আবার শুরু হয়ে যাচ্ছে। আকাশটা কালো রঙে আচ্ছন্ন, খুব কাছ থেকে ছাড়া কিছু বোঝার উপায় নেই। রাস্তা-ঘাট সব পিচ্ছিল। পানিও পুরোপুরি বেড়ে যায়নি যে নৌকা চলবে। এমন বিমর্ষ দিন যেন রাতের চেয়েও করুণ। চায়ের দোকানে ভিড় নেই। দরজা না খুলতে পারলে সে ঘরে বসে থেকেই দিনাতিপাত করবে ভাবটা এরকমই। কর্দমাক্ত বাজারে বসার বেঞ্চগুলো ভেজা আর শূন্য। মাঝে মাঝে দু’-একটা অটো গাড়ি চলছে। মুড়িসুড়ি দিয়ে যাচ্ছে কেউ রুজি রোজগারের সন্ধানে।
আসলাম মিয়া এ সময়ও বাজারে বেরিয়ে পড়লেন, রহিমা বেগম অনেক বারণ করার পরও শুনলেন না। আসলাম মিয়া রিটায়ার্ড সৈনিক। বাড়ি বসে থাকার অভ্যাস তার নেই। ছেলেমেয়েরা সব ঢাকা খুলনা থাকে কিন্তু নিজে গ্রামের মায়া ছাড়বেন না। এখানে পুরনো দিনের সব পরিচিতি জনের সাথে রোজ দুবার বাজারে আড্ডা গল্প না হলে তার খাওয়া ঘুম সার্থক হয় না। আজ এই অন্ধকার দিনেও তিনি ঘরে বসবেন না। একদিকে করোনার উৎপাত অন্যদিকে মেঘ-বৃষ্টি, তবুও তিনি গেলেন।
এসেই আমিনুরের দোকানে চায়ের আদেশ করলেন, কড়া লিকারের এক কাপ লাল চা দাও তো।
বসলেন ভেতরে একটা প্লাস্টিকের মোড়া পেতে। শুরু হলো করোনার গল্প। দেশটা একেবারে লাটে উঠল, দোকান পাট খোলাও বন্ধ, গাড়ি ঘোড়া বন্ধ; এমনে আমরা চলব কেমনে?
কি এক করোনা করোনা শুরু হইছে আবার নাকি টিকা দেয়। খবরদার, টিকা নিবা না কেউ! ও তে নাকি জ্বর হয়, মইরা যায়। এসব ভাইরাস টাইরাস কিছু না। এগুলান শহরে গজব পড়ছে, গ্রামে কিছু হবে না।
হঠাৎ করে আসলাম সাহেবের মাথাটা ঘুরে উঠল নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, বুকে খুব ব্যথা। ধর আমারে! এই বলেই শ্বাস টানতে শুরু করলেন। আমিনুর জোরে চিৎকার দিয়ে বলল, আসলাম চাচা কী হইল? পাশের দুই-তিনজন দোকানিকে এসে বুক হাত ডলাডলি করছেন, ফু দিচ্ছেন কিন্তু শ্বাসকষ্ট যাচ্ছে না; আরো বাড়ছে। বাড়িতে খবর দিতে দিতে অটো একটাতে তাকে উঠিয়ে নিয়ে বসলেন তিন-চারজন। জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো।
অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। সুনসান নীরবতা হাসপাতালজুড়ে। কেউ আসা যাওয়া করতে অনেক জটিলতা।
তেমনই অন্ধকার আর মেঘলা দুপুরে মেয়ে আছিয়া ছুটে এসেছে বাবাকে একনজর দেখতে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছে হসপিটালের গেটে। বিলাপ করছেন রহিমা বেগম। এমনই হঠাৎ করে দুঃসংবাদ আসে জীবনে। তছনছ করে দেয় অনেক সত্য। স্যাম্পল নেয়া হয়েছে আসলাম মিয়ার। করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
অবশেষে খবর এলো স্বজনের কাছে, আসলাম মিয়া মৃত!
শ্বাসকষ্ট সইতে না পেরে একবারে শ্বাসরোধ হয়ে গেছে তার।
পরদিন রেজাল্ট এলো, তিনি কোভিড পজিটিভ কিন্তু এখন এ ফলাফল নিঃপ্রভ। চির নেগেটিভের প্রান্তরে আসলাম মিয়া পাড়ি জমিয়েছেন।
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর মেঘের আড়ালে সূর্য দেখার প্রতীক্ষা না করেই আছিয়া হেঁটে চলেছে বাবার লাশ দাফনে।


আরো সংবাদ



premium cement