২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আমানতের প্রতিদান

-

তড়িঘড়ি করে সাভার বাসস্ট্যান্ড থেকে হেমায়েতপুরগামী জনসেবা বাসে উঠে পড়লাম। ছোট শিশুটার প্রচণ্ড জ্বর। বাড়ি পৌঁছেই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
ব্যাংক টাউনের কাছাকাছি আসতেই কন্ট্রাক্টর ভাড়ার জন্য হাঁকিয়ে উঠলেন। আমি বসেছি বাসের ঠিক মধ্যভাগে; বাম পাশের সিটে। আমার কয়েক সিট সামনেই ডান পাশে আছেন ষাটোর্ধ্ব এক মুরুব্বি। তিনি সামনের দিকে ঝুঁকে সিটের নরম অংশে মাথা ঠেঁকিয়ে ঘুমের ভান ধরে আছেন।
ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডে এসে কন্ট্রাক্টর মৃদু ধাক্কায় তার কাছে তৃতীয়বারের মতো ভাড়া চাইতেই লোকটি নেতিয়ে পড়লেন!
দ্রুত কাছে যাই। দেখি মুখভর্তি বুদবুদ ফেনা সফেদ দাড়ি অব্দি পৌঁছে গেছে।
উল্লেখ্য, লোকটির পাশের সিটটি তখন খালি এবং সেখানে পলিথিনে মোড়ানো বড় আকারের একটি কাগজের ঠোঙ্গা। সম্ভবত ফলমূল কিছু একটা হবে।
আমরা যাত্রীরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়! ত্বরিত সিদ্ধান্তে বাসটি মূল সড়কসংলগ্ন হেমায়েতপুর জামাল ক্লিনিকের সামনে রাখা হলো। আমি লোকটির পকেটে থাকা বাটন মোবাইল এবং পলিথিন ব্যাগটি হাতে নিলাম। সেই সাথে অন্যদের জানিয়ে গেলাম, আমি ক্লিনিকের মূল ফটকটি খোলার ব্যবস্থা করছি, আপনারা ওনাকে নিয়ে আসুন।
ডাক্তার যেটি জানালেন, খাবারের সাথে তাকে অচেতনমূলক পদার্থ খাওয়ানো হয়েছে। জরুরি ভিক্তিতে এক্ষুনি ওয়াশ করা প্রয়োজন।
এরই মধ্যে আমি মুরুব্বির মোবাইলের ডায়ালে থাকা শেষ নম্বরটিতে ফোন দেই। পরিচয় জানতে চাই। তিনি তার ছোট মেয়ের জামাই।
এ দিকে ডাক্তারের ফর্দ অনুযায়ী আমি হাসপাতাল সংলগ্ন সদর আলী ফার্মাসিতে অস্থির অপেক্ষারত। হঠাৎ মনে হলো, আচ্ছা পলিথিনে মুড়ানোয় ঠোঙ্গাটিতে কি আছে, দেখি তো!
আমি চমকে যাই! এত্তোগুলো টাকা! ৫০০ টাকার অনেকগুলো বান্ডিল! আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে দ্রুত ব্যাগটি ঠিক আগের মতোই ভাঁজ করে রাখি।
এরই মধ্যে লোকটির মেয়ের জামাই চলে এসেছেন। ভেতরে হট্টগোলপূর্বক ওয়াশ কাজক্রম চলছে। আমি মোবাইল সমেত মুরুব্বির পলিথিন ব্যাগটি তার হাতে দিয়ে বললাম... এই নিন, আপনার শ্বশুরের আমানত। যেখানে যা ছিল, অক্ষতই আছে। পরিশেষে আমরা একে-অপরের মোবাইল নম্বরটি বিনিময় করি এবং সন্তপর্ণে আমি হাসপাতাল প্রস্থান করি।
এক সপ্তাহ...দুই সপ্তাহ। আমি একটি ফোনের অপেক্ষায়। একদিন সত্যিই আমার ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। জামাইকে ফোন দেই। খোঁজখবরে জানতে চাই তার শ্বশুর এখন কোথায় আছেন? কেমন আছেন?
তিনি জানালেন, মুরুব্বি বর্তমানে তেঁতুলিয়ায় তার বড় মেয়ের বাড়িতে অবস্থান করছেন এবং ভালো আছেন।
আর কোনোদিনই একটি বারের জন্যও ওই মুরুব্বি কিংবা জামাইয়ের ফোনকল পাইনি!
নম্বরটিও এখন বন্ধ...!


আরো সংবাদ



premium cement