পুশন
- জুয়েল আশরাফ
- ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
আকাশে দুর্দান্ত মেঘ। ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি নামবে যেকোনো সময়। জাওশান আগেভাগেই রিকশার হুড উঠিয়েছে। রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করল, ভাইয়া পলিথিন আছে? হুড তুলে রাখলেন ক্যান ভাইয়া? বাতাসের সময় হুড নামিয়ে রাখতে হয় ভাইয়া, বুঝলেন?
আজকাল যেখানে লোকেরা রিক্সাওয়ালাদের দিকে যেখানে তেড়ে আসে সেখানে জাওশানের ব্যবহারে মুগ্ধ হল সে। নিজের ভুল বুঝতে পেরে দ্রুত সে রিকশার হুড নামিয়ে দিল। বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কেটে যায়নি। অবশ্য বৃষ্টি নামলেও অসুবিধা নেই। ভিজতে ভিজতেই পুশনদের বাড়ি যাবে জাওশান। পুশনের ছোটবোন ব্যস্ত হয়ে তোয়ালে এনে দেবে মাথা মোছার জন্য। মা আদা-চা করে দেবেন। পুশন আবেগ মিশ্রিত গলায় বলবে, বৃষ্টিতে ভিজে না এলেই কি নয়? এমনিতেই আপনার ঠান্ডার সমস্যা!
শুকনো জামাকাপড়েই জাওশান পৌঁছে গেল পুশনদের বাড়ি। দরজা খোলাই ছিল। বসার ঘরের একটি দৃশ্যে সে মুগ্ধ। একুশ বছরের মেয়ের চুল আচড়ে দিচ্ছে বাবা। অনেকদিন এমন সুন্দর দৃশ্য দেখেনি জাওশান। আজ বহুদিন পর তার চোখ ভিজে উঠল। ইদানিং চোখের সমস্যা যাচ্ছে। চোখ সুন্দর কিছু সহ্য করতে পারে না। চোখে অসুখ হয়েছে। ডাক্তার দেখানো দরকার। এ বছরে ফাল্গুনের প্রথম দিন তার কলেজের সহকর্মী মিস ইরিনা একটি ছোট্ট প্যাকেট হাতে ধরিয়ে দিয়ে লাজুক মুখে বলল, স্যার বাসায় গিয়ে খুলবেন। বাসায় খুলে দেখে রঙিন কাগজে মোড়ানো একটি লাল গোলাপ, সঙ্গে চিঠি। চিঠিতে লেখা-প্রতিটি মেয়ের চোখে কোটি পুরুষের ভেতর শুধু একজনই প্রিয় পুরুষ থাকে। ব্যস, এটুকু পড়েই তার চোখে পানি চলে এলো। আজও চোখে পানি চলে এলো।
জাওশান চোখের পানি মুছে বাবা-মেয়ের চুল আচড়ানোর দৃশ্য দেখছে। মেয়েটির নাম উমরা। পুশনের ছোট বোন। জাওশান উমরার কলেজের শিক্ষক এবং তার গৃহশিক্ষকও। ছুটির দিন থাকায় এই সময়টাতে বাবা মেয়ে দুজনেই বাড়িতে। পুশনদের বাড়ি জাওশানের আজ দুপুরে নিমন্ত্রণ।
স্যার দাঁড়িয়ে কেন? ভেতরে আসুন।
পুশন। টকটকে লাল রঙের শাড়িতে। খোঁপায় কি একটা গুঁজেছে, ফুল না অন্য কিছু। এমন সুন্দর সাজে চোখ ধাঁধা করে উঠল। জীবনে প্রথমবার পুশনকে শাড়িতে দেখল জাওশান। শাড়িতে তাকে এত সুন্দর দেখাবে পুশন আজ জানল। এটুকু বুঝতে পেরে পুশন কিছুমাত্র লজ্জা পেল। কিন্তু পুশন চরম স্বাভাবিক। তার কাছে লজ্জার লেশমাত্র নেই। বরং কথাবার্তায় আগের থেকে আজ আরও সহজ আরও নিকটবর্তী। এতদিন কেবল ছোটবোনের শিক্ষক কথা না বললেই নয় এমন সৌজন্যতার ধার ধরে চলছিল।
পুশন মৃদু হেসে বলল, আপনার দেরি দেখে আমরা সবাই খেয়ে নিয়েছি। মা রান্না ঘরে। সন্ধ্যায় আমাদের আরো মেহমান আসবে। আসুন স্যার, আমি খাবার দিচ্ছি।
জাওশান পুশনকে অনুসরণ করে এলো খাবার ঘরে। পুশন বলল, স্যার, কিছু লাগলে বলবেন। দ্বিধা করবেন না। নিজের বাড়ি মনে করবেন।
বলেই পুশন লাল লিপস্টিক লাগানো ঠোঁটে লালচে মুচকি হাসল। জাওশানের গা শিরশির করে উঠল। পুশনের শারীরিক উচ্চতা বেশ। সাথে অস্তিত্বের গভীরতাও আছে। জাওশান সে-গভীরতার তল পাবে না। খাবার মুখে নিতে নিতে বার বার দেখছিল পুশনকে। আজ জাওশানের মনের কথা ভীষণ বলতে ইচ্ছে করছে পুশন। বালকসুলভ চপলতা হানা দিচ্ছে না-জানি!
জাওশান লাজুক মুখে গল্প শুরু করছে, শিক্ষক দিবসের উপহার হিসেবে ইরিনাকে দিয়ে আপনি একটি লাল রঙের ছোট্ট ডায়েরি দিয়েছিলেন আমাকে...। কথা কেড়ে নিয়ে পুশন লাজুক মুখে হঠাৎই বলল, স্যার আজ আমার বিয়ে। সন্ধ্যায় যারা আসবে তারা বর পক্ষের লোকজন। ঘরোয়া বিয়ে। ছেলে ডাক্তার। আমার মেজো মামার জানাশোনা। তাই রাতে খেয়ে যাবেন।
জাওশান থমকে গেল। খাবার হাত থেকে খসে পড়ল প্লেটে। বাকবিহ্বল জাওশান কিছুক্ষণ পর চেতনা ফিরে পেল। এভাবে তাকে যেতে হবে সেই দুঃস্বপ্নের ঘরে! যেখানে পুশন নামক একটি মেয়ের আশায় এই বাড়িতে সে টিউশন আরম্ভ করেছিল। বাকি জীবন তার ধূসর কুয়াশা হয়ে এলেও কিন্তু উজ্জ্বল স্বপ্ন বুকের ভেতর পুশে রাখবে এই পুশন মেয়েটির জন্য।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা