মানুষ কবিতা ও ভণ্ডের মুখোশ উন্মোচন
- বারী সুমন
- ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০১:১৯
‘গাহি সাম্যের গানÑ
মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান,
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।’
নজরুলের একটি মানবতাবাদী কবিতাÑ মানুষ। আজকের এই সময়ে যখন ধার্মিক, অধার্মিক ও রক্ষকরা ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ, তখন কবিতাটির পঙক্তিগুলো আরো বেশি সত্যি হয়ে ওঠেছে। মানুষ কবিতাটি নজরুল রচনা করেছিলেন তার সাহিত্যজীবনের সবচেয়ে প্রতিবাদী পর্যায়ে, আর কবিতাটির পঙক্তিগুলোতে তাই আমরা তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে চিরসোচ্চার ও মানবতাবাদের ওপর অটল বিশ্বাসী রূপটিকে দেখতে পাই। সমাজের উচ্চবিত্ত আর ধর্মের বস্ত্রধারী শেঠরা নজরুলের কলমের কাছে কখনোই ছাড় পায়নিÑ তাই নজরুলের বিশ্বাসের প্রতিধ্বনি যেÑ ‘মানুষের চেয়ে নহে কিছু মহীয়ান’।
মানুষ কবিতায় পরিলক্ষিত হয় পূজারী পূজার আয়োজন করে বসেছে, এমন সময় ভুখারী এসে দরজায় কড়া নাড়ল। পূজারী ভেবেছিল হয়তো ঈশ্বর তার এতদিনের সাধনা পূরণ করেছেন, তাই হয়তো কোনো বর দিয়ে পাঠিয়েছেন। দরজা খোলে যখন জীর্ণশীর্ণ ভুখারীকে দেখতে পেল তখন রাগে দুঃখে, ক্ষোভে ভুখারীকে তাড়িয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো পূজারী। অথচ মানুষ যখন কোনো উপায় খুঁজে পায় না তখন আশ্রয় গ্রহণ করার জন্য এই প্রার্থনালয়ে আসেন, সেখানে কিনা পূজারী তার নিজের ইচ্ছেমতো প্রার্থনালয় পরিচালনা করেন। সে জন্যই নজরুল বলেছেন, ‘ওই মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!’
নজরুল হিন্দু মুসলিম দুই ধর্মেরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন মানুষ কবিতার মূলমন্ত্র। মসজিদে শিরনি দেয়া হয়েছিল লোকজন খাওয়ার পরও অনেক শিরনি রয়ে গেছে। মোল্লøা সাহেব খুব খুশি সেগুলো বাড়ি নিয়ে যাবেন। এমন সময় মুসাফির বেশে ভুখারী এসে কিছু খাবার চেয়েছিল মোল্লা সাহেবের কাছে।
মোল্লা সাহেব রাগে তেড়ে আসলেন। হাঁক দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন নামাজ পড়িস? নামাজ না পড়লে খাবার পাবি না। যা সোজা গো-ভাগাড়ে গিয়ে মর। সজোরে দরজায় তালা লাগিয়ে দিলো মোল্লøা সাহেব ভুখারী মনের দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে চলে আর বলে প্রভু ৮০ বছর হয়ে গেল কোনোদিন আমি নামাজ পড়িনি; কিন্তু একবারের জন্যও তুমি আমার খাবার বন্ধ করোনি। তাই তো মানুষ কবিতা কবি দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেনÑ
‘৮০টি বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তোমায় কভুু,
আমার ক্ষুধার অন্ন তা বলে বন্ধ করোনি প্রভু!
তব মজসিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবি,
মোল্লøা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবি!’
খোদার ঘর সবসময় খোলা থাকবে। যে কেউ সেখানে যেতে পারবে; কিন্তু ঘটছে তার উল্টো। যারা এমন আচরণ করে নজরুল তাদের স্বার্থপর এবং ভণ্ড বলে আখ্যা দিয়ে বলেছেনÑ
খোদার ঘরে কে কপাট লাগায় কে দেয় সেখানে তালা?
সব দ্বার এর খোলা রবে, চালা হাতুড়ি শাবল চালা!
হায় রে ভজনালয়
তোমার মিনারে চড়িয়া ভণ্ড গাহে স্বার্থের
জয়! হ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা