২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গৃহবাস হোক প্রাণবন্তময়

-


দীর্ঘ সময় ধরে করোনার অবসরে আছি। অদৃশ্য এক শক্তির সাথে লড়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। এ লড়াই জনবলহীন, নিরস্ত্র, সঙ্গীহীন। এ লড়াই ময়দানে নেমে জনপদ দখলের নয়, ঘরবন্দী থাকার একান্ত চেষ্টা। এ লড়াই করোনা থেকে বেঁচে থাকার, এ কেবল নিজের জীবন রক্ষার অঙ্গীকার। যদিও নির্দিষ্ট সময়েই জীবনের গতি থেমে যাবে। থমকে দাঁড়াবে যাপিত জীবনের সব আয়োজন!
চোখের সামনেই তাজা প্রাণগুলো ঝরে যাচ্ছে। কোন দিক থেকে অদেখা শক্তি এসে হানা দেয় বলা যায় না। তাই এই গৃহবাস জীবন-যাপন। মৃত্যুর ভয়ে হাহাকার করছে অসংখ্য মানুষ। হাসপাতালগুলো করোনা রোগীতে ঠাসা। অজানা এক শঙ্কা কোণঠাসা করে রেখেছে আমাদের। পেছন ফেরে তাকানোর সাহস নেই কারো মনে।
জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সকালের স্নিগ্ধ হাওয়া, রোদেলা দুপুর আর বিকেলে বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা আর আড্ডা। আষাঢ়ে বৃষ্টির ছোঁয়া এখনো গায়ে লাগেনি। শ্রাবণের কদম ফুল এখনো ছুঁয়ে দেখা হয়নি। ঘরে বসে জালানার ফাঁক দিয়েই বৃষ্টির ফোঁটার স্পর্র্শ অনুভব করি। বাবার তৈরি পাঠাগার থেকে সব বই নামিয়ে ফেলেছি। সারাটা দিন বইয়ের জগতে মন-মস্তিষ্ক জিইয়ে রেখেছি। পুরোপুরি গৃহবাসে দিন পার করছি।
এই করোনাকালে বহু মানুষের জীবন নরকে পরিণত হয়েছে। ছোট ছোট স্বপ্নগুলো স্বার্থের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। ভালোবাসাগুলো দূরত্বের ঠিকানা খুঁজছে। বহু শিক্ষার্থীর জীবনে নেমে এসেছে মহাপ্রলয়। বাঁধ ভাঙা কষ্টের জোয়ারে ভেসেছে অনেক অসহায় পরিবার। তবুও মানুষ বেঁচে থাকার সংগ্রামে টিকে আছে। আশায় বুক বেঁধে আছে নতুন দিনের।
কিন্তু আপনার জন্য এই দেড়টি বছর হতে পারে জীবনের সেরা দিনগুলোর একটি। হতে পারে মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকে দেয়া সুবর্ণ সুযোগ। যে সুযোগের অপেক্ষা আপনি কোনোদিন করেননি। হতে পারে আপনার স্বপ্ন পূরণের মহা উৎসব। যে স্বপ্ন কোনো দিন আপনি হৃদয় আঙিনায় বুনেননি। এমন হাজারো স্বপ্ন পূরণ হয়েছে এই সময়ে। অলসতার চাদর ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছে দীপ্তিময় প্রতিভার আলো।
প্রযুক্তির সিঁড়ি বেয়ে উন্নয়নের পথে হাঁটছে পুরো বিশ্ব। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। শিক্ষা থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান এমনকি রান্নার কাজেও ব্যবহার হচ্ছে প্রযুক্তি। এই সময়টাতে শিক্ষার্থীরা বাইরে না গিয়েও বহুমুখী শিক্ষার সাথে নিজেরা পরিচিত হয়েছে। প্রযুক্তিভিক্তিক শিক্ষার সাথে অন্যরকম সখ্য গড়ে ওঠেছে। পরিবারের বন্ধনগুলো আরো সুদৃঢ় হয়েছে। তাদেরকে নিয়ে চলার পথ আরো প্রশস্ত হয়েছে। মেয়েরা পড়ালেখার পাশাপাশি অনলাইন থেকে শিখছে বিভিন্ন রান্নার সুস্বাদু রেসিপি। ঘরে বসেই শিখছেন সেলাইয়ের কাজ। নিয়মিত শরীরচর্চা করছেন সব বয়সী মানুষ। খাবার তালিকা নিয়ন্ত্রণে ওজন কমিয়েছেন অনেকেই।
এক টুকরো সবুজের টানে ছোট বারান্দায় গড়ে তুলছে প্রকৃতির ছবি। বাসার ছাদে গড়ে ওঠেছে সারিবদ্ধ ফুলবাগান। এতে যেমন হচ্ছে প্রকৃতি চর্চা তেমনি বাড়ছে কর্মের উদ্যমতা। অনেকে আবার পশু-পাখির প্রেমে পড়েছেন নতুন করে। চিলেকোঠার পাশেই বানিয়েছেন কবুতরের সুখের নিবাস। রীতিমতো ময়না টিয়ার সাথে বন্ধুত্বের আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন। কখনো আবার কণ্ঠ মিলিয়ে গাইতে শুরু করেন মধুর গান।
অনেকে ধর্মচর্চায় মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। কুরআন পাঠ থেকে শুরু করে অধ্যয়ন করছেন বিভিন্ন মনীষীদের জীবনী। এ থেকে বই পড়ার প্রতিও উৎসাহ বাড়ছে তরুণদের। অনলাইন সাইটগুলোতে বইয়ের অর্ডার বেড়েছে দ্বিগুণ পরিমাণে। ইতিহাস, দর্শন, সাহিত্য ইত্যাদি বিষয়ে পাঠক তৈরি হচ্ছে। অলস সময়ের একান্ত সঙ্গী হয়ে উঠুক প্রতিটি বই। জ্ঞানচর্চার এই হাত ধরেই তো প্রজন্মের পর প্রজন্মে তৈরি হয়েছে সাহিত্যিক, গবেষক আর দার্শনিক। জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়ুক প্রতিটি হৃদয়ে। উদ্ভাসিত হোক এক একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। করোনাকে জয় করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাক নতুন দিগন্তে!

 

 


আরো সংবাদ



premium cement