২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দুঃসময়

-

তার বাবা কেন এই বৃহস্পতিবার বাড়িতে আসেনি রাশেদ জানে না। তাই তার খুব মন খারাপ। গত পরশুও বাবার সাথে ফোনে কথা বলেছে সে। তার জন্য অনেক মজা নিয়ে বাড়ি আসার কথা ছিল। সে মিষ্টি আর আম্রপালি আম আনার বায়নাও করেছিল। বাবাও কথা দিয়েছিল আনবে। দাদা-দাদী, তার মা তাকে যতই বোঝাতে চাইছেন সে বুঝতে চাইছে না। দাদা বললেন, আরে বোকা তোর বাবা হয়তো কোনো কাজে আটকা পড়েছে তাই আসতে পারেনি। তা ছাড়া এখন তো কঠোর লকডাউন চলছে রে ভাই। দেখবি কালই চলে আসবে দেখবি।
Ñতুমি বাবাকে একবার ফোন দাও, বাড়িতে আসতে বলো!
Ñআমি তো বাজার থেকে আসার সময় তোর বাবাকে কল করেছিলাম। রিসিভ করেনি।
Ñনা, না, তুমি আবার কল দাও।
Ñআচ্ছা দিচ্ছি।
এবার দেখলেন সুইচ অফ। দাদাও টেনশনে পড়ে গেলেন। ভাবলেন আমার ছেলে তো এমন না, একটা কল করলেই যথেষ্ট। তিনিও ক্লান্ত দেহে মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে টিউবওয়েলের দিকে চলে গেলেন। রাশেদ তার মায়ের বকুনি খেয়ে পড়ার টেবিলে গোমড়া মুখে বসে আছে। বাবা আসেনি দেখে সে আজ ভাতও খাবে না বলে দিয়েছে। ওদিকে তার মা মশার কয়েলটা জ্বালাতে জ্বালাতে বলতে লাগলÑ তোমার দাদা কলপাড় থেকে এলে আল-কুরআন অ্যাপস থেকে সূরাগুলো পড়ো, আমি যেন এই রুম থেকে শুনতে পাই। রাশেদ তখন তার রুমের দরজাটা হালকা করে ঠেলে দেয়। দাদী তার মাকে বলছে, আরে তোমরা এমন করো না গো, তার বাপের লাইগ্যা তার পরান পুড়তাছে । রায়হানও ছোটবেলায় এইরহম আছিল।
Ñআম্মা, আপনি ভাত খেয়ে নিন, ফ্যানের বাতাসে ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। খাওয়ার আগের ওষুধগুলো খেয়ে নিন।
Ñএক গ্লাস পানি দেও মা। তারও চিন্তা শুরু হয়েছে। অস্ফুটে বললেন, কী হয়েছে আমার মানিকের! আল্লাহ মালিক বলে হাত ধুতে লাগলেন। ততক্ষণে দাদাও ফ্রেশ হয়ে ঘরে এলেন।
Ñকই রে রাশেদ, ভাত খেয়ে যা। আরে বেটা রাতে না খাওন ভালা না। ওই নে তোর জন্য একটা সুন্দর সুতি কাপড়ের মাস্ক এনেছি, হালকা সবুজ তার ফিতেটা গাঢ় কমলা রঙের দেখে যা, কাল জুমাতে যাওয়ার সময় পড়ে যাবি। এসব বলে তাকে সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করছেন। ওই রুম থেকে রাশেদ বলছে, তোমার কাছেই রেখে দাও তোমার মাস্ক।
রাতে না খেয়েই মায়ের সাথে ঘুমাতে গেল রাশেদ। পাশের রুমে দাদীর পান আনতে দাদার মনে নেই তাই তাদের মধ্যে মধুর তর্ক হচ্ছে। তর্কের সারমর্ম হলো এইÑ আমার পানের কথা শুধু তোমার মনে থাকে না! দাদা হাসতে হাসতে বলছেন, এই লকডাউনে পান খাওয়া ছাইড়া দে। দাদী বলছেন, তুমি এত কথা না কইয়া লাইটটা বন্ধ করে ফ্যানটা বাড়াইয়া দাও। এভাবেই রাশেদ তার মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেল। হয়তো স্বপ্নে মাধাইয়া স্টেশনের আবদুর রশিদের দোকান থেকে তার দাদীর জন্য পান আনতে গেছে সে।
তিন দিন পর রায়হান তার বাবাকে ফোন করল।
Ñবাবা, কেমন আছ?
Ñআছি ভালো। তোর কী খবর, মোবাইল বন্ধ কেন ।
Ñবাবা, এই লকডাউনে গার্মেন্টে লোক ছাঁটাই চলছে। তাই মনটা খুব খারাপ বাবা।
Ñযাক, মন খারাপ করিছ না। কপালে যা আছে তাই হইবো রে বাবা।
এক সপ্তাহ পর সে বাড়িতে এলো। চাকরিটা চলে গেছে আরো এক সপ্তাহ আগেই। বাবাকে মিথ্যা বলেছিল সেদিন। এই ক’দিনে আরেকটা চাকরি জোগাতে পারলে ভেবেছিল বাড়িতে কিছু জানতে পারবে না। তা আর হয়ে ওঠেনি। পকেটে বেতনের সামান্য টাকা নিয়ে একেবারে চলে আসতে বাধ্য হলো। বোনাসও দেয়া হয়নি তাদের। রাশেদ তো বাবাকে পেয়ে সব অভিমান ভুলে গেছে। একটি কালোজাম মুখে দিতে দিতে বাবাকে বলছে, গরু কোন দিন কিনবা? মেহরাব রা তো গরু কিনে ফেলেছে। রাশেদ কি জানে তার বাবা আবার কবে তার জন্য আম্রপালি আম আর মিষ্টি নিয়ে আসবে? এবার তারা কোরবানিও দিতে পারবে না এটিও সে জেনে যায়। বাবাকে তার অবুঝ বায়না-বাবা আমরা কেন গরু কিনব না! পৃথিবীর কোনো বাবার কি তখন তার অবুঝ ছেলেকে উত্তর দেয়ার মতো শক্তি থাকে! সে শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। দেখতে থাকে তিন দিনে ঈদের চাঁদটা তো অনেক বড় দেখাচ্ছে। সেটি কিন্তু তার এই দুঃসময়ের চেয়ে খুব বেশি বড় না।হ

 


আরো সংবাদ



premium cement