২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জনসংখ্যা : বোঝা নয় সম্পদ

-

প্রতি বছর ১১ জুলাই পৃথিবীজুড়ে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালিত হয়, যার লক্ষ্য বিশ্ব জনসংখ্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা ও তার প্রতিকারের বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। ১৯৮৭ সালের ১১ জুলাই বিশ্বের জনসংখ্যা ৫০০ কোটি পূর্ণ হওয়ার পর ৯০ দেশের সরকারি উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি সভায় বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। তখন সারা বিশ্বের জনমানুষের মধ্যে যে আগ্রহের সৃষ্টি হয়, তাতে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৮৯ সালে জাতিসঙ্ঘ উন্নয়ন কর্মসূচির পরিচালনা পরিষদ এই দিবসটি প্রতিষ্ঠা করে। ইউএনডিপির গভর্ন্যান্স কাউন্সিল কর্তৃক উত্থাপিত প্রস্তাব জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ অতি আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে। ১৯৯০ সালের ১১ জুলাই প্রথমবারের মতো ৯০টি দেশে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উদযাপিত হয়। এরপর থেকে জনসংখ্যা সমস্যার গুরুত্ব ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন চিন্তা করে প্রতি বছর সুনির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণের মাধ্যমে বিশেষ গুরুত্বের সাথে ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
জনসংখ্যা যেকোনো দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও ঐশ্বর্যের প্রধান নিয়ামকশক্তি। এ জনসংখ্যাকে কাম্য জনসংখ্যায় পরিণত করতে পরিকল্পিত পরিবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। পরিকল্পিত জনসংখ্যা, খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার পূরণের পাশাপাশি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের আয়তন, অবস্থান, জনসংখ্যা, প্রাকৃতিক সম্পদ, পরিবেশ ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে পরিকল্পিত পরিবার গঠনের বিকল্প নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) হিসাব মতে, প্রতি মিনিটে বিশ্বে ২৫০টি শিশু জন্মগ্রহণ করে। জাতিসঙ্ঘ জনসংখ্যার অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকেই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোয় এ সংখ্যা অনেক বেশি। কিউবা, ব্রাজিল, চিলি, তুরস্ক, থাইল্যান্ড, ইরান এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় সন্তান জন্মদানের বিষয়টিকে আলাদা অনুভূতির দৃষ্টিতে দেখায় হিতে বিপরীত হচ্ছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোয় ১৯৯৪ সালে যেখানে মাত্র ১৫ শতাংশ নারী আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করত বর্তমানে তা বেড়ে ৪১ শতাংশ হয়েছে। বাংলাদেশে এ হার বর্তমানে ৬৩.৬ শতাংশ। ২০০৪ সালে এ হারছিল ৩.২০ শতাংশ। ২৫ বছর আগে স্বল্প আয়ের দেশে একজন নারী কমপক্ষে ছয়টি সন্তান জন্ম দিত। বর্তমানে তা চারের নিচে নেমে এসেছে। বাংলাদেশে এ হার বর্তমানে ২.৫ শতাংশ।
ইউএনএফপিএ’র বার্ষিক বৈশ্বিক জনসংখ্যা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশে জনসংখ্যা বেড়েছে ১০ কোটি ৪৭ লাখ। বছরে ১.২ শতাংশ হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৮১ লাখ আর মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছর।
জাতিসঙ্ঘের জনসংখ্যা তহবিল এক পরিসংখ্যানে জানিয়েছে, বাংলাদেশে জনসংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালে আমাদের লোকসংখ্যা ২৩ কোটি অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে জনসংখ্যা সমস্যা নিয়ে কিছুটা বিতর্কও আছে। অনেকের মতে, পৃথিবীতে যা সম্পদ রয়েছে তাতে সর্বোচ্চ ২০০ থেকে ৩০০ কোটি লোকের স্বাচ্ছন্দ্যমতো বসবাস করার উপযোগী। তাদের মতে, ধীরে ধীরে পৃথিবীর সব দেশের জনসংখ্যা কমিয়ে আনা উচিত। কেবল এ পদ্ধতি গ্রহণ করে প্রকৃতির ওপর যে নির্যাতন চলছে তা বন্ধ করা সম্ভব। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও উন্নত বণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদাও পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে। জনসংখ্যা সমস্যায় জর্জরিত গণচীন সরকার এক সন্তান নীতির মাধ্যমে জনসংখ্যা কমিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আবার কিছু দেশ ঋণাত্মক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের কারণে উল্টো নীতিও গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় এবং শহরকেন্দ্রিক জনস্রোত বৃদ্ধি পাওয়ায় সুপেয় পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার ব্যবস্থা আজ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। নগরায়ণ, নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংস, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সাথে পাল্লøা দিয়ে বাড়ছে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ। সেই সাথে বিশ্বজুড়ে জাতিগত দ্বন্দ্ব-বিবাদ, পেশিশক্তি প্রদর্শনে মানবসভ্যতার জন্য হুমকি নানান মারণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক ব্যবহার এবং নানা কারণে বাস্তুচ্যুতি ও জোরপূর্বক অভিবাসন তো রয়েছেই। এসব দুর্যোগ ও দ্বন্দ্বে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আর অপুষ্টি, মাদকের সহজলভ্যতা ও তরুণ-যুবসমাজের ওপর এর করাল থাবা এবং শব্দদূষণ তো এখন প্রকৃতি-পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।
ইউএনএফপিএ’র আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৫০ সালে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ শহরের বাসিন্দা হবে। কেননা খাদ্যচাহিদা ও জীবনযাত্রার মান পর্যায়ক্রমে ক্রমাবনতির ফলে মানুষ প্রতিনিয়ত শহরমুখী হচ্ছে। বিগত শতাব্দীতেও সারা পৃথিবীতে জনবহুল শহর ছিল মাত্র ১২টি; যেখানে প্রতিটিতে গড়ে বাস করত ১০ লাখের মতো মানুষ। বর্তমান একবিংশ শতাব্দীতে এসে বিশ্বে জনবহুল শহরের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০০টিরও বেশি; যেখানে গড়ে ১৫ লাখের অধিক মানুষ বসবাস করছে। আর কোটির ওপরে লোক বসবাস করছে এমন শহরের সংখ্যা পৃথিবীতে এখন ১৯টিরও বেশি।
দেশ, রাষ্ট্র আর নিখিল বিশ্বের অন্যতম মূল উপাদান হলো জনসংখ্যা। এ জনসংখ্যাকে পরিকল্পিতভাবে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও কৌশলভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পৃথিবীর মোট সম্পদ যেহেতু বাড়ছে না; দিনকে দিন বরং কমছে, তাই মানবমণ্ডলীর সার্বিক কল্যাণ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববাসীকে আরো আন্তরিকও সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। হ


আরো সংবাদ



premium cement
ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৩৭ বাংলাদেশে নতুন করে বাড়ছে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা হিট অ্যালার্ট নিয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের নতুন বার্তা ভান্ডারিয়ায় পিকআপ চাপায় বৃদ্ধ নিহত হোচট খেল লিভারপুল, পিছিয়ে গেল শিরোপা দৌড়ে যোদ্ধাদের দেখতে প্রকাশ্যে এলেন হামাস নেতা সিনওয়ার! ফের পন্থ ঝড়, ঘরের মাঠে গুজরাটকে হারাল দিল্লি ইউক্রেনকে গোপনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র গ্রেফতারের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ আরো বেড়েছে ইউক্রেন যুদ্ধে দুর্নীতি, পুতিনের নির্দেশে গ্রেফতার রুশ উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী!  আমেরিকানরা কি ধর্ম থেকে সরে যাচ্ছে?

সকল