১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাবা আমার অহঙ্কার

-

আমার জীবনটা সবসময় অভাবেই কেটেছে। যা চেয়েছি তা কখনোই পাইনি। যদি কিছু চাইতাম মা মুখ কালো করে রাখত। আর বলত তোর বাবাকে বলিস। বাবার কাছে গিয়ে কোনো কিছু চাওয়ার বায়না করার মতো সাহস কখনোই আমার হতো না। ইচ্ছেও করত না! বাবা যেন সাক্ষাৎ যমদূত! মাসে এক অথবা দু’বার বাসায় গোশত রান্না হতো। কখনো তাও হতো না। কিন্তু আমি লেখাপড়ায় ভালোই ছিলাম। সবাই পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলে বাবা-মা থেকে বিভিন্ন গিফট পেতাম। এমন আমার ক্ষেত্রে কখনোই হতো না। আমার ভাগ্যে ‘ভালো’ শব্দটি ছাড়া আর কিছুই জুটত না। বাবার চাকরি ছিল খুব ছোট সরকারি পদে। সরকারি অফিসের অফিস পিয়ন। অল্প টাকা বেতন পেতেন। বাবাকে কখনো নতুন জামা কিনতে দেখিনি। বাবা বরাবরই পুরনো জামা পরতেন আর কেউ জামা গিফট করলে সেই হতো নতুন জামা। মাও নতুন শাড়ি পরতেন না। বাবার ছোট চাকরি নিয়ে আমি বরাবরই হীনম্মন্যতায় ভুগতাম। কোথাও বাবার পরিচয় দিতে লজ্জা পেতাম। নিজের পরিচয় লুকাতে চাইতাম। একদিনের এক ঘটনায় সব পাল্টে গেল আমার। সেদিন বাবাদের অফিসের এক অনুষ্ঠানে বাবা আমায় এক প্রকার জোর করেই নিয়ে গেলেন। অনুষ্ঠানে এসেছে কত বড় বড় অফিসার। অফিসারদের ছেলেমেয়েরা কত দামি দামি কাপড় পরে ঘুরছে! তাদের সামনে আমি যেন মাটিতেই মিশে যাচ্ছিলাম! এমনকি আমার বাবার সমান পদের কর্মচারীদের ছেলেমেয়েদের কাপড়ও বেশ দামি। এসব দেখে বাবার ওপর বেশ রাগ হচ্ছিল। মনে মনে বলছিলাম তাকে আর বাবাই ডাকব না। অনুষ্ঠানের মঞ্চে বড় বড় অফিসাররা বক্তব্য দিচ্ছিলেন। আমি মনোযোগ দিয়ে অডিয়েন্স সারির এক কোণে বসে শুনছিলাম। এক বড় অফিসার হঠাৎ বাবাকে ডাকলেন। বাবা আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলেন। আমাকেও সাথে নিলেন। বড় স্যার আরেক স্যারকে বলছে, ‘এ হলো আমাদের অফিসের নাজিম। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী। আমাদের অফিসের সবচেয়ে সৎ অফিসার। কোনো দিন কোনো কাজে ফাঁকি দেয় না। কোনো দিন অসৎ কাজও সে করেনি। শুনে সবাই কড়তালি দিয়ে বাাবকে সেলিব্রেট করল। অফিসার আরো বললেন, এবার আমি এই নাজিমের নাম সৎ কর্মচারী পুরস্কারের তালিকায় পাঠাব। ওই যে ওর ছেলে। সে লেখাপড়ায় বেশ ভালো। সে সারাক্ষণ এই ছেলের প্রশংসা করে। সারাক্ষণ এই ছেলের কথা বলে। আমি অবাক হয়ে কথাগুলো শুনছিলাম। আর বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি, বাবা মাথা নিচু করে আছেন। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আমার চোখেও পানি চলে এলো। একজন সৎ সরকারি কর্মচারী বাবার সন্তান হয়েও বাবার প্রতি কত রাগ করেছি, কত না পাওয়ার অনুযোগ করেছি। আজ বুঝলাম হারাম আয়ের পাহাড়সম সম্পদের চেয়ে হালাল উপার্জনের একটি তিলও কত তৃপ্তির, কত মধুর। এসব ভাবতে ভাবতে বাবার দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছিলাম না। ইচ্ছে হচ্ছিল বাবার পায়ে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদার। আমি যে বড় অন্যায় করেছি। আমাকে বড় স্যারটি ডেকে বলেন, ‘অনেক বড় হতে হবে তোমাকে। তোমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন তোমার বাবার। তার মতো একজন সৎ মানুষ হওয়ার চেষ্টা করো। এই পৃথিবীতে তোমার বাবার মতো সৎ মানুষের খুব দরকার!’ আজ থেকে আমার বাবার কথায় চলব। বাবার আদর্শই আমার ভবিষ্যতের পথ। বাবার স্বপ্ন আমার স্বপ্ন। বাবাই আমার সব। এখন আমি আমার বাবাকে নিয়েই গর্বিত। নিজেকে তার সন্তান হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ব বোধ করি। বলতে পারি আমি আমার বাবাকে নিয়ে অহঙ্কার করি। আমার বাবাই আমার অহঙ্কার।


আরো সংবাদ



premium cement
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বিএনপি সাম্প্রদায়িক শক্তি, এদের রুখতে হবে : ওবায়দুল কাদের সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২

সকল