২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শেষ হলো না সেই ১৫টি দিন

-

করোনাভাইরাস। দেশে এই ভাইরাসের আগমনের পর থেকে একে একে সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার কথা উঠছিল। শুনেছিলাম আমাদের প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে দেবে। ১৫ দিনের জন্য! এই ভাইরাস নাকি অনেক মারাত্মক। মহামারীর কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেবে এটাই তো স্বাভাবিক। তবে সব প্রতিষ্ঠানের মতো আমাদের প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে দেবে শুনে আমি বিদ্রƒপের হাসি হেসেছিলাম।
বলেছিলাম, ‘হেহ, আমাদের স্কুল নাকি বন্ধ দেবে তাও আবার ১৫ দিনের জন্য!’
আসলে তখন স্কুল ছুটির বিষয়টা সকল ছাত্রছাত্রীর কাছেই খুব আনন্দের ছিল। কিন্তু স্কুলের প্রতি আমার অভিযোগ ছিল অনেক। কারণ আমার মনে হতো আমাদের স্কুলে পৃথিবীর সব স্কুলের চেয়ে কম ছুটি দেয়। তাই ১৫ দিন ছুটি দেয়ার বিষয়টা আমার কাছে খুব অবিশ্বাস্যকর ঠেকেছিল।
কিন্তু, না!
স্কুলের প্রতি আমার এই বিদ্রƒপের হাসি ছাপিয়ে সবাই শুনতে পেল ছুটির ঘোষণা। মুহূর্তেই আমার বিদ্রƒপ মাখা হাসি অবর্ণনীয় আনন্দে পরিণত হলো। আমার সেই আনন্দের কাছে করোনাভাইরাসের ভয়ও সেদিন ছাপা পড়েছিল।
হয়তো ভীষণ ছুটি প্রিয় ছিলাম। তব্ওু স্কুলকে ঘিরেই ছিল আমার যত ভালো লাগা। কারণ আমি চেয়েছিলাম স্কুল জীবনের শেষ বছরটায় স্কুলকে ঘিরে অনেক অনেক স্মৃতি কুড়িয়ে নিতে।
স্কুল ছুটির এই ১৫ দিন খুব আনন্দেই কেটে গেল। ১৫ দিন শেষে যখন শুনতে পেলাম ছুটি আরো বাড়িয়েছে, আমি যে কি খুশি হয়েছিলাম। মনে মনে এটাও বলছিলাম, ‘করোনাভাইরাস আরো বাড়িয়ে দাও আল্লাহ! স্কুল আরো কিছু দিন বন্ধ থাকুক!’
এভাবে দুই-তিন মাস কেটে গেল। স্কুল বন্ধ। চারদিকে শুধু হাহাকার। মৃত্যুর যন্ত্রণায় কাতর হয়ে থাকা মানুষগুলোর করুণ আর্তনাদ। করোনাভাইরাসের এত ভয়াবহ অবস্থা দেখে ভয়ে বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। তাই ছুটির পরিবর্তে তখন বারবার মুক্তি চেয়েছিলাম এই বন্দিজীবন থেকে। বারবার চেয়েছিলাম আগের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে। বুক ভরে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে। বুকের ভারটা লাঘব করার জন্য আবারো স্কুলে ফিরে যেতে। কিন্তু আমি সত্যিই অভাগী।
এখনো আমি সূর্য দেখি। সূর্যোদয় দেখি, সূর্যাস্ত দেখি। শুধু সেই দিনগুলোর মতো শত অপেক্ষা আর হাজারো প্রত্যাশা নিয়ে এখন আর ভোর হয় না। রঙিন রঙিন স্বপ্ন আর নতুন নতুন ইচ্ছে নিয়ে স্কুলের পথ পাড়ি দেয়া হয় না।
স্কুল ক্যাম্পাসে এখন আমাদের শপথের শব্দের প্রতিধ্বনি হয় না। ক্যান্টিনটা শব্দহীন। স্তব্ধ। ‘একাডেমিক ভবনের’ ২০৩ নং কক্ষ আর আমাদের ডাকে না। আমাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে হয়তো সে এখন বিরক্ত হয় না। জানি, দীঘির পাড়ের দেয়ালটা আমাদের খুব মনে করে, যেমনটা আমরা করি!
‘রহিম চাচা! ফুচকা খাওয়াবেন না আমাদের?’
‘চল না, ইপিজেডের আইল্যান্ডে হাঁটি সবাই মিলে! বেশি না, একটুখানি!’
আমার ছোট্ট জীবনটা থমকে আছে নির্জন স্কুল ক্যাম্পাসে...স্তব্ধ দীঘির পাড়ে...আর আমার চঞ্চল বান্ধবীগুলোর শব্দহীন দুষ্টুমির মাঝে! আমার ছোট্ট জীবনটা থমকে আছে রহিম চাচার ফুচকা দোকানে...আমার ছোট্ট জীবনটা থমকে আছে ইপিজেডের আইল্যান্ডের শিশির ভেজা দূর্বাঘাসে!
দিন শেষে মাস এলো। বছরও পেরিয়ে গেল। শুধু শেষ হলো না স্কুল ছুটির সেই ১৫টা দিন! হ

 


আরো সংবাদ



premium cement