২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাবা আমার বাবা

-

বাবাকে নিয়ে আমার অনুভূতি রয়েছে, কিন্তু তেমন কোনো স্মৃতি নেই। বাবাকে ধন্যবাদ দিতে পারিনি বা সরিও বলতে পারিনি, কারণ ভালো-মন্দ কিছু বোঝার বয়স হওয়ার আগেই আমার সাত বছর বয়সে বাবা হার্ট অ্যাটাক করে চলে যান না ফেরার দেশে। আমার বাবা আমার দাদার বড় ছেলে ছিলেন; তাই ছোট ভাইদের মানুষ করার দায়িত্ব তিনি কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। যথাবিহিত আমার একজন কাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন, অন্যজন কাকা প্যারামেডিক্স চিকিৎসকের চাকরি পেলেন, তৃতীয়জন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হলেন, আবার একজন ফুফু গ্র্যাজুয়েটও হলেন। আমার চাচা-ফুফুরা সবাই আমাদের বাসায় থাকতেন; মাঝে আমাদের বাসায় থেকেও এসএসসি পাস করার পর লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হলেন আমার মা! আমার বাবা নাটোর গুরুদাসপুরের বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ছিলেন, সঙ্গত কারণেই তার অগণিত ছাত্রছাত্রী ও গুণগ্রাহী ছিল। আমাদের বাসা ছিল উপজেলা সদরে; সেই সূত্র ধরে আমাদের বাসায় অনেক এসএসসি পরীক্ষার্থী থাকত। আমার বাবা মোহাম্মদ আলী বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথেও যুক্ত ছিলেন। এসব ভালোবাসার মানুষ, পরিবার-পরিজন ছেড়ে আমার বাবা ১৯৯০ সালের জুন মাসে কোনো এক বিকেলে চলে গেলেন নক্ষত্রের ওপারে। আমরা যখন বড় হচ্ছিলাম, আমাদের বাবার কাছে যখন আমাদের প্রয়োজন শুরু হলো তখন বাবা পাশে নেই। বাবার শাসন, বাবার আদর, বাবার আর্থিক সাপোর্ট, বাবার বটগাছের মতো ছায়া সবই প্রয়োজন ছিল। বাবার উপস্থিতিসহ সব কিছু থেকে আমরা বঞ্চিত হলাম। হঠাৎ করে কোথা থেকে কী যেন হয়ে গেল! ছেলের শোকে আমার দাদার শরীরের এক অংশ অবস হয়ে গেল। আমার অসুস্থ দাদিও বিছানায় পড়ে গেলেন। কাকারা নিজ নিজ পরিবার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। বাবার বেতন বন্ধ; তার কোনো সঞ্চয় ছিল না, আর সঞ্চয় থাকে কিভাবে? বেসরকারি চাকরি। শুধু নিজের বাড়িখানা ছিল আর ছিল কয়েক বিঘা পৈতৃক কৃষি জমি। তখন আমার মায়ের সংগ্রাম শুরু হলো। দিন থেমে থাকেনি; আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে এখন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মরত। আমার বড় এক বোন চিকিৎসক, তিনি অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। আরেক বড় এক বোন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে এখন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকতা করছেন। আমার মা আমাদের কষ্ট করে মানুষের মতো মানুষ করার জন্য সরকারি স্বীকৃতিও পেলেন। আমার মা নার্গিস সুলতানাকে মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের জয়িতা অন্বেষণ কার্যক্রমের আওতায় ২০১৭ সালে রাজশাহী বিভাগের সেরা জয়িতা নির্বাচিত করা হয়। বাবা তুমি ছিলে আদর্শবান শিক্ষক; আমরা তোমার আদর্শকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছি সামনের পথে। কখনো পিছপা হইনি, কখনো হাল ছাড়িনি, কখনো আশাহত হইনি; বাবা তুমিই ছিলে আমাদের অনুপ্রেরণা। দুঃখ একটাই তুমি আমাদের এই সফলতাকে দেখে যেতে পারলে না। ১৮ জুন, ২০২১ আমার বাবার মৃত্যুর ৩১ বছর পূর্ণ হলো! বাবা তোমাকে অনেক কথা বলার ছিল; বলা হলো না। বাবা তোমাকে নিয়ে আমাদের স্বপ্ন; তোমার নামে একটা পাবলিক লাইব্রেরি করে দেবো, তুমি যে গ্রামে জন্মেছ সেই গোটিয়া গ্রামে। নাটোরের সিংড়ার গোটিয়া গ্রামের মানুষ আলোকিত হবে তোমার নামের সেই লাইব্রেরিতে বই পড়ে। তুমি ছিলে শিক্ষার বাতিঘর, তোমার নামের লাইব্রেরিও হবে জ্ঞানচর্চার বাতিঘর। বাবা তুমি ছিলে মানুষ গড়ার কারিগর; তোমার হাতে মানুষ হয়েছেন আমাদের উপজেলার অনেক ছাত্রছাত্রী। তেমনি তোমার নামের লাইব্রেরিতে বই পড়েও দীপান্বিত হবে সাধারণ মানুষের জীবন।হ


আরো সংবাদ



premium cement
জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য ক্যাম্পে ডাক পেলেন ১৭ ক্রিকেটার, নেই সাকিব-মোস্তাফিজ উত্তর গাজায় আবারো ইসরাইলের গোলাবর্ষণ ধামরাইয়ে তাপদাহে জনজীবন কাহিল, ডায়রিয়াসহ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরছেন ১৭৩ বাংলাদেশী কেএনএফ সন্দেহে ছাত্রলীগ নেতাসহ কারাগারে ৭ স্থিতিশীল সরকার থাকায় দেশে উন্নয়ন হয়েছে : ওবায়দুল কাদের ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধানের মনোনয়নপত্র বাতিল রাজশাহীর পদ্মায় গোসলে নেমে ৩ শিশুর মৃত্যু দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা : ৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়ক দুমকিতে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে সভাপতির নির্দেশে ক্লাস চালু সিদ্ধিরগঞ্জে দেশীয় অস্ত্রসহ ৩ ডাকাত গ্রেফতার

সকল