২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জীবনের সৌন্দর্য

-

মানুষ সবকিছু বুঝে। বুঝে না বা বুঝাতে পারে না এমন কিছু নেই। কিছু কিছু জিনিস মানুষ স্বীকার করে। মেনে নেয়। আর কিছু কিছু জিনিস মানুষ জেনে, বুঝেও স্বীকার করতে উগ্রতা পোষণ করে। মানুষের এই সবকিছু বলা না বলা, বুঝা না বুঝা ডিপেন্ড করে তার স্বার্থ ও মানসিকতার ওপর। ইচ্ছে হলে, প্রয়োজন পড়লে মানুষ মানুষের কাছে আসবে। আবার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে অনেক দূরে চলে যাবে। এটি মানুষের আদি অভ্যাস।
কাউকে কখনোই নিজের সাথে তুলনা করতে নেই। আবার অন্যের সাথেও নিজের তুলনা করাটা নিছক মূর্খতা। কিন্তু আমরা ভুল বোঝাবুঝিতেই মত্ত থাকি সারাক্ষণ। অন্যদের দোষ খোঁজা আমাদের নেচার। আমরা অন্যের গায়ে চাকরির ইউনিফর্ম দেখে আফসোস করি! কিন্তু নিজের সাহস, মেধাশক্তিকে কাজে লাগাই না। খুব ক্ষুদ্রতম বস্তু যা আপেক্ষিক বিষয় আমরা তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করি। মূল্যবান সময় নষ্ট করি। কিন্তু খুব দরকারি, আলোচনার যোগ্য এমন অনেক বিষয়কে আমরা পাছে ফেলে রাখি।
আমাদের চিন্তাভাবনা, স্বপ্ন এবং শপথ সহজসাধ্য বিষয়ের প্রতি হয়ে থাকে। অসম্ভব কিছু সামনে এলে আমরা সেটিকে করতে পারার চেষ্টা করি না।
কাউকে ধন্যবাদ দিতে না পারাটা আমাদের হীনতা! রাস্তাঘাটে মানুষকে সালাম করতে না পারাটা আমাদের ধর্মীয় অবক্ষয়। চা-ওয়ালা, ফেরিওয়ালাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে না পারাটা আমাদের শিষ্টাচারের অভাব। কারো উপকারে এগিয়ে আসতে না পারাটাও আমাদের স্বার্থপরতা। মানুষকে ভালো কাজে উৎসাহিত করতে না পারাটা আমাদের নিশ্চুপ শয়তানি।
অন্যকে ইন্ধন দেই। অন্যের চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখি। অন্যের পেছনে লাগতে লাগতে একসময় নিজেই পেছনে পড়ে থাকি। এভাবেই হয় আমাদের ক্ষয়!
খুব না জেনে, না বুঝে, তত্ত্ব-তালাশ উদঘাটন না করে কথা বলাটা ফ্যাসিবাদী হওয়ার আসল কারণ। শুধু গণ্যমান্যদেরই গ্রাহ্য করি। আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিদের কদমে কদমে পা ফেলে হাঁটি। কথায় কথায় জালিয়াতি, জুলুম, নিপীড়ন করে বেড়াই। একটু অনুদানের মাধ্যমে মানুষকে চিরতরে বশবর্তী করে রাখাকে পছন্দ করি। সমাজে যারা নিম্নশ্রেণীর তাদেরকে আমরা মানুষই মনে করি না। শুধু উপেক্ষা আর অবহেলা করি!
ডাকপিয়ন, রেস্টুরেন্ট বয়, বাসের হেল্পার, রিকশাচালক যারা দৈনন্দিন আমাদের জীবনের সবচেয়ে বেশি উপকার করে থাকে তাদেরকে যা-তা, যত্রতত্র, হেনস্তামূলক বকা দেই। তারা ভাঙতি টাকা দিতে দেরি করলে বা ততক্ষণাৎ দিতে না পারলে মাথায় আমাদের সম্পদ লুট হয়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তা চাপে। আমরা উপকারকারীকে একটি টাকাও বেশি দিতে সম্মতি প্রকাশ করি না। নিজের গৃহে কাজের ভুয়াকেও বকশিশ দিতে কিপটেমি করি। আমরা কী জানি? প্রবাসে আমাদেরই বাবা-চাচারা বকশিশের টাকা দিয়েই আমাদের জন্য শীতবস্ত্র, খাদ্যবস্তু, চিকিৎসার ওষুধ পাঠিয়ে থাকেন। স্থানীয় বিদেশীরাও তো না দিলে পারত; কিন্তু তাদের মনটা বড়! এভাবে দেয়ার কারণেই তো আমাদের অর্থের প্রাচুর্যতা আছে। ক্ষুধার্ত পেটে প্রশান্তি আছে। নিরস চেহারায় হাসির দ্যুতি আছে! আমরাও নিজেদের মনটাকে ছোট না করে বড় করা দরকার। জীবনটাকে বদলাই। মনমানসিকতাকে চেঞ্জ করি। হার্র্টটাকে খারাপ কাজ করার মাধ্যমে দুর্বল না করে ভালো কাজের মাধ্যমে সবল করি। বন্যাদুর্গত এলাকায় গিয়ে আর্ত-পীড়িতদের পাশে দাঁড়াই। যেকোনো দুর্যোগ, মহামারীর কবলে পড়লে সবাই একসাথে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করি। তাহলেই আমাদের পক্ষে সব বিমর্ষতা এবং অনুতপ্ততা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে!


আরো সংবাদ



premium cement