২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ঈদ কার্ড এখন শুধুই গল্প

-

আমরা এখন ডিজিটাল যুগে বসবাস করছি। সময়ের সাথে সব কিছু বদলে গেছে। আগের মতো আবেগ কিংবা অনুভূতি কোনোটিই এখন আর নেই। একে অন্যের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ বদলে গেছে। সেটা নিজের যেকোনো আপনজন হোক না কেন। ঈদ আসার আগেই আমাদের তোড়জোড় শুরু হয়ে যেত। কখন ঈদ কার্ড কিনব আর সেটা কখন নিজের প্রিয়জনকে উপহার দেবো। প্রিয়জনরাও অপেক্ষায় থাকত ঈদ কার্ডের জন্য। এখন কি কেউ আর অপেক্ষায় থাকে একটা ঈদ কার্ডের জন্য? প্রিয়জনের ভালোবাসার পরশমিশ্রিত একটা ঈদ কার্ড। অনেক সময় প্রতিযোগিতাও দেখা যেত। কার কাছে কতগুলো ঈদ কার্ড এসেছে। আর এখন কেউ কোনো খবরই রাখে না। ঈদ কার্ডও যে আমাদের ঐতিয্যের একটা অংশ সেটাও মনে হয় ভুলে গেছে অনেকে। একটা সময় রাজনৈতিক অঙ্গনেও ঈদ কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা গেছে। পাড়া-মহল্লøার মুদি দোকানেও পাওয়া যেত ঈদ কার্ড। ছোট-বড় সবাইকে শুভেচ্ছা জানানো হতো ঈদ কার্ডের মাধ্যমে। সন্তানরা বাবা-মায়ের জন্য কিনত, আবার বাবা-মা কিনত সন্তানের জন্য। বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী তো আছেই। কেউ ঈদ কার্ডের শুভেচ্ছা থেকে বাদ পড়ত না। গ্রাম কিংবা শহর সব জায়গাতেই ছিল এর ব্যাপক প্রচলন। ঈদ কার্ডের মাধ্যমে শুভেচ্ছা পেলে মানুষ আবেগে আপ্লুত হয়ে যেত। মনের গহিনে আনন্দ খেলা করত। অনেকে ছিল প্রিয়জনের দেয়া ঈদ কার্ড সযতেœ সাজিয়ে রাখত। ঈদ কার্ডেই পাওয়া যেত আনন্দমিশ্রিত লেখা। যা থেকে ভালোবাসার অনুভূতি পেত। প্রিয়জনের জন্য একটা সুন্দর কার্ড কিনতে পারলে ভীষণ আনন্দ হতো সবার। একটা সময় ছিল যখন ছোট কিংবা বড় সবাই ঈদ কার্ড কেনার জন্য একটা বাজেট রাখত। কালের গর্ভে এখন সবই হারিয়ে যেতে বসেছে। সময়টা খুব একটা বেশি দিনের নয়। বিংশ শতাব্দীর শুরুতেও ঈদ কার্ডের বেশ প্রচলন ছিল। মানুষের ব্যবসার একটা অনুষঙ্গ ছিল এই ঈদ কার্ড। কিন্তু আমরা যখন আস্তে আস্তে আধুনিক হতে শুরু করেছি, তখন থেকেই ঈদ কার্ডের প্রচলনটাও কমে এসেছে। কার্ডের জায়গা দখল করে নিয়েছে মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটারের কিবোর্ড চেপে লেখা নানা রঙের ঈদ কার্ড। মুহূর্তের মধ্যেই প্রিয়জনের মোবাইল, ল্যাপটপে চলে যাচ্ছে সেই ঈদ শুভেচ্ছা। বাসায় তো নেট কানেকশন আছেই। শুধু শুধু কে আর দোকানে গিয়ে ঈদ কার্ড কিনতে যায়? কিংবা কেন-ই বা ঈদ কার্ডের জন্য খরচ করা? আর বর্তমান সময়ে তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আছেই। চাঁদ ঈদের রাতে সেই যোগাযোগ মাধ্যমে ভরে যায় ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ে। ম্যাসেঞ্জারে মুহূর্তেই শ’য়ে শ’য়ে ঈদ শুভেচ্ছার মেসেজে ভরে যায়। ঈদ কার্ড না কিনলে মনের ভেতর একটা অশান্তি থেকে যেত। খুঁতখুঁত লাগত। মনের ভেতর বেজে উঠত বিরহের করুণ গান, ‘আমার প্রিয়জনকে একটা ঈদ কার্ড দিতে পারব না?’ ঈদ কার্ড পেলেও সবার মনে আনন্দের বন্যা বয়ে যেত। কিন্তু এখন যেন হারিয়েই গেছে ঈদ কার্ড। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে ঈদ কার্ড এখন অতীত। তাদেরকে ঈদ কার্ডের বিষয়ে বলা হলে চিনতেই পারে না! তারা এখন ঝুঁকে পড়েছে ডিজিটাল মাধ্যমে। এ যুগের ছেলেমেয়েরা কি আর জানে কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো এবং শুভেচ্ছা পাওয়াতে কত আনন্দ ছিল সে সময়? কার্ডগুলো হাতে নিয়ে দেখতেও খুব ভালো লাগত। প্রিয়জনের হাতের ছোঁয়া তো ছিল ওই কার্ডে। তারা কি বুঝতে পারছে, ঈদ কার্ডের মাধ্যমে যেভাবে শুভেচ্ছা জানানো যায়, সেই আন্তরিকতা কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে সম্ভব নয়? সেই সময়ের ১০ টাকার ঈদ কার্ডের মাঝে যে আনন্দ, আবেগ, ভালোবাসা, মায়া, মমতা, মমত্ব ছিল সেটা এখন তারা পাচ্ছে না কোনোভাবেই। ডিজিটাল মাধ্যমে সেটা সম্ভবও নয় কখনো। এখন লাখ টাকা খরচ করে দূরে কোথাও ঘুরতে গেলেও সেই ভালোবাসা পাওয়া যায় না। এখন একটা অপূর্ণতা থেকে যাচ্ছে আমাদের মধ্যে। নতুন প্রজন্মকে গল্প বলতে হচ্ছে এখন, ‘আমাদের সময় ঈদ কার্ড ছিল। সেটা শুধু একটা কার্ড নয়। একটা আবেগ। একটা মায়া। একটা মোহনীয়তা। সেই কার্ডে ছিল একটা ভালোলাগা ঘ্রাণ।’


আরো সংবাদ



premium cement