স্বপ্নময় রোজা
- কাজী সুলতানুল আরেফিন
- ১৮ এপ্রিল ২০২১, ০১:০০
‘কাল রাতে সাহরি খাওয়ার সময় কেউ আমাকে ডেকে তুললে না কেন?’
‘আমরা ডেকেছি। তুমি ঘুমের জন্য উঠতে পারোনি!’
রোজার দিনে সকালে ঘুম ভাঙার পরে এভাবে অভিমান ঝারতাম বাসার সবার প্রতি। তারাও আমাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য এমন নানা কথা বলত। তখন বুঝতাম না যে, রোজা পালনের বয়স তখনো হয়ে ওঠেনি। তাই বাসার কেউ সাহরি খাওয়ার জন্য ভোররাতে ঘুম থেকে জাগাত না। কোনো কোনো রাতে পরিবারের সদস্যদের সাহরি খাওয়া টের পেয়ে যেতাম। প্লেট-চামুচের টুংটাং শব্দে ঘুম ভেঙে যেত। সাথে সাথে আমিও এক লাফে উঠে সাহরি খাওয়ার জন্য বসে পড়তাম। সবাই হেসে মুখ ধোয়ার কথা মনে করিয়ে দিত। সাহরি বেশি করে খাওয়ার চেষ্টা করতাম, যাতে দিনে ক্ষুধা না লাগে।
সাহরি খাওয়ার জন্য মসজিদের মাইকে আহ্বান আর সাহরি খাওয়ার সময় শেষ হয়ে গেছেÑ এসব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে খুব উপভোগ করতাম। আমার কাণ্ড দেখে বাসার সবাই মুচকি মুচকি হাসত। সকালে ঘুম থেকে ওঠে সহপাঠী বা খেলার সাথীদের কাছে বুক উঁচিয়ে বলতাম, ‘আজকে আমিও রোজা রেখেছি।’ আমার গর্ব দেখে সহপাঠীদের কেউ কেউ অপমান বোধ করত। রোজা না রাখার কারণে। অন্য দিন তাদের কেউ যখন আমাকে বলত, ‘আজকে আমিও রোজা রেখেছি’। আমি যদি রোজা না রাখতাম, সে দিন আমার কাছেও একই অপমান বোধ হতো।
আবার যে দিন রোজা রাখার জন্য সাহরি খেতাম সে দিনের অর্ধেক সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে বাসার সবাই জোর করে কিছু খাইয়ে রোজা ভাঙিয়ে দিত। কেউ কেউ সান্ত¡না দিত দিনে যে, দু’বার খেলেও ছোটদের রোজা ভাঙে না। তার পরও যুদ্ধ করে দু-চারটা রোজা রেখেই দিতাম। যখন রোজা রেখে দিতাম তখন ইফতারির সময় হওয়ার সময় সবার আগে টেবিলে বসে থেকে হাত-পা নাড়াতাম। বারবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখতাম। অন্যদের কাছে জানতে চাইতাম, ‘আর কতক্ষণ?’ মনে হতো আজ সব ইফতারি একাই খেয়ে নেবো। কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠত না।
যখন রোজা দু-তিনটি রাখতে সফল হতাম। এরপর বন্ধুদের সাথে হিসেব চলতÑ এবার কে কয়টা রোজা রেখেছে! কেউ মিথ্যা হিসাব দিচ্ছে সন্দেহ হলেই তার বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জেনে নিতাম।
কতটা স্বপ্নময় ছিল ছোটবেলার প্রতিটি রোজার মাস। রোজা এলে ঈদও আসে! মনের ভেতর তাই রোজার মাসের খুশি জেগে উঠত।
এখনো রোজার মাস আসে। আবার রোজার মাস চলে যায়। তবে ছোটবেলার সেই আনন্দ আর ফিরে আসে না। স্বপ্নময় মনে হয় না। এখন রোজা রাখি। ইবাদতও করি কিন্তু বন্ধুদের সাথে আর হিসাব মেলাতে যাই না! অবশ্য হিসাব মেলানোর দরকারও নেই। কারণ প্রাপ্তবয়স্কদের সব রোজাই রাখতে হয়। আর সব হিসাব আল্লাহর কাছে জমা থাকছে। এখন রোজার মাসে একটাই স্বপ্ন থাকে। তা হচ্ছে আখিরাতে আল্লাহর কাছে বিজয়ী হওয়া!হ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা