২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পাখির মঞ্জিল

-

বাগানের তিনপাশে উঁচু-নিচু টিলায় সবুজাভ চায়ের বাগান। একপাশে বাগানের রাস্তা। এরই মাঝে নিচু জমিতে বা সমতলে বিশাল একটি প্রাকৃতিক জলাধার। যা ‘লেক’ নামে সমধিক পরিচিত। তবে চা শ্রমিকদের কাছে এটির পরিচয় ‘বাঁধ’ এবং ‘পাখির মঞ্জিল’ হিসেবে। প্রায় ১০ একর আয়তনের মোহনীয় এ জলাধার বা লেকের নীল জলে ফুটে রয়েছে লাল শাপলা। তিনপাশে চা-বাগান ঘেরা পুরো লেক বা জলাধারজুড়েই রয়েছে প্রচুর কচুরিপানা। স্বচ্ছ নীল জলের এ জলাধারের উপরে ঝাঁকে-ঝাঁকে উড়ে বেড়াচ্ছে পরিযায়ী পাখি। যা এলাকাবাসীর কাছে অতিথি পাখি হিসেবে পরিচিত। এসব পরিযায়ী পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে এখন মুখরিত পুরো রাজঘাট বাগান এলাকা।
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাজঘাট লেক বাগানের ৯, ১০ ও ১১ নম্বর সেকশনের টিলা থেকে লেকের পাড় পর্যন্ত উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বপাশে অবারিত চায়ের বাগান। লেকের পশ্চিম পাশে বিদ্যাবিল চা-বাগানে যাওয়ার রাস্তা। মোহনীয় রাজঘাট লেকটি অপার সৌন্দর্যময়। আর শীত মওসুমে লাখ লাখ পরিযায়ী পাখির আগমন এটি সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। পাখির কিচিরমিচির শব্দ, ঝাঁকে-ঝাঁকে ডানা মেলে মুক্ত আকাশে উড়ে চলা, লেকের স্বচ্ছ নীল জলে জলকেলি, খাবারের সন্ধানে লেকের সর্বত্র বিচরণ দেখতে শত শত মানুষ ভিড় করছেন। নির্জন রাজঘাট চা-বাগানের অভ্যন্তরে অবস্থিত এ লেকে অবস্থানকারী পরিযায়ী পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর জলকেলি এখানে আগত পর্যটক ও বাগানের রাস্তায় চলাচলকারী পথচারীরা মনের আনন্দে উপভোগ করছেন। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন এখানে।
এ বাঁধে সব সময় পানি থাকে। শীত ছাড়াও বছরজুড়ে দীর্ঘ সময় অতিথি (পরিযায়ী) পাখিরা এখানে থাকে। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে এখানে হাঁসজাতীয় পাখি আসছে। আগে অনেক কম এলেও এখন হাজার হাজার পাখির আগমন ঘটছে।
শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরস্থ ঐতিহ্যবাহী বাইক্কা বিলে প্রতি বছর কয়েক লাখ পাখি দেখা যায়। কিন্তু গত দুই বছর সেখানে পাখিদের সংখ্যা একেবারে নগণ্য। বাইক্কা বিলে যেসব পরিযায়ী পাখি আসত সে পাখিগুলো এখন শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়ে বিশেষ করে রাজঘাট চা-বাগান লেক ও পাত্রখোলা চা-বাগান লেকে আশ্রয় নিয়েছে। পরিযায়ী পাখিরা যেখানে নিজেদের অধিক নিরাপদ মনে করে সেখানেই আশ্রয় নেয়। রাজঘাট লেক এলাকায় আছে সরালি হাঁস, পানকৌড়ি, লালচে বক, কালো লেজ জৌরালিসহ নানা ধরনের পরিযায়ী পাখি। রাজঘাট লেক এলাকার অবস্থানরত পাখিদের যেন কেউ শিকার করতে না পারে সেদিকে চা-বাগান কর্তৃপক্ষের রয়েছে বিশেষ লক্ষ্য। এজন্য এখানে পাখিদের দেখাশোনা করার জন্য বাগান কর্তৃপক্ষ চারজন প্রহরী নিয়োগ করেছে। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ইনাম আল হক গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘সরালি হাঁসজাতীয় পাখি শীত মওসুমে বিভিন্ন জলাশয়ে আশ্রয় নেয়। চা-বাগান এলাকায় যেহেতু লোক চলাচল অনেকটা সংরক্ষিত তাই চা-বাগান এলাকায় অবস্থিত জলাশয়গুলো পরিযায়ী পাখিদের জন্য অধিক নিরাপদ। ফলে চা-বাগানের জলাশয়গুলোতে পরিযায়ী পাখিদের আগমন বেশি ঘটে। বাগান কর্তৃপক্ষকে এ পাখিদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে খেয়াল রাখতে হবে।
যেভাবে যেতে হবে রাজঘাট লেকে : দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ট্রেন, বাস বা প্রাইভেট গাড়িযোগে আসতে হবে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার চায়ের রাজধানী খ্যাত শ্রীমঙ্গল উপজেলা সদরে। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে রাজঘাট চা-বাগান পর্যন্ত সিএনজি অটোরিকশা, জিপ ইত্যাদি গাড়িতে করে ৭ নম্বর রাজঘাট ইউনিয়নের রাজঘাট চা-বাগানে পৌঁছতে হবে। এক্ষেত্রে শহর থেকে যাতায়াত ভাড়া নেবে ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ হাজার টাকার মধ্যে। রাজঘাট চা-বাগানের চৌমুহনা থেকে দক্ষিণমুখী বিদ্যাবিল চা-বাগান সড়কে চা-কারখানা থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার এগোলেই রাস্তার বাম পাশে দেখতে পাওয়া যাবে লেকটি। হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির ঝাঁকে ঝাঁকে নীল আকালে উড়ে বেড়ানো, জলাশয়ের নীল জলে খুনসুটি, পাখিদের মধুময় সুরের কলকাকলি রাজঘাট লেককে করেছে আরো বেশি মায়াময় মোহময়। হ


আরো সংবাদ



premium cement