মৃত্যু উৎকণ্ঠা
- আকিব শিকদার
- ২১ মার্চ ২০২১, ০০:০০
যমদূত দাঁড়িয়ে ছিল শয্যাপাশে মশারি ঝোলানোর লাঠিটি ধরে। বৃদ্ধের বড় উৎকণ্ঠা, মধ্যরাতে হ্যারিকেনের অল্প আলোয় গলা শুকিয়ে কাঠ। একটা কিশোর গেছো ব্যাঙের মতো তিন লাফে উঠল নারকেল গাছের চূড়ায় এবং নেমে এলো মুঠিবন্দী কচি ডাব সমেত। গিয়েছেন একজন মাজু ডাক্তারের বাড়ি। গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তার বাঁ-হাতে চামড়ার থলে ঝুলিয়ে আসবে শিগগিরই, শোনা যাবে মধ্যরাতেও সাইকেলের ক্রিং ক্রিং ধ্বনি। বৃদ্ধের বুকের ভেতর হুলস্থুল, শুইছেন, বসছেন দিচ্ছেন দেয়ালে হেলান- ‘রতনটা এলো না এখনো বউ মা, ও বউ মা, রুনু কি ঘুমিয়ে গেছে? এমন লাগছে কেন! আল্লাহ ও আল্লাহ।’ রতন তার একমাত্র ছেলে, অন্ধের যষ্টি। রুনু, ছেলের ঘরের আদুরে নাতি। (ছেলেটি মোকদ্দমার কাজে সুদূর শহরে, আজ তার ফেরা হবে না; নাতিটি নরম বালিশে মাথা গুঁজে ঘুমিয়ে)।
চৌকির পাশেই টেবিল, তার উপর লাল মলাটের বই বর্ণ চেনার। ‘নাতিটি পড়বে’ সে যে আজই দেয়াল ধরে দাঁড়াতে শিখেছে এবং দিয়েছে তিনটি কদম কাঁপা কাঁপা পায়ে, তাই এই উপহার। বৃদ্ধের বড় আফসোস, রুনুটা ঘুমিয়ে গেছে, নতুন ছড়ার বই আর হালখাতা থেকে আনা পলিথিনে মোড়া একপ্যাঁচ জিলেপি, কুড়মুড়ে নিমকি, দুটো সন্দেশ হাতে পেয়ে তার দাদুভাই কী যে খুশি হতো!
চুলপাকা পতœীর হাতে হ্যারিকেন, সলতেটা বাতাসে কাঁপছে নিভু নিভু, দেয়ালে নড়ছে ছায়া। পুত্রবধূর হাতপাখা ঘুরছে সজোরে, তবু বৃদ্ধের কপালে ঘাম টপটপ, গায়ের জামাটি ভিজে জুলজুল। প্রলাপের ঘোরে বলছেন, ‘রতন বাপধন রে, ফিরে আয়, রুনু, দাদুভাই কেঁদো না, ঘুমাও। ছমিরন, ছমিরন, এতদিন পরে এলে!’ (ছমিরন বৃদ্ধের প্রথমা স্ত্রী, মরে গেছে তিরিশ বছর হলো, সন্তান প্রসবকালে)।
ডাক্তার যখন এলেন আঙিনায় বাবলা গাছের তলে ততক্ষণে যমদূত ফিরে গেছে জান কবচের শেষে। আগামী সকালে বাড়িটা ভরে যাবে অজস্র সাদা পাঞ্জাবি দাড়ি টুপিওয়ালা জনমানুষে আর পুঁটলি বাঁধা বাসি জিলেপি, নিমকি, দুটো গোলাপি সন্দেশ নিশ্চিত লাল পিঁপড়ের আহার্য। হ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা