১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্বাধীনতার স্বাদ ও বিজয়ের নিশান

-


দাদা আর নানা মারা গেছেন সেই অনেক বছর আগে। যাদের কাছে স্বাধীনতার গল্প শুনতাম। যুদ্ধের কাহিনী শুনতাম। এখনো তাদের বয়সী লোকদের ধুঁকে ধুঁকে রিকশা টানতে দেখি। জীবনযুদ্ধ দেখি। দাদী আর নানী থেকেও শুনেছি তখনকার অনেক আর্তনাদের কাহিনী। কিন্তু আজ কেউ পাশে নেই। নানী আর দাদীর বয়সী অসহায় মহিলারা এসে যখন সাহায্যের জন্য হাত পাতেন এবং নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন তখন চিৎকার করে অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু বলা আর হয়ে ওঠে না! আমি নির্বাক হয়ে যাই। আমার মাথা নিচু হয়ে যায়।
মাঝে মাঝে বুকটা ফেটে যেতে চায়। মন-প্রাণ অস্থির হয়ে ওঠে। এই প্রজন্ম স্বাভাবিকভাবে স্বাধীনতার আর বিজয়ের স্বাদ পেয়ে আজ গর্বিত। কিন্তু যাদের ত্যাগের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা আর বিজয় এসেছে তাদের সেই সম্মান বা মর্যাদা কি আমরা ধরে রাখতে পেরেছি? শুধু দিবসে আমাদের প্রেম উথলে উঠতে দেখা যায়! সারা বছর এই প্রেম আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায় না কেন? কেন এই স্বাধীন দেশের অনেক মানুষকে নিয়ে আমরা এখনো ভাবতে পারি না! অনেকের কাছে বিজয়ের স্বাদ এখনো আলো আঁধারিতে খেলা করে।
আজ মুষ্টিমেয় লুটতরাজের সিন্দুকে ধন কুক্ষিগত হওয়ার কারণ কি আমরা একাগ্রচিত্তে ভেবে দেখেছি? নিজের দাপটের প্রভাবে যারা ইঁদুরের মতো কুটিকুটি করে কেটে দেশকে শেষ করে দিচ্ছে তাদের হাত থেকে দেশ মুক্তি পাচ্ছে না কেন? কিংবা তাদের দাপট কতকাল চলবে? ন্যায্য পাওনা পেতে কেন উপরি দেয়া লাগবে? ভেজাল আর দ্রব্যমূল্যের চড়া দাম দিতে হবে? এসব হাজারো প্রশ্নে মন আমার বিষণœ হয়। আমার মাঝে অবসাদ নেমে আসে। মূলত এসব কারণেই সমাজে আজ এত বৈষম্য। সেই দাদা-নানা আর দাদী-নানীদের বয়সী মানুষদের দৈন্য দশার উদ্ভব হয়েছে। স্বাধীনতার স্বাদ অবসাদে পরিণত হচ্ছে!
ঋণ খেলাপি থেকে মাদক কারবারিদের ছোবলে আজ দেশ আর দেশের স্বাধীনতা। মলিন হচ্ছে বিজয়ের আনন্দ। দুর্নীতিবাজদের রাজত্ব কায়েম হওয়ার জন্য এই দেশ স্বাধীন করা হয়নি! ১০ টাকার জিনিস লাখ টাকা মূল্য দেখিয়ে লুট করার সুযোগ পায় কী করে দস্যুরা? দেশের টাকা নিজের মতো দেদার হাওয়ায় উড়িয়ে আনন্দ ভ্রমণ করে কিভাবে অনেকে?
কেন মুক্তিযোদ্ধারা আজ সবচেয়ে গরিব? দেশের এই প্রান্ত থেকে সেই প্রান্তে কেন এত বৈষম্য? আজো রাতের ফুটপাতে কেন আশ্রয়হীনের মিছিল? কেন শিশুদের আজো শ্রম দিতে হয় খাবারের জন্য? নির্যাতন, ধর্ষণের কথা বলে আর অস্থির হতে চাই না। আইনের অধিকারে কত রকমের বৈষম্য নজরে আসে তাও আর বলতে চাই না!
এই স্বাধীনতাকে ধুপ করে আরো একটি বার সমুজ্জ্বল করতে হবে! বিজয়ের নিশান আবারো নতুন করে সমুজ্জ্বল করতে হবে।হ


আরো সংবাদ



premium cement