২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নদীর বুকে

-

মনকে শান্ত করার জায়গা হলো মায়ের আঁচল। আর দ্বিতীয়টি হলো নদীর কূল। যখন মাঝে মধ্যে বিষণœতারা এসে জেঁকে বসে মনের আসনজুড়ে। তখন কোনো কালক্ষেপণ না করেই নদীর কূলে ছুটে আসি। এসে নদীর সাথে আলাপচারিতায় মগ্ন হয়ে যাই। মনের সব কষ্টগুলোকে শেয়ার করি। আবার পুষে রাখা স্বপ্নগুলোকে উল্লেখ করতেও কিন্তু ভুলিনি! আলাপচারিতার পর নদীর কিনারে সবুজ দূর্বাঘাসের ওপর বসে সমস্ত চিন্তাভাবনাকে ঝেড়ে ফেলে দীর্ঘক্ষণ তৃপ্তির শ্বাস নেই। ঘাসেরাও আমাকে আপন ভেবে তার বুকে স্থান দেয়। বুঝতে পারে আমি এক অশান্ত মানুষ, আসি তার বুকে বসে শান্ত হতে। বসে বসে পাখিদের ওড়াউড়ি দেখি। দল বেঁধে যখন পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যায়, তখন কিছুক্ষণ পাখিদের নিয়েও মগ্ন থাকি। ভাবতে থাকি আহ্ কী স্বাধীনভাবে মুক্ত আকাশে উড়ছে তারা। চিন্তার লেশমাত্র নেই তাদের কারো মাঝে। তখন পাখিদের দেখে আমার মনে অনেক হিংসে হয়। মনে মনে বলি যদি আমি পাখি হতে পারতাম! তাহলে সারাদিন নীলাভ্র নীল আকাশের নিচে মুক্তমনে ওড়াউড়ি করতাম। দেশ হতে দেশান্তরে উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়াতাম। থাকত না কোনো বাধা। হারিয়ে যেতাম স্বপ্নপুরীর রাজ্যে। আহ্ কী মজাই না পেতাম! এসব নিয়ে স্বপ্নের রাজ্যে হাবুডুবু খেতে থাকি।
কিছুক্ষণ পর চেতন ফিরে এলে, বহমান নদীর দিকে তাকিয়ে থাকি অপলক নেত্রে। মৃদু হওয়া বয়তে থাকে। মৃদু হাওয়ারা জলকে আলতো করে প্রীতির ছোঁয়া দিয়ে যায়। আর পানিও ভালোবাসার ছোঁয়া পেয়ে আনন্দে ঢেউ খেলতে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। শীতল হাওয়ারা আমাকেও ছুঁতে ভুল করে না। আমাকেও আলতো করে ছুঁয়ে দেয়। তখন আমার ভারাক্রান্ত হৃদয়েও আনন্দের হিল্লোল ওঠে। সব ক্লান্তি দূর হয়ে প্রফুল্লতা এসে বাসা বাঁধে এই চিত্তে। স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে নিতে পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের ‘নদীর কূল নাই-কিনার নাইরে’ গানটার কথা মনে পড়ে যায়। তারপর গলা ছেড়ে গাইতে থাকিÑ
—-‘নদীর কূল নাই-কিনার নাইরে;
আমি কোন কূল হইতে কোন কূলে যাব
কাহারে শুধাইরে?
ওপারে মেঘের ঘটা, কনক বিজলী ছটা, মাঝে নদী বহে সাঁই সাঁইরে;
আমি এই দেখিলাম সোনার ছবি
আবার দেখি নাইরে;
আমি দেখিতে দেখিতে সে রূপ
আবার দেখি নাইরে।
বেসম নদীর পানি,
ঢেউ করে হানাহানি,
ভাঙা এ তরণী তবু বাইরে;
আমার অকূলের কূল দয়াল বন্ধুর
যদি দেখা পাইরে।
গাইতে গাইতে বুকভরা শান্তি নিয়ে হাঁটতে থাকি আবাস্থলের দিকে।


আরো সংবাদ



premium cement