২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফাঁদ

-

ঢাকা শহরে আমার আত্মীয়স্বজনের সংখ্যা একেবারেই কম। যারা আছে তাদের সাথেও খুব একটা দেখা-সাক্ষাৎ হয় না বললেই চলে। ব্যস্ত শহরের সবাই কর্মব্যস্ত। কেউ কারো দিকে চোখ তোলে তাকানোরও সময় পায় না।
তিন বছর আগে বিয়ে করা বউ নিয়ে ঢাকায় বসবাস করছি দুই বছর ধরে। সাথে আমার মা-ও থাকেন। আত্মীয়স্বজনদের সাথে যোগাযোগের ঘাটতি থাকলেও বেশ সুখেই কাটছে দিনকাল। তবে খুব করে চাই- ঢাকা শহরে আমাদের আত্মীয়স্বজন বসবাস করুক। একে অপরের বাসায় যাতায়াত হোক। সবাই মিলে ঢাকার বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় বেড়াতে যাই। কিন্তু চাইলেই তো আর সব সম্ভব হয়ে ওঠে না।
একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে বাসে এক দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের সাথে পরিচয় হলো। কীভাবে? ফোনে কথা বলার সময় ও বলছিল- ‘আমি হলাম কিশোরগইঞ্জা লোক’! ব্যস, কথায় কথায় জানতে পারলাম সে আমার পাশের এলাকার আত্মীয়। ফোন নম্বর দিলাম, বাসার ঠিকানা দিলাম। বললাম, বেড়াতে এসো, যখনই ইচ্ছে হবে।
ছেলেটার নাম জসিম। বছরখানেক ধরে ঢাকায় থাকছে। কয়েক জায়গায় চাকরি করেছে। বেতনে পোষায় না বলে আপাতত বেকার। একদিন আমাকে ফোন দিয়ে জানাল বাসায় আসবে। আমি বললাম, আসো। বাসায় ফোন দিয়ে জসিমের আসার কথা জানালে বউ আপ্যায়নের ব্যবস্থা করলেন। ঢাকায় আসার পর এই প্রথম কোনো আত্মীয় বেড়াতে আসছে। বেশ খুশিই হয়েছে বউ। তাছাড়া এই ক’দিনে জসিম আপনই হয়ে গেছে আমাদের। যোগাযোগের পর থেকে এমন কোনো দিন নেই যেদিন সে ফোন করে খোঁজখবর নেয়নি।
আমি বাসায় পৌঁছার কিছুক্ষণ পরেই জসিম এলো। খালি হাত। কিছুটা হোঁচট খেলাম। কোথাও বেড়াতে গেলে মিষ্টিজাতীয় প্যাকেট অন্তত থাকার কথা। পরক্ষণই ভাবলাম, বেকার অবস্থায় ঢাকা শহরে এখনো টিকে আছে সেটাই বড় ব্যাপার। ওমা, জসিম আমাদের অবাক করে দিয়ে রিকশা থেকে একে একে পাঁচটি কার্টন নামাল। প্রতিটি কার্টনই মাছে ভরপুর। কিশোরগঞ্জ হাওরের তাজা মাছ। জসিম জানাল, সে স্পেশাল অর্ডার দিয়ে আনিয়েছে। আত্মীয়ের বাসায় কি খালি হাতে বেড়াতে আসা যায়?
আমাদের আদর-আপ্যায়নে জসিম আনন্দে গদগদ। আমরাও বেশ তৃপ্ত। যাক, অন্তত বেড়ানোর একজন মানুষ পেলাম। বিদায় নেয়ার সময় বউ কিছু টাকা জসিমের হাতে গুজে দিতে চেয়েছিলেন। সে আপত্তি জানাল। বলল, অন্য আরেক দিন এসে খাসির গোশত খেয়ে পুষিয়ে নেবো। সবাই মুগ্ধ হয়ে গেলাম তার নির্লোভ আন্তরিকতা দেখে।
জসিমের চাকরির ব্যাপারে কয়েক জায়গায় কথা বলেছি। অচিরেই একটা চাকরি জুটে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ওর জন্য কিছু করতে পারলে ভালো লাগবে আমার। একদিন ফোন দিয়ে জানাল তার মা অসুস্থ। গ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে চিকিৎসার জন্য। দ্রুত অপারেশন করতে হবে। টাকা লাগবে বিশ হাজার। আমি সাত-পাঁচ না ভেবে ওর বিকাশ নম্বর নিলাম। অফিস থেকে ফেরার পথে টাকাটা পাঠালাম। সে বলল, কয়েক দিনের মধ্যে টাকাটা ফেরত দিয়ে দেবে।
তাই হলো। ১০ দিনের মধ্যে টাকা ফেরত দিলো জসিম। মনে হলো ও যেন আসমানের ফেরেশতা। এ যুগে এমন মানুষ আছে! টাকা দেয়ার সময় বউয়ের সাথে পরামর্শ করে দিয়েছিলাম। বউয়ের কিছুটা অমত ছিল। এখন টাকা ফেরত পাওয়ার ঘটনায় সে যারপরনাই অভিভূত। জসিমকে ডেকে আনলাম বাসায়। আদর-আপ্যায়ন করলাম। আগের চেয়ে যাতায়াত আরো বেড়ে গেল তার।
একদিন আমার অফিসে এলো জসিম। খুব জরুরি একটা কথা বলবে বলে। ক্যান্টিনে বসলাম। সে বলল, চিন্তা করছি চাকরির পেছনে না ঘুরে ছোটখাটো ব্যবসা করব। আমি বললাম, কিসের ব্যবসা? জসিম বলল, কফি শপের। ধানমণ্ডি ইউল্যাবের সামনে একটা চায়ের দোকান ছিল। দোকানটা খালি হবে। ওখানে ভ্রাম্যমাণ কফি শপটা দিতে পারলে ভালো উপার্জন হতো। অফিস শেষে ওকে নিয়ে ইউল্যাবের সামনে গেলাম। দোকানটা একেবারেই ছোট। তবে দেখে বুঝলাম, শুধু ইউল্যাবের স্টুডেন্টরা ভিড় করলেই যথেষ্ট।
কত টাকা লাগবে? জসিম জানাল লাখ দুয়েক। সে পঞ্চাশ হাজার জোগার করতে পারবে। আমি বললাম, বাকি টাকার দায়িত্ব আমার। তুমি ব্যবসা সাজানোর পরিকল্পনা করো। জসিম বেঁকে বসল, শর্ত আছে একটা।
কী শর্ত?
আপনার দেয়া টাকা ফেরত নিতে হবে। আমি বললাম, সেটা পরে দেখা যাবে।
না পরে না, আপনি শর্ত মানলে তবেই আমি আপনার কাছ থেকে টাকাটা নেবো।
আমি বললাম, ঠিক আছে।
জসিম ফোনে জানাল ব্যবসায় শুরু করেছে। ব্যবসার শুরুটাতে আমি থাকতে পারিনি। অফিসের কাজে নাটোর থাকতে হয়েছিল পনেরো দিন। ঢাকায় পা দিয়েই ভাবলাম জসিমের কফি শপে এক কাপ কফি খেয়ে যাই। কফি শপের কাছাকাছি গিয়ে দেখতে পেলাম আলিশান কারবার। চোখ ধাঁধানো লাইটিং, বসার জায়গা সবই চিত্তাকর্ষক। কাউন্টারে একজন বসে আছে। জসিম নেই। জিজ্ঞেস করলাম জসিম কই? কাউন্টার বলতে যিনি ম্যানেজার তিনিই ওয়েটার। আমার দিকে ব্যস্ত চোখে তাকিয়ে বললেন, কোন জসিম? আমি বললাম, দোকানের মালিক জসিম। লোকটি বলল, কী বলছেন এসব? আমিই তো দোকানের মালিক।
লোকটির সাথে কথা বলে জানতে পারলাম জসিম কফি শপ দেয়নি। সাথে সাথে জসিমকে ফোন দিলাম, তুমি কোথায়? জসিম বলল, আমি কফি শপে।
কফি শপে মানে? আমি তো তোমার কফি শপে দাঁড়িয়ে আছি।
ও, আমি এখন মহাখালীতে প্রতিষ্ঠিত হওয়া নতুুন একটি কফি শপে বসে নতুন আরেকটি ধান্ধায় আছি। নিজের মেধা ও শ্রম দেয়ার পাঁয়তারা করছি আপনার মতো আরেক নতুন মক্কেলের পেছনে। আপনি ডিজিটাল যুগের মানুষ হয়েও এনালগ ফাঁদে পা দিয়েছেন তা জানানোর জন্যই এতদিন ফোন নম্বরটি খোলা রেখেছিলাম। আজ থেকে বন্ধ করে দিচ্ছি। আর হ্যাঁ, ঢাকা শহরে বসবাস করেন। আরো স্মার্ট হন।


আরো সংবাদ



premium cement
সাটুরিয়ায় প্রশান্তির বৃষ্টি চেয়ে সালাতুল ইসতিসকা আদায় ইরান নিয়ে মার্কিন হুঁশিয়ারি পাকিস্তানকে গাজায় গণকবরের বিষয়ে ইসরাইলের কাছে ‘জবাব’ চেয়েছে হোয়াইট হাউস দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন করা হলে হামাস অস্ত্র ছাড়তে রাজি শনিবার থেকে শুরু গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা, প্রস্তত জবি ক্যাম্পাসগুলোতে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেন বাইডেন: মুখপাত্র নোয়াখালীতে ইসতিসকার নামাজ আদায় জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব থাকবে বান্দরবানে বৃষ্টির চেয়ে চোখের পানি ফেলে বিশেষ নামাজ চকরিয়ায় যুবককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ৭ উপজেলা নির্বাচনে ব্যর্থ হলে গণতন্ত্র ক্ষুণ্ন হবে: সিইসি

সকল