২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জীবন একটি খোলা বই

-

১৯৯৩ সালের ১২ নভেম্বর মঙ্গলবার বৃষ্টিমুখরিত দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলাম ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক শহর কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে। পারিবারিকভাবে আমার অবস্থান, মা-বাবার সাত ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে আদরের, সবচেয়ে ছোট ছেলে। সংসারে সবাই বেঁচে আছি, কেবল মা নেই। ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্যান্সার নামক যম মাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করে দেয়।
ঐতিহাসিক বীর ঈশা খাঁর দ্বিতীয় রাজধানী জঙ্গলবাড়ি ও মনোরম দৃশ্যধারক নরসুন্দা নদীর সুখ ছুঁয়ে আমার বেড়ে ওঠা। খেলার মাঠ ছাড়া শৈশবে আমি ছিলাম খুবই লাজুক ও চাপা স্বভাবের। এখনো তা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। লাজুকতার কারণে প্রাপ্তির চেয়ে বঞ্চনার পাল্লাই ভারী। তাও অসন্তুষ্ট নই। না পেতে পেতেও জীবনে কম তো পাইনি!
উল্টোস্রোতে পথচলা মানুষ আমি। যুদ্ধই যার শক্তিশালী ও একমাত্র হাতিয়ার। বেঁচে থাকার জন্য কঠিন সংগ্রাম করেছি, করছি। নিজের সাথে, পরিবারের সাথে, সমাজ-রাষ্ট্রের সাথে প্রতিনিয়ত, এমনকি একাধিকবার চোখ রাঙিয়েছে মৃত্যুও। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আর অসংখ্য মানুষের ভালোবাসায় ভরপুর আমার জীবন।
স্কুলে প্রাইমারি, মাদরাসায় দাখিল আর কলেজে শেষ করেছি অনার্স-মাস্টার্স। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়লেও আবাসিক ছাত্রদের মতো থেকেছি মাসের পর মাস। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছি, চাকরি করেছি মেডিক্যাল কলেজেও। সে হিসেবে একাডেমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার বেশ নাদুসনুদুস তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তা ছাড়া জীবন বাস্তবতা ও প্রকৃতির শিক্ষা তো আছেই!
ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও বর্তমানে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিয়েছি। নিয়মিত গল্প, কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ, ফিচার লিখছি দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে। প্রথম সারির এমন একটি পত্রিকাও বাকি নেই যেখানে আমার লেখা ছাপা হয়নি। আছে বিভিন্ন সাহিত্য সাময়িকীও।
২০১৭ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘পোড়া ইটের দেহ’ ও ২০১৯ সালে আসে ‘যুগল প্রেমের সোতে’। ২০২০ সালে বের হয়েছে প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘শেষ বিকেলের গল্প’। এটি ইতোমধ্যে গল্প বিভাগে পাণ্ডুলিপি পুরস্কার পেয়েছে। একটি উপন্যাস লেখার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই সব সৃজনশীল কাজের সুবাদে সম্মান, সম্মানি ও পরিচিতির পাশাপাশি পেয়েছি সাধারণ মানুষের ভালোবাসা। এই ভালোবাসাটাই আমাকে বড় তৃপ্তি দেয়। এই ছোট্ট জীবনে আর কী চাই!
আমার রোমান্টিক প্রেমিক হৃদয়ের আবেগ-অনুভূতিজুড়ে সদা বিরাজমান বিশ্বনন্দিত লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর মন যখন বিদ্রোহ করে ওঠে, তখন হয়ে উঠি কাজী নজরুল। তবে নিরেট কবিতা বলতে আমি জীবনানন্দ দাশকেই বুঝি। নতুন বিচরিত কথা সাহিত্যে এখনো আমার কোনো আইডল নেই।
যাদের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা হয়েছে, কোনো কারণে যোগাযোগের ঘাটতি থাকলেও তাদেরকে আমি যদিও প্রকাশ করা হয় না, সব সময় অন্তরে লালন করি। সৃষ্টিশীল অনুভূতিপ্রবণ মানুষের মনে যে অন্তহীন হাহাকার, অতৃপ্তি, দহন ও দ্রোহ থাকে আমার মধ্যেও তা আছে। কোথাও ভালোবাসা পেলে বারবার ছুটে যাই। কেউ পছন্দ না করলে ভুলেও তার ধারধারি না। খোলা বইয়ের মতো জীবন আমার মানুষের সামনে মেলে রেখেছি। কারণ মানুষ ও প্রকৃতিই আমাকে বেশি টানে।

 


আরো সংবাদ



premium cement