১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
অ ব কা শ ভা ব না

একাকী নদীর সাথে

-

জীবন এখন যান্ত্রিক। জীবনে অবসর শব্দটির আর জায়গা নেই। সেখানে দখল করে নিয়েছে ব্যস্ততা। ক্ষণে ক্ষণেই স্মৃতির পটে হানা দেয় ফেলে আসা স্নিগ্ধ প্রভাত। আজো যথানিয়মে পশ্চিম আকাশে গোধূলী আভা ছড়ায়। পূর্বাকাশে প্রভাতের স্নিগ্ধতা দেখা যায়। কিন্তু সেই আগের মতো প্রভাতের স্নিগ্ধ আর কোমল পরিবেশ উপভোগ করার অবসর মেলে না। অথচ আগে রোজ প্রাতঃভ্রমণে নদীর পাড়ে গিয়ে বেশ খানিকটা সময় অবসর উপভোগ করে নিতাম। নদীর জলে সূর্যের ছায়া দেখতাম। আর মনের ভেতর কাব্যের মালা গাঁথা শুরু করে দিতাম। এখন প্রাতঃভ্রমণের জন্য সীমিত সময় যদিও বের করতে পারি কিন্তু তা নিজের মতো করে আনন্দময় অবসর হয়ে ওঠে না। এখন প্রতিটি মুহূর্ত কাটে পার্থিব জীবনে টিকে থাকার লড়াইয়ের মধ্যে। দৈনন্দিন গতানুগতিক কিছু কাজ আগেও ছিল! তার মধ্যেই কিছু অবসরও ছিল এখন জীবনে ভিন্নতা এসেছে, আর এই ভিন্নতার জীবনে টিকে থাকার লড়াইয়ে দিবানিশি অতিবাহিত হচ্ছে। বহু অবসরের প্রহর জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। বর্তমান প্রতিটি প্রভাতে অনুভব করি ফেলে আসা প্রভাতগুলো কত স্নিগ্ধ ছিল! কত মূল্যবান ছিল! বাস, ট্রেন, ইস্টিমার ইত্যাদি ব্যবহারে যেমন বিরতি দিতে হয়, ফুয়েল ভরতে হয়, তেমনি প্রতিটি মানুষের জীবনেই প্রয়োজন অবসর। অবসর সময়টুকুও একেকজন একেকভাবে কাটাতে পছন্দ করে। তবে নদী আমায় খুব টানে। সুযোগ পেলেই আমি নদীর ধারে চলে যাই। একাকী নদীর সাথে, নীরবে বয়ে চলা জলের সাথে হয় আমার নীরব আলাপন। আর লেখালেখির খানিকটা অভ্যাস যেহেতু আছে তাই চেষ্টা করি কিছু লেখার। কবিতার ক্ষেত্রে জীবনানন্দ, তবে পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের কবিতাও আমায় বেশ টানে! আগে পরিবার, বন্ধু-বান্ধবী সবাইকে নিয়ে হইচই করে ঘুরে বেড়াতে, গল্প-আড্ডায় সময় কাটাতে ভালোবাসতাম। সব আত্মীয় স্বজনের সাথে যোগাযোগ রাখা, সবার খোঁজখবর নেয়ার মধ্যেও এক ভালোলাগা অনুভব করতাম। অবসর পেলেই সবাইকে ফোন দিতাম। কথার ছলে কখন যে অবসর কেটে যেত টের পেতাম না! এখন আর সেসব হয় না, প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কথা বলা হয় না। বৈশ্বিক করোনাকালে সবকিছুই স্থবির হয়ে গেছে। এখন কিছুটা অলস সময় পড়ে থাকলেও সেগুলো কাটে বুকের ভেতর স্বজন হারানোর যন্ত্রণার অনুভূতিতে, চারিদিকের শূন্যতার হাহাকারে। বিয়োগান্তক বিষে বিধ্বস্ত মন। সারাক্ষণ ভাবি কখন ফিরে পাবো একটি শঙ্কামুক্ত, করোনামুক্ত স্নিগ্ধ প্রভাত। করোনার সময় যেহেতু ঘরে থাকাই নিরাপদ তাই অবসর কাটাতে গৃহকোণে করেছি সবুজের আয়োজন। বারান্দায় টবে ফুল ফল গাছ ও সবুজ শাকসবজি চাষ করেছি, এসব পরিচর্যায় সময় কাটে। নিজ হাতে লাগানো গাছে যখন ফুল ফোটে ফল ধরে আহ! কি যে ভালো লাগে। জীবনের সাধারণ ব্যস্ততা না থাকলে অবসর প্রাপ্তির উপলব্ধি হয় না। তাই পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষের কর্মব্যস্ততার ফাঁকে ফিরে আসুক প্রত্যাশিত আনন্দময় অবসর। ফিরে আসুক স্নিগ্ধ প্রভাত। সেই কামনা করছি অহর্নিশ।


আরো সংবাদ



premium cement