২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

অতিথি পাখির অভয়ারণ্য বাংলাদেশ

-

কোনো অঞ্চল যখন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে ওঠে পাখিরা তখন দেশান্তরী হয়। হয় পরিযায়ী বা অতিথি পাখি। আমাদের এই সবুজ পৃথিবীতে পাখি আছে প্রায় পাঁচ লাখ প্রজাতির। এই পাঁচ লাখের মধ্যে বাংলাদেশে বসবাস করে ৭৪৪ প্রজাতির পাখি। এই ৭৪৪ প্রজাতির মধ্যে ৩০১টি বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করে বলে এদের ‘আবাসিক’ পাখি বলা হয়। খণ্ডকালীন সময় নিয়মিতভাবে আসে ১৭৬টি পাখি, যা বাংলাদেশের অতিথি পাখি হিসেবে গণ্য। অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত শীতকালে পাখিদের নিজ দেশে দেখা যেত না। এ থেকে মানুষের ধারণা হয় শীতকালে পাখিরা পানির নিচে ডুব দিয়ে বা সরীসৃপের মতো গর্তে বাস করে। মানুষের এমন ধারণা ভুল প্রমাণ করেন বিজ্ঞানীরা। তারা দেখেন যে, শীতকালে পাখিরা আসলে দেশান্তরী হয়।
এখন শীতকাল। উত্তর মেরু থেকে হিমালয় পেরিয়ে অতিথি পাখি আসা শুরু হয়েছে। পৃথিবীর অন্য দেশগুলোতে যেমন- ইংল্যান্ডের নর্থ হ্যামশায়ার, সাইবেরিয়া, আসাম, ফিলিপিন্স, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ফিনল্যান্ড, এন্টার্কটিকা, চীনের লাদাখ অঞ্চলে শীত যখন মাইনাস শূন্য ডিগ্রিতে নেমে আসে, যখন গাছের পাতা ঝরে যায় শীতে, খাবারের প্রচণ্ড অভাব দেখা দেয়, শীতের প্রকোপে পাখির দেহ হতে পালক খসে পড়ে, প্রচণ্ড তুষারপাতে সাদা হয় যখন সমস্ত সবুজ বনানী, প্রকৃতির নানান বিরূপ আচরণে তখন সে দেশের পাখিগুলো যেসব দেশে অপেক্ষাকৃত কম শীত এবং খাদ্য ও নিরাপত্তার অভাবে সেসব দেশ ছেড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি হয়ে আসে। নাতিশীতোষ্ণ দেশ হিসেবে এসব পাখি বাংলাদেশকে বেছে নেয়। বাংলাদেশে অতিথি পাখি আসার সিজন সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর সময় অবধি। তবে ডিসেম্বর-জানুয়ারি এই দুই মাসে সবচেয়ে বেশি পাখি আসে বাংলাদেশে।
সৃষ্টিগতভাবে পাখিদের শারীরিক গঠন খুব মজবুত। তাই অতিথি পাখিরা ৬০০ থেকে ১৩০০ মিটার উঁচু আকাশসীমা দিয়ে উড়ে আসে। বড় পাখিরা ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার অনায়াসে উড়তে পারে। আর ছোট পাখিরা উড়তে পারে ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার। দিনে-রাতে এরা প্রায় ২৫০ কিলোমটার উড়তে পারে। কিছু পাখি বছরে প্রায় ২২ হাজার মাইল পথ অনায়াসে পাড়ি দিয়ে চলে আসে বাংলাদেশে। এমন এক জাতীয় অতিথি পাখির নাম সামুদ্রিক শঙ্খচিল। এ পাখি প্রতি বছর উত্তর মেরু অঞ্চল হতে এই দূরত্ব অতিক্রম করে চলে আসে দক্ষিণ মেরুতে।
শীতের প্রচণ্ড প্রকোপ থেকে বাঁচতে আমাদের দেশে অতিথি হয়ে আসে যেসব পাখি যেমন- ডেলা ঘেনজি, সোনাজঙ্গ, খুরুলে, বনহুর, মানিকজোড়, চিনাহাঁস, পিয়াংচিনা, রাজহাঁস, বালিহাঁস, প্রোভায়, নাইরাল ল্যাঙ্গি, গ্রাসওয়ার, নাইবাল, হারিয়াল, ভোলাপাখি, চখাচখি, বুরলিহাস, বারহেড, নারুদ্দি, সিরিয়া পাতিরা, কবালি, যেনজি, গেন্ডাভার ও গাংকবুতর অন্যতম। এসব পাখিদের অনেক পাখি বাংলাদেশে পুরো শীতকাল কাটিয়ে দেয়। বাংলাদেশের নানা প্রান্তে শীতের অতিথি পাখি দেখা যায়। এমন একটি স্থানের নাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ছোট বড় মিলিয়ে এখানে প্রায় ১৭টি লেকের মধ্যে ২০-২৫ প্রজাতির অতিথি পাখি আসে। দুই ধরনের পাখি এখানে দেখা যায়। এক ধরনের পাখি ডাঙ্গায় ও আরেক ধরনের পাখি বিশ্রাম নেয় পানিতে। এদের বেশির ভাগই হাঁস জাতীয় পাখি। ১৯৮০ সাল থেকে মিরপুর চিড়িয়াখানার লেকে অতিথি পাখির দেখা মিলছে। অতিথি পাখির দেখা মিলছে বাংলাদেশের নীলফামারীর নীলসাগর, নিঝুম দ্বীপ, হাকালুকি হাওর, বরিশালের দুর্গাসাগর, সিরাজগঞ্জের হুরা, টাঙ্গুয়ার হাওর, হাটল হাওর ও সোনাদিয়া ইত্যাদি অঞ্চল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হতে আসা অতিথি পাখির অবকাশ যাপনের অভয়ারণ্য হয়ে ওঠেছে আমাদের এই বাংলাদেশ। দেখতে দেখতে শীতপ্রধান দেশগুলোতে ফিরে আসে বসন্ত। গলতে থাকে বরফ। প্রকৃতি ফিরে পেতে থাকে সজীব প্রাণ। অতিথি পাখিদের আবার শুরু হয় ওড়ার পালা। হাজার হাজার মাইল ওড়ে। উড়তে উড়তে ফিরে আসে জন্মভূমিতে। মজার ব্যাপার হলো দিনরাত এত উড়াউড়ির মধ্যেও অতিথি পাখিরা যখন ফিরে আসে নিজ নিজ দেশে তখন ঠিক ঠিক তাদের বাড়িটি চিনে নিতে কখনো ভুল করে না। এ এক অদ্ভুত ব্যাপার! হ

 


আরো সংবাদ



premium cement