২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভিক্ষা মাগছো অরিন্দম হাতে

-


তুমি বাপু বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা, স্বজনহারাÑ তুমি আমাদের গর্ব, স্বাধীনতার প্রতীক। পরিজনদের মরতে দেখেছ চাক্ষুষ। হানাদারের দল ধরল তোমার বোনকে, বারান্দাতেই কাপড় ছিঁড়ে করল ধর্ষণ। পাশবিকতার চূড়ান্ততায় জ্ঞান হারাল সে। বোনের সে জ্ঞান ফিরল না আর।
তোমার বাবা সে কি বোকা, পাগল হয়েই গিয়েছিলেন...! (মেয়ের আর্তচিৎকার) রুধতে গিয়ে পশুর ছোবল বুলেট বোমার ফাঁদে নিজেই দিলেন প্রাণ। জন্মাবধি তোমার মা তো প্রবল স্বামীসেবক। রক্তস্নাত পতির ছিদ্র বুকে ঝাঁপ দিলেন তিনি। তিনটে তাজা বুলেটÑ সহমরণের নব নমুনা।
বউটি তোমার ধূর্ত বটে এবং স্বার্থপর। জানতে পেল সতীত্ব তার নষ্ট হবে নিশ্চিত, আগেভাগেই ঘরে ঢুকে দ্বারে দিলো ছিটকিনি। ভাঙল যখন দুয়ারখানা হানাদারের পদাঘাতেÑ দেখল তারা শিকার তাদের ঝুলে আছে ছাদে, গলায় দড়ি প্রাণ দিয়েছে মানটি তবু দেয়নি। তোমার যোগ্য ছেলে, সাহস আছে বলতে হবে। জুতো ছুড়ে মেরেছিল পাকসেনাদের পিঠে, ফলাফলে মরতে হলো বেয়নেটের খোঁচায়।
তোমার একটা ভাই ছিল না একটু হাবাগোবা...? হানাদারের খায়েশ, আয়েশ করে মারবে তাকে। গাড়ি চাপিয়ে ক্যাম্পে নিলো বাঁধতে বকুল ডালে। লাত্থি ঘুষি, লাঠিপেটাÑমজাই অন্যরকম...!
যাওয়ার বেলায় বাড়ির ভিটায় উসকে দিলো আগুন। সেই আগুনে ঘটল একটা বিস্ময়কর কাণ্ড। তোমার খুকি মায়ের মতোই বেজায় রকম চালাকÑ ভীতির তোড়ে লুকিয়ে ছিল আলমারিটার পাশে। আগুন তাকে দেখিয়ে দিলো চির অজানার পথ।
নিজের হাতে দেশকে করলে স্বাধীন, শত্রুমুক্ত। যদিও যুদ্ধকালে খুইলে একটা পা। বাহুর পেশিগুলোর চিহ্ন বহন করছে আজো। বন্দুক চালানো আঙুলগুচ্ছ আঁকড়ে ধরল লাঠি। ল্যাংড়া মানুষ, কে-ই বা দেবে কাজ, কে-ই বা দেবে খাদ্যÑ বাধ্য হয়েই ভিক্ষা মাগছ অরিন্দম হাতে। যে দেশ তুমি রক্ষা করলে সেই দেশেরই বাসিন্দাদের অট্টালিকার ফটক পাশেÑ অবজ্ঞা আর করুণা কুড়ানো, এই কি তুমি চেয়েছিলে...?
তুমি বাপু বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা, জেনেছো স্পষ্টÑ তুমি আমাদের গর্ব, স্বাধীনতার প্রতীক। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement