১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জীবনে চাই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি

-

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা পজিটিভ চিন্তাভাবনা করতে পারেন না। সব সময় নেগেটিভ ভাবনা তাদের মনে মধ্যে চেপে বসে থাকে। তরুণ বয়সটাতে সবচেয়ে বেশি দরকার পজিটিভ থিংকিং বা ইতিবাচক মনোভাব। এটা বাজারে টাকা দিয়ে কিনতে পাওয়া যায় না। আবার জোর করে কারো মনে ঢুকিয়েও দেয়া যায় না। এটা নিজের মধ্যে নিজেকেই সৃষ্টি করতে হবে নানা চর্চার মাধ্যমে। একবিংশ শতাব্দীর এই বিশ্বায়নের যুগে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা প্রায়ই বেসামাল হয়ে পড়ি। কখনো মনে হয় সব কিছুর ডেডলাইন মেনটেন করাই যেন আমাদের একমাত্র ব্রত। কোনোভাবে যদি এই ইঁদুর দৌড়ে পিছিয়ে পড়ে, তখনই তাকে গ্রাস করে নেয় একরাশ হতাশা আর বিষণœতা। কিন্তু তাই বলে কি এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো উপায় নেই? আছে, অবশ্যই আছে। বিষণœতা, হতাশা, স্ট্রেস জাতীয় সমস্যার সমাধানে একটাই মোক্ষম অস্ত্রÑ পজিটিভ থিংকিং বা জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।
আমাদের জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ, প্রতিকূলতাকে জয় করার একটাই মূলমন্ত্র পজিটিভ থিংকিং। মনে হতে পারে বিষয়টি বলা সহজ, কিন্তু করা কঠিন। আসলে তা নয়। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির জন্য আপনার কেবল একটি উপাদান থাকা চাই। আর তা হলো আত্মবিশ্বাস। আলোকোজ্জ্বল বর্ণময় জীবনের জন্য এই ইতিবাচক মনোভাব খুবই জরুরি। কারণ এটি আপনার জীবনকে ম্লান, বিবর্ণ হতে দেয় না। আপনার পজিটিভ চিন্তাধারার বিকাশ ঘটাতে হলে আপনাকেই কিছুটা সচেষ্ট হতে হবে। এখানে কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হলো যার অনুসরণে ভালো সুফল পাওয়া যেতে পারেÑ
নিজের চিন্তাভাবনার ওপর নিয়ন্ত্রণ আনুন। যে ঘটনা আপনার মনে অস্বস্তি সৃষ্টি করছে সেই ঘটনাকে যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করুন। যদি আপনার কোনো দোষ থাকে, তবে সেটি স্বীকার করে নিন এবং পরবর্তীতে আর এমনটি হবে না বলে শপথ নিন।
বন্ধু-বান্ধব, চেনাজানা পরিচিত, স্বজনদের মধ্যে যারা পজিটিভ থিঙ্কার তাদের সাথে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন। আপনাকে নিজের কর্মদক্ষতা বাড়াতে সিরিয়াসলি চেষ্টা করে যেতে হবে। নিজেকে কোনোভাবে সাধারণ নগণ্য না ভেবে আপনার মধ্যে যতটা অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান রয়েছে তা পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে চেষ্টা করতে হবে।
আপনি পজিটিভ থিঙ্কারদের সাথে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন তা সচল রাখতে তৎপর থাকুন। আপনারা প্রত্যেকে অন্যের সহযোগিতায় নিজের আত্মবিশ্বাসের লেভেল আরো উঁচুতে নিয়ে যান। প্রত্যেকে প্রত্যেকের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। একজনের সঙ্কটময় মুহূর্তে যখন ১০ জন পজিটিভ মানুষ পাশে গিয়ে দাঁড়াবে তখন সেই একজনের মধ্যে স্বভাবতই পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হবে।
‘আপনার দ্বারা কিছু হবে না, আপনি একটি অপদার্থ’Ñএ ধরনের চিন্তাভাবনা থেকে নিজেকে সরিয়ে আনুন। এসব ভাবনা আপনাকে পজিটিভ হতে বাধা দেবে তার বদলে আপনি মনে মনে ভাবুন, আমিও এই কাজটি করতে পারব, আমার দ্বারাই সম্ভব এ কাজটি করা।
বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বই আপনাকে নানা রঙের পৃথিবী দেখাবে। সেই নানা রঙের পৃথিবীকে আপনি আপনার মতো করে সাজিয়ে নিতে পারবেন। তাছাড়া বইয়ের মাধ্যমে আপনার জ্ঞান বাড়বে, ফলে যুক্তিবোধ প্রখর হবে। নিজের লক্ষ্য ঠিক করুন। পড়াশোনা, ক্যারিয়ার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে পজিটিভলি ভাবুন। সপ্তাহের শুরুতে নিজের কাজের একটি চেকলিস্ট তৈরি করে নিন। সেই চেকলিস্ট অনুযায়ী কাজ করুন। দিনের শেষে সারা দিনে যা কাজকর্ম করলেনÑ সেটা নিয়ে গভীরভাবে ভাবুন। যে কাজগুলো করতে পারেননি সেটা নিয়ে চিন্তিত না হয়ে যেটা পেরেছেন সেটা নিয়ে চিন্তা করুন। আর যেটা পারেননি সেটা কাল কিভাবে করবেন তা নিয়ে ভাবুন। নিজে নিজে নতুন নতুন কর্মপন্থা নির্ধারণ করুন। নিজের বুদ্ধি বিবেচনা, দক্ষতা অভিজ্ঞতার ওপর আস্থা রেখে আগামী দিনের পরিকল্পনা করুন।
যেকোনো কাজ করতে গেলে আপনি ছেলে কিংবা আপনি মেয়ে, আপনি এটা পারবেন না, অন্যরা এটা পারবে, তেমন চিন্তাভাবনা মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। যে পেশাতেই নিয়োজিত হোন না কেন, সৃজনশীলতা, কর্মদক্ষতা, দায়িত্ববোধগুলোর একটি সুষ্ঠু সমন্বয় ঘটাতে আপনাকে আন্তরিক হতে হবে। পেশা বিবেচনা করতে গিয়ে ছেলেমেয়ের বিভেদ সৃষ্টি করাটা যৌক্তিক নয়। এখন সব পেশাতেই মেয়েরা ছেলেদের মতো ক্ষেত্রবিশেষে ছেলেদের চেয়ে আরো ভালো দক্ষতা দেখাতে পারছে। পেশাগত ক্ষেত্রে মনের মধ্যে নেগেটিভ অ্যাটিচ্যুডকে প্রশ্রয় দেবেন না। ছেলেমেয়ের বিভেদ সংক্রান্ত হীনম্মন্যতায় না ভুগে প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার ধারক হতে হবে আপনাকে। আপনার অ্যাটিচ্যুড অবশ্যই পজিটিভ হতে হবে। মনের মধ্যে বিশ্বাস থাকতে হবেÑ আমি পারব। পজিটিভ অ্যাটিচ্যুড আর বিশ্বাস নিয়ে কাজ করলে যে কেউ যেকোনো পেশাতেই সফল হতে পারবেন। মেয়েদের ব্যাপারে বলতে গেলে এটা বলা প্রয়োজন যে, মেয়েদের মূলত কোনো সমস্যা নেই, আমরাই নিজেরা বরং সমস্যা সৃষ্টি করি। সামগ্রিকভাবে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। তাহলেই পুরো সমাজের দিন বদল হবে। পজিটিভ অ্যাটিচ্যুড যেকোনো সফলতার মূলমন্ত্র’Ñএটা সবসময় মনে রাখতে হবে আপনাকে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই চাই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বিচার। তাহলে দেখবেন আপনার জীবনটা কত সহজ, সাবলীল, মসৃণ হয়ে গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement