২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ল্যাংড়া শালিক

-

ল্যাংড়া পাখিটা আজ তিনটা দিন ধরে সুবহান মিয়ার কবরের উপর পড়ে আছে। মনে হয় সুবহান মিয়ার শোকে পাখিটাও মৃত্যুবরণ করেছে। আন্দার মানিক গ্রামের সুবহান মিয়ার তেঁতুলগাছ তলায় ছোট্ট একটি টংয়ের মতো মুদির দোকান ছিল। সেখানে চাল, ডাল, তেল, মরিচ, চানাচুর, বিস্কুট এগুলো পাওয়া যেত। দোকানটি নেয়ার উদ্দেশ্য ছিল মসজিদের পাশে থাকলে পাঁচবার আজান দেবে আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময়মতো আদায় করা যাবে। এটাই তার কাছে সব চেয়ে বড় কাজ। আর দোকানটা এমনিতেই বসে বসে সময় কাটানোর জন্য। কিন্তু তার সমস্ত চিন্তা সমস্ত স্বপ্ন হলো এই ছোট্ট মসজিদটিকে নিয়ে। কী করে মসজিদটি সুন্দর করা যায়? কী করে বড় করা যায়? মসজিদটা একসময় অনেক বড় হবে। মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে এসে নামাজ পড়বে। চতুর্দিকে পাথর দিয়ে কারুকার্য করা থাকবে। দামি দামি ডাইস থাকবেÑ এগুলো নিয়েই সুবহান মিয়া সারাক্ষণ টেনশন করে। হুম ঠিক তাই হলো তার ইচ্ছে পূরণ হয়ে গেল। মসজিদটা এখন অনেক সুন্দর অনেক বড় পাঁচতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে তার চারদিকে ডাইস আর পাথর দিয়ে নকশা করা হয়েছে। কিন্তু সুবহান মিয়া এখন আর নেই। সুবহান মিয়া তার স্বপ্নের বাস্তবতা দেখে যেতে পারল না! তার আগে সে আল্লøাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছে। প্রত্যেক দিন ফজরের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে এসে দোকানে বসে বসে তাসবিহ জবতো। একদিন ফজরের নামাজ পড়ে দোকানে এসে দেখে টিনের চালের উপর একটি কালো শালিক পাখি বসে আছে। শালিকটি অনেক সুন্দর কিন্তু তার পা একটি খোড়া। পাখিটাকে দেখে তার খুব মায়া হলো এবং সুবহান মিয়া দোকান থেকে কিছু চানাচুর বের করে শালিকটাকে খেতে দিলো। তারপর থেকে শালিকটি প্রত্যেক দিন সকালে এসে সুবহান মিয়ার টিনের চালের উপর বসে থাকে। সুবহান মিয়াও পাখিটির অনেক যতœ করে নিজের সন্তানের মতো। আর মনে মনে ভাবে, কাল কিয়ামতের দিন যদি আমি নাফরমানের জাহান্নামের ফায়সালা হয়ে যায় তাহলে হতে পারে এই পাখিটির উসিলায় আল্লøাহ আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। এভাবে শালিকটি প্রতেদিন সকাল বেলায় সুবহান মিয়ার দোকানে এসে ভিড় করে। দিন চলতে লাগল পাখিটিও প্রতিদিন আসতে লাগল। এভাবে দেখা গেল আস্তে আস্তে পাখির সংখ্যা এক দুই করে আরো বাড়তে লাগল। একসময় পাখির সংখ্যা প্রায় শতাধিক হয়ে গেল। আর সুবহান মিয়া প্রত্যেক দিন সবগুলো পাখিকেই খাবার দিতে লাগল। তারপর হঠাৎ একদিন সুবহান মিয়া অসুস্থ হয়ে মারা যায়। মসজিদের পাশে সুবহান মিয়াকে দাফন করা হয়। কিন্তু পাখিগুলো সুবহান মিয়াকে ভুলতে পারেনি এখনো। প্রভাতের আলোটা ফুটতেই এক ঝাঁক পাখি এসে ভিড় জমায় সুবহান মিয়ার কাছে। কিন্তু এখন আর তারা দোকানে যায় না। সুবহান মিয়ার কবরের উপর বসে বসে কিচিরমিচির করতে থাকে। মনে হয় পাখিগুলো সুবহান মিয়ার শোকে কাঁদে! তাদের ভাষা তো কেউ বুঝে না, তবে এটা বুঝতে পারে পাখিগুলো কী যেন বলতে চায় সুবহান মিয়াকে। আর কবরের মাটিগুলো ঠোঁট দিয়ে সরিয়ে ফেলতে চায়। সুবহান মিয়ার ছোট ছেলে জাহাঙ্গীর দোকানের উপর চানাচুর দেয় খাওয়ার জন্য কিন্তু পাখিগুলো আর চানাচুর খায় না। এভাবে বেশ কয়েকদিন পাখিগুলো আসার পর আস্তে আস্তে পাখির সংখ্যা কমতে থাকে। একসময় দেখা যায় সমস্ত পাখি চলে গেছে। শুধু একটি পাখি কবরের উপর আজ তিন দিন ধরে মরে পড়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখা যায়, এটাই সুবহান মিয়ার সেই ল্যাংড়া শালিকটি যাকে সুবহান মিয়া নিজের সন্তানের মতো প্রত্যেক দিন সকাল বেলায় ফজরের নামাজ পরে চানাচুর দিত।


আরো সংবাদ



premium cement