রাফখাতা
- ইরফান তানভীর
- ১৫ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
কী লিখো সালমা? কী লেখো? দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করার পর সালমা রাফাতের দিকে ঘুরে তাকায়? নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে সে। ডায়েরিতে কী লিখো সালমা? তার মানে রাফাত জানতে চাইবেই, সালমা এবার মুখ সরিয়ে লেখার জন্য আবার উপুড় হলো। কিছু না তো। এটা রাফখাতা। এমনিতেই আঁকিবুকি করছি। শওকত আসবে না? কী বলে সে?
জানি না!
বড়ভাই রাফাতের ঠিক সামনে দিয়ে সালমা দ্রুত পায়ে চলে গেল।
ভোররাত থেকে বৃষ্টি যে শুরু হলো, এখন বাজে বেলা ১১টা। বৃষ্টির মেয়াদ কমার নামগন্ধ নেই। টিনের চাল থেকে জল গড়িয়ে সামনের রজনীগন্ধা বাগানের গায়ে গিয়ে পড়ছে। রাফাতে চোখে সে বৃষ্টি আটকে আছে সড়কের জ্যামের মতো।
ও সালমা, ও সালমা। বেলা পইড়া যাইতাছে। ভাত বসাবি কহন? নাকি আইজ না খাইয়া থাকবি? ওমা! কাইল রাইতের তরকারিটা দেখি নষ্ট হইয়া রইছে। ওয়াক! এদিক দিয়া জামাইর ভাত কপালে আছি নাকি তোর আল্লাই জানে। বদ অইলে থাকব ক্যামনে? আমার অইছে যত জ্বালা। কিল্লাইগা যে খোদায় আমার মরণ দেয় না..
একনাগাড়ে আকলিমা বেগম এতক্ষণ রাগত স্বরে এসব বলে গেলেন। প্রচণ্ড রাগে আকলিমা বেগমের পানের পিক এলোমেলোভাবে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। তিন মেয়ে আর এক ছেলের মধ্যে সালমা ছোট হওয়ায় মা আকলিমা বেগমের আদর আহ্লাদের সব থেকে বেশি ভাগিদার হওয়ার কথা সালমার। সে ভাগ্য কি সালমার আছে? আকলিমা বেগম তো আর তার আপন মা নয় যে, সে তার আদর আহ্লাদ আবদার করবে।
সালমার মনে পড়ে, নিউমোনিয়ায় যখন তার মা সানওয়ারা মারা গেলেন, তার মাস তিনেক পর তার আব্বা আকলিমা বেগমকে বউ করে ঘরে আনেন।
কই রে বান্দী? ওই বান্দীর ঘরের বান্দী! কথা কই যে কানে যায় না? নাকি বয়রা? বান্দী কোনহানকার! তাড়াতাড়ি কলাম, চুলায় ভাত চড়া। খাইতে কম খাসনি?
আকলিমা বেগম আরেক দফা এসে আচ্ছা শাসিয়ে যায়। সালমার কেমন চারদিকটায় শীতাল ঘুটঘুট আঁধারের মতো মনে হয়। মনে হয় আকাশ ভেঙে নেমে আসছে বজ্রপাতের ধ্বনি। সে ধ্বনি এমনই যন্ত্রণাকর, সালমার ভয়ে হাড়মাংস এক হয়ে আসে।
সালমা ত্বরিত চুলোর পাড়ে যেতে তার একবার শওকতকে মনে পড়ে। রাফাত জানতে চেয়েছিল, শওকত আসবে কি না! শওকতের না আসাটাই ভালো। শওকত এসে যদি তাকে ফের নিয়ে যায়, শওকতের পরিবার কি শওকতকে কথা না শুনিয়ে ছাড়বে? শওকতের পরিবারের তো একদম কাটা নিষেধ, এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিতে পারলে তবেই ঘরে আনবে। তা না হলে এই রোগা কালো মেয়েকে কেনই বা তারা রাখবে। আর কথাও তো ছিল এমন। বিয়ে হয়ে গেছে দুই মাস হলো অথচ এখনো টাকার খোঁজ নেই। শওকত অবশ্য ভিন্ন কথা বলেছে। সালমার বাবার যদি এখন দিতে কষ্ট হয়, পরে দিক না। দিলেই তো হবে। আমাদের তো আর ইমারজেন্সি টাকা লাগছে না। শওকতের বোন ছিল, সে হই হই রই রই করে তেড়ে এসে হুঙ্কার দিলো। কি রে শওকত... তোরে কি এ মাইয়া তাবিজ কবজ করছে নেহি? বিষয় তো সুবিধার মনে অয় না।
শওকতের জন্য সালমার হঠাৎ মনটায় কেমন মায়া মায়া অনুভব হয়। লোকটা যেদিন সালমাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিচ্ছিল তার মনটা ছিল কালো মেঘে ঢাকা। শুনো সালমা। তুমি চিন্তা করবা না। আমি দেখি কী করতাম পারি। তুমি কোনো চিন্তাই করবা না। জানোই তো, আম্মার মুখের ওপরে কথা বলার সাহস আমাগোর কারোরই নেই।
আহা কি যে ভালো মনের মানুষ শওকত। সালমার খুব মনে পড়ছে তাকে। শওকত কবে আসবে? সে কি আসবে?
বৃষ্টি কি থামল? নাহ এটাকে ঠিক থামা বলা যায় না। বড়জোর এক মিনিটের বিরতি। রাফাত টেবিলের ওপর রেখে যাওয়া সালমার ডায়েরিটা হাতে নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে সে দেখল, রাফখাতার মতো আঁকিবুকি। কাটাছেঁড়া কিছু বিক্ষিপ্ত বাক্য। রাফাত মনোযোগ দিয়ে সে বিক্ষিপ্ত বাক্যগুলো জোড়া লাগানোর চেষ্টা করছে। সালমা শওকতকে কী যেন বলতে চাচ্ছে। কী লিখতে চেয়েছে সালমা? আরো ভালো করে পরখ করে, যদি না যেতে পারি তোমার কাছে, আমাকে ভুলে যাবা শওকত? রাফাত সালমার রাফখাতা ‘ডায়েরিটা’ সেখানে রেখে সালমার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। সালমার ভেতরে গলা ছেড়ে কেউ কাঁদছে। সালমা নিজেকে সামলাতে পারে না। প্রবল ভূমিকম্পে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হয় সালমার।
আকলিমা বেগম আবার কেন যেন ডাক দেন সালমাকে। সালমা মনের রাফ খাতায় অযাচিত কিছু টুকে নেয়। হ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা