২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নতুন প্রজন্ম ও সংস্কৃতি

-

বোধ হওয়ার পর থেকে নানা অমিল আর বিড়ম্বনার মধ্য দিয়ে নিজেকে এই পর্যন্ত টেনে এনেছি। হয়তো টেনে যেতে হবে আজীবন। ছোটবেলায় পড়েছি, অ-তে অজগর, আ-তে আম, ই-তে ইঁদুর, ঈ-তে ঈগল ইত্যাদি। একই সারিতে অজগর, আম, ইঁদুর এবং ঈগলের মতো দেশী-বিদেশী উপকরণের সমাহার বিদ্যাগ্রহণের। প্রথম ধাপেই আমাকে আতঙ্কিত করে। ব্যক্তিগত অভিপ্রায়; শুরুটা আমার মতো করে হলে আমি আমার মতো থাকতে পারতাম। দাওয়াতে গিয়ে ঝোল আর স্যুপের মাখামাখিতে কোনোটির স্বাদই বুঝলাম না। আমাদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার মতো। অজগর আর আমের ছোট মাথার সমীকরণ; আম দেখেনি এমন বাঙালি আমি দেখিনি, আর অজগর দেখেছে এমন বাঙালি খুব কম দেখেছি। যা আমাদের নেই। তা যদি কেউ না দেখে তবে তাতে দোষের কিছু নেই। আর যারা যত্রতত্র অজগর দেখে, তারা অনেক কিছুই দেখে। অন্যকে দেখানোর চেষ্টা করে, অন্যভাবেও দেখানোর চেষ্টা করে। তাদের দেখানোটা হলো অ-তে অজগর। জাত গোখরাও নয় আবার জলঢোঁড়াও নয়। কারণ তারা ভালো করেই জানে, গোখরা মানব সভ্যতার হুমকি আর জলঢোঁড়ায় কোনো কাজ হয় না। এমন বিড়ম্বনার সুরাহা স্বরূপ দূর দেশ থেকে এমন একটাকে জোগাড় করা হয়েছে যা জাত গোখরা এবং জলঢোঁড়ার মাঝামাঝিতে পরে। অ, আ’র পাঠ চুকিয়ে যখন ই, ঈ-তে তখন, অক্ষীযুগল। গোলকের মতো। দূর দেশের ঈগল আমার পাঠ্যবইয়ের প্রথম সারিতে কেন! অবশ্য তৎক্ষণাৎ ছোট মাথায় একটা বড় সমাধান করে ফেলি। যদি একই সারিতে অজগর, আম, ইঁদুর, ঈগল থাকে তবে অজগর খাবে ইঁদুরকে, আর ঈগল অজগরকে ধরতে নামবে নিচে। তারা একে অপরের আঘাতে হবে ধরাশায়ী। নিঝা শুধু আম। যা বছরে একবার হয়। অর্থাৎ সিজনাল। আমাদের চলাফেরা বা কালচার ঠিক একই রকম। মিশ্র এবং সিজনাল। পাঠ্যপুস্তক হাতে নিয়ে যদি কোনো শিশু বুঝতে পারে, শিক্ষার শুরু আতঙ্ক কিম্বা হাওলাত দিয়ে; তবে সে শিক্ষার পরিধি তার ভেতরে কতটা বিস্তার লাভ করতে পারে। আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রথম ধাপ যদি ধার করা অবয়বের প্রতিচ্ছবি হয় তবে সে শিক্ষার ভিত কাউকে বহন করার মতো মজবুত নয়। আমরা যা শিখি বা শিখছি তা প্রতিটি পর্যায়ে নিজ অবয়ব থেকে ক্রমে দূরে সরে যাচ্ছে।
বৃক্ষের ডালে কলম করে নতুন বৃক্ষের জন্ম দেয়া হয়; বৃক্ষের মূল কেটে নয়। যদিও বা আমরা জেনে গেছি, মর্ম-মূলহীন বৃক্ষের ডালপালা এবং শাখায় আমরা সবাই দাঁড়িয়ে। এটা আমাদের হতাশা নয়, প্রাপ্তি। কালচারের ক্রিয়া অনানুষ্ঠানিক এবং উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সম্মিলিত প্রকাশ। কিন্তু (আনুষ্ঠানিক শিক্ষা) পুঁথিগত বিদ্যার প্রথম ধাপ থেকে আমাদের অবচেতন মনে মিশ্র ধারণার অনুশীলন শুরু হয়ে যায়। আমরা পয়লা বৈশাখে এক দিন পান্তা-ইলিশ খেয়ে বাঙালি হই আর সপ্তাহে একদিন জুমায় গিয়ে ধর্মের খাতায় নাম লেখাই। যে বাঙালিয়ানার জন্য আমরা নিজেদের একদিন বন্দুকের ব্যারেলের সামনে নিজেদের দাঁড় করাতে দ্বিধা করিনি আজ সে আমাকে দেখতে চোখে বাইনুকুলার লাগাতে হয়। দেশী বৈশাখের পান্তা-ইলিশ কবে যে পাশ্চাত্যের নরম কেকে মাখামাখি হয়ে গেছে আমরা তা বুঝতে পারিনি। নিলামের ইলিশ আর বৈশাখের কেক বর্তমান বর্ষবরণের এক মিশ্র ঐতিহ্য। যে নবপ্রজন্ম এসব তাদের কৃষ্টি কালচারের অংশ মনে করে, তাদের উদযাপিত বর্তমানে সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘আউটডোর বার্থডে’ (উদ্দেশ্য ব্যক্তিক আয়োজনের ওপর নির্ভরশীল)। এমন উৎসবের উৎপত্তি জানতে হলে আমাদের আবারো ফিরে জেতে হবে অ, ঈ-তে। তাই এটা ইতি। আমরা আজ বড়ই আনন্দিত। বাংলা সংস্কৃতির বাহুতলে কাতুকুতুর মতো হোলি উৎসবের নড়াচড়া আমাদের নতুন প্রাপ্তি। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement