১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাংলার পাখি বুলবুলি

-

অতি পরিচিত দুঃসাহসী এক পাখি। বুলবুলি হিসেবে এরা সুপরিচিত। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় পাখি। এই এলাকার বাইরে চীনেও এদের দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, মিয়ানমার ও ভিয়েতনাম বাংলা বুলবুলির স্থায়ী আবাস।
এ ছাড়া আরো বিভিন্ন দেশে পাখিটি অবমুক্ত করা হয়েছে। ১৯০৩ সালে ফিজিতে চুক্তিবদ্ধ ভারতীয় শ্রমিকদের মাধ্যমে পাখিটি ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৪৩ সালে সামোয়ায় পাখিটির নবহমধষবহংরং উপপ্রজাতি অবমুক্ত করা হয়েছে। ১৯১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে পাখিটি অবমুক্ত করা হলেও ১৯৪২ সালের পর এখানে আর তাদের দেখা যায়নি। এ ছাড়া বাহরাইন, ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়া, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নিউ ক্যালিডোনিয়া, ওমান, কাতার, টোঙ্গা ও যুক্তরাষ্ট্রেও এদের অবমুক্ত করা হয়েছে।
পৃথিবীতে এদের মোট সংখ্যা কত তা এখনো অজানা। বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সে কারণে আইইউসিএন এই প্রজাতিটিকে খবধংঃ ঈড়হপবৎহ বা ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। বাংলার শহর-নগর-গ্রামেগঞ্জে প্রচুর বাংলা বুলবুলি দেখা যায়। বাংলা সাহিত্যের গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও লোকগাথায় বারবার এসেছে এ পাখিটির নাম।
আমাদের অতিপরিচিত বাংলা বুলবুল ছোট বাদামি রঙের এক বৃক্ষচারী পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ২০ সেন্টিমিটার, ডানা ১০ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ২ সেন্টিমিটার, লেজ ৯.৫ সেন্টিমিটার ও পা ২.২ সেন্টিমিটার। ওজন ৪২ গ্রাম। বাংলা বুলবুলের ঠোঁট দূর থেকে কালো দেখালেও তা আসলে কালচে-নীল। চোখ কালচে বাদামি। পা ও পায়ের পাতা সামান্য বাদামি-কালো। মুখের ভেতরটা ধূসর, বেগুনি ও হলুদে মেশানো। স্ত্রী ও পুরুষ বুলবুল দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ অপেক্ষাকৃত হালকা। মাথার কালো ঝুঁঁটি দেখে খুব সহজেই এদের শনাক্ত করা যায়। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা কালো বা কালচে-বাদামি। পালকের গড়ন আঁশের মতো বলে এমনটা হয়। লেজ বাদামি হলেও লেজের আগা কিছু অংশ গাঢ় বাদামি হয়ে প্রান্ত একদম সাদা। পেট অপেক্ষাকৃত ফিকে বাদামি। দেহতলে এবং কখনো কখনো উপপ্রজাতিভেদে পিঠে মাছের আঁশের মতো ফিকে দাগ থাকে। লেজের গোড়ার দিকটা সাদা। বাদামি দেহের শেষাংশ ও ডানার প্রান্ত কালচে-বাদামি। এর দেহের সবচেয়ে বিচিত্র স্থানটি হলো টকটকে লাল অবসারণী-ঢাকনি। এ লাল অবসারণীর জন্যই এর ইংরেজি নাম হয়েছে জবফ-াবহঃবফ ইঁষনঁষ.
বাংলা বুলবুল বা বুলবুলি প্রচণ্ড লড়াকু পাখি। লড়াইবাজ পাখি হিসেবে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি এর। ইরান, ইরাক ও আফগানিস্তানের কোথাও কোথাও এখনো বুলবুলির লড়াই হয়। বাংলাদেশেও একসময় এদের লড়াই হতো। শুধু পোষা বুলবুল নয়, বুনো বুলবুলও লড়াইয়ে মেতে ওঠে অনেক সময়। লড়াইয়ে এতই মশগুল হয়ে পড়ে যে, কখনো কখনো শিকারির কবলে পড়ে যায়। এরা শহর, গ্রাম-গঞ্জ, পাতাঝরা বন, প্যারাবন, গ্রামীণ বন, বনের প্রান্ত, ক্ষেতখামার ও বাগানে বিচরণ করে। ঝোপঝাড় ও গাছের পাতায় এরা খাবার খুঁজে বেড়ায়। তীব্র রাসায়নিক পদার্থ এরা এড়িয়ে চলে। এদের খাদ্যতালিকার বড় অংশজুড়ে রয়েছে পোকামাকড়। এ ছাড়া ফুলের পাপড়ি, মধু ও ফলও খায় এরা। আগাছাজাতীয় গাছের বীজও এরা খায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement