১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বনসাইকে ভালোবেসেছেন তিনি

-

বনসাই হলো ‘লিভিং আর্ট’ বা অসমাপ্ত শিল্প। বড় বড় গাছকে বনসাই করে ছোট ছোট আকৃতি দেয়া যায়। দু’ভাবে বনসাই করা যায়। চারাগাছ এবং বড় গাছ থেকে। কলম এবং কাটিং পদ্ধতিতে। ২০১৪ সালে তার সাথে বনসাইয়ের পরিচয়। ১৫ বছর ধরে বনসাই সংগ্রহ করছেন। ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সের বনসাই আছে ৪০টি। বিদেশী বনসাই আছে ১৭ প্রজাতির। একাধিকবার বনসাইয়ের প্রদশর্নী করেছেন। এমনকি নিজের বাড়িটি এমনভাবে করেছেন যাতে বাগানটা জুতসইভাবে করা যায়। ঝড়ে বনসাইয়ের ক্ষতি না হয়। তার বনসাই বাগানের মূল্য ১৫ লাখ টাকারও বেশি। এভাবে বনসাইকে ভালোবেসেছেন আরিফুর রহমান। নিপুণ হাতে তিনি বনসাইকে সাজিয়ে তোলেন। গণিতের শিক্ষক তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি গণিতে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। গণিতের জটিল সূত্রের মতোই তার বনসাই বেড়ে উঠছে। চারপাশে ছোট ছোট ডালপালা মুগ্ধতা ছড়ায়। নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক আরিফুর রহমান। চট্টগ্রাম নগরীর শেরশাহ আবাসিক এলাকায় নিজের বাড়িতে তার বনসাই সংগ্রহশালা। দেশী-বিদেশী মিলিয়ে শতাধিক প্রজাতির বনসাইয়ের বিপুল সংগ্রহ তার। আরিফের মা বাগান করতেন। মায়ের গাছপালার পরিচর্যার সঙ্গী হিসেবে তিনি থাকতেন। ছোটকালেই গাছের প্রতি তার ভালোবাসার জন্ম। বড় হয়ে অনলাইনে দেশী-বিদেশী বনসাই দেখতে দেখতেই বনসাইয়ের প্রেমে পড়েন। বনসাইকে ভালোবেসে ফেলেন তিনি। আরিফ বলছিলেন, বনসাইয়ের প্রতি আকৃষ্ট হই ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে। আমি কারো কাছে বনসাই করা শিখিনি অর্থাৎ কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেইনি। তবে দেশের অনেক সিনিয়র শিল্পী আছেন যাদের কাছ থেকে বিভিন্ন টিপস নিয়ে থাকি। তাদের বাগানেও যাই।
একসময় আরিফ প্রচুর টিউশনি করতেন। বনসাইয়ের নেশায় টিউশনি ছেড়ে দেন। ছাদের ওপর এমন চমৎকার দেশী-বিদেশী বনসাইয়ে সংগ্রহশালা দেশে খুব কম আছে। ছয়তলা বাড়ি। চোখ যেখানেই যাবে সেখানেই দৃষ্টিনন্দন বনসাইয়ের দেখা মিলবে। সবকিছু সাজানো গোছানো। এমনকি সপ্তমতলার চিলেকোঠার মিনি ছাদ, এমনকি পানির ট্যাঙ্কির ছাদও পরিপূর্ণ বনসাই আর বনসাই। বাড়িময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রায় এক হাজারের মতো বনসাই। এর মধ্যে কিছু পূর্ণাঙ্গ বনসাই, কিছু প্রি-বনসাই। আরিফের বাড়িটির নাম বনসাই কটেজ। বাড়ি করার সময় আরিফ বাগান করার কথা ভেবেছেনÑ আমি বাড়ি তৈরির সময় বাগান করার জন্য ছাদটা ডিজাইন করি। প্রথম দিকে সবজি ও ফলের চাষ করতাম। পরে বনসাইয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাই। এখন শুধু বনসাই করি। বলছিলেন আরিফ। এক হাজার ২৫০ বর্গফুটের এ বাড়ি বানানোর সময় বাগানের জন্য ছাদটি করা হয় পরিকল্পিতভাবে। প্রথমে সবজি, মিশ্র ফলের বাগান করেন তিনি। পরে ফলগাছ দেশের বাড়ি ছাগলনাইয়া পাঠিয়ে দেন। আরিফের বাড়ি ফেনীর ছাগলনাইয়ায়। এখন বনসাই নিয়েই আরিফের ধ্যান-জ্ঞান। আরিফের বাগানে এলম, প্রেমনা, বারবাডোস চেরি, রাইটিয়া, জেট প্ল্যান্ট, বক্স উড, কামিনী, ঝুমুর, বট, বাংলা বট, আম বট, কালী বট, বেনজামিন বট, চেরি , যজ্ঞডুমুর, পামনা, গার্ডেন শেওড়া, পাকুড় বট ও তেঁতুল বটস প্রজাতির বনসাই রয়েছে। শুধু বিদেশী প্রজাতির গাছ নয়। আরিফ দেশী গাছের মধ্যে হিজল, তমাল, পাকুড়, বাগান বিলাস, কামিনী, বট, আমবট ইত্যাদি গাছের বনসাই করেছেন। বিভিন্ন দামের বনসাই আরিফের কাছে রয়েছে। তবে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকার বনসাইয়ের সংগ্রহ তার কাছে বেশি। তিনি দু’টি প্রদর্শনী করেছেন। বিক্রি করেছেন প্রায় ১০০টি বনসাই। শিক্ষকতার পাশপাশি প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে প্রায় চার ঘণ্টা করে বাগানে সময় দেন। আরিফের দুই ছেলে। একজন কর্মচারী তাকে সহায়তা করেন। অনেকেই তার বনসাই বাগান দেখতে আসেন। আরিফ তাদের সব ঘুরিয়ে দেখান। আবার হাসিমুখে বুঝিয়েও বলেন। আরিফের দেখাদেখি হোসেন নামে এক সহকর্মী বনসাই বাগান করেছেন। যে পরিমাণ বনসাই উৎপাদন হয়। সে তুলনায় বিক্রি কম। আরিফ বলছিলেন, সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন সাত বছরের একটি চায়না বট। ক্রেতাদের মধ্যে ঢাকার মানুষের সংখ্যা বেশি। অনলাইনে গাছের ছবি দিলেই ক্রেতারা তার সাথে যোগাযোগ করেন। বনসাই বাগান করতে অনেক ধৈর্য ও পড়ালেখা করা দরকার। এমনটাই আরিফ বলছিলেন। তিনি নতুন বাগানীদের পরামর্শ দেন। বাগানীরা মিলে কয়েকবার কর্মশালাও করেছেন। বনসাইকে বলা যায়, বড় গাছের ক্ষুদ্র সংস্করণ। তেঁতুল, অশ্বত্থ, বট, হিজল, তমাল, পাকুড় বট, গেওয়া ইত্যাদি গাছের বনসাই ছাদে দেখা যায়। চোখ, মন, প্রাণের প্রশান্তি তো আছেই। এমনটাই বলছিলেন পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখে গাছপালা। আর প্রাকৃতিক গাছের ক্ষুদ্র সংস্করণ হচ্ছে বনসাই, যা প্রকৃতির শিল্পকর্মও। একজন বনসাইবিদ মন দিয়ে, চোখ দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে এ শিল্পকর্ম তৈরি করেন ও বাঁচিয়ে রাখেন। বনসাইয়ের মাঝে সুখ, আনন্দ, শান্তি খুঁজে পেয়েছেন আরিফ। তিনি বলছিলেন, বাগান আমাকে নির্মল আনন্দ দেয়। জীবনে কোনো কাজ করে এত আনন্দ পাইনি, বনসাই করে যা পাই। পৃষ্টপোষকতা পেলে বিপুল পরিমাণ বনসাই রফতানি করা সম্ভব। তরুণ প্রজন্ম গ্যাজেট, ল্যাপটপে প্রচুর সময় ব্যয় করে। যা শরীর, মনকে অসুস্থ করে তোলে। অথচ তারা যদি একটু বাগানে মনযোগ দেয়। তাহলে দেহ-মন সতেজ থাকবে। বলছিলেন বনসাইয়ের এক নীরব সাধক আরিফুর রহমান। হ


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরের গণপিটুনিতে নিহত ২ নির্মাণশ্রমিক জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি সদস্যপদ লাভের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান

সকল