২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পপকর্ণের জীবন

-

খুব সকালে প্রাইভেট পড়তে যাওয়া কিছু ছেলেমেয়ের ছবি তোলা ছিল আমার উদ্দেশ্য। দেখি একটি লোক কাঁধে করে দুই পাশে ঝুলিয়ে পপ্পন পপ্পন চিৎকার করতে করতে উত্তর দিক থেকে এগিয়ে আসছে আমার দিকে। কাছে আসতেই আমি একটু চড়া সুরেই বললাম, ভাই এটা গ্রাম। এখানে সকালে মানুষ ভাত খায়, আপনার এই পপকর্ণ খাবে না কেউই। একটা শুকনো হাসি দিয়ে বললেন, দাদাভাই! সেটা আমিও বুঝি। কিন্তু কী করব বলেন। করোনার জন্য অনেক দিন কোনো কিছুর জন্যই বাড়ি থেকে বের হতে সাহস পাইনি। একটু সুযোগ পেয়েছি তাই বেরিয়ে পড়েছি। কুষ্টিয়া থেকে এখানে চলে এসেছি, এই সকালে তাহলে একটু ভেবে দেখেন কম স্বাদে বাড়ি থেকে বের হইনি। অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে দাদাভাই। শুনে হৃদয়ের ভেতর কেঁপে উঠল। তাই তো, আমি কখনো ভেবে দেখিনি বা চেষ্টাও করিনি এই পপকর্ণ, পপকর্ণ , ঝালমুড়ি আর ডিম ডিম বলে চিৎকার করা মানুষের পেছনের গল্প। এত বছরের ভ্রান্ত ধারণার অবসান হলো আমার কিন্তু এমন এক অনুশোচনার মধ্য দিয়ে অবসান হলো যে, আমি নিজেকে নিজেই অপরাধী সাব্যস্ত করেও শান্তি পাচ্ছিলাম না। প্রথম কথা, লোকটির বাড়ি কুষ্টিয়ায়। ১২৩ কিলোমিটার পথ ডিঙিয়ে আমাদের এলাকায় হাজির। অথচ এখানের অনেকেই ঘুম থেকেও উঠেনি। লোকটির পেটে কত ক্ষুধা সে ক্ষুধার যন্ত্রণা তাকে এতটুকু পথ তাড়িয়ে নিয়ে এলো এখানে। লোকটির সাথে গল্প করতে করতে হাঁটা শুরু করলাম। সংসারে দুই সন্তান, স্ত্রী, মা নিয়ে পাঁচজনের সংসার। উপার্জনক্ষম শুধু আমি। করোনায় লকডাউনের দিনগুলো যে একেকটা বছরের মতো কেটেছে ভাইজান। না খেয়ে যে কত দিন কাটিয়েছি আল্লাহ সাক্ষী। ঘরে খাবার নেই। ছেলেমেয়ের মুখের দিকে তাকাতেই পারি না। ওদের মুখ চোখ শুকিয়ে গেছে। অনেক অভাবের মধ্যে পড়েছি দাদাভাই। তাই তো কোনো উপায় না পেয়ে কিছু টাকা ধার নিয়ে এই পপকর্ণ নিয়ে বের হয়েছি। দেখা যাক আল্লাহ রিজিকে কী রেখেছেন। আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি গল্পের মাঝে। চলতি পথে বেশ কিছু প্যাকেট বিক্রি হলো। দেখলাম, যে মানুষ জীবনে এক টাকার ভাজাও কেনে না তারা ১০ টাকা দিয়ে এক প্যাকেট পপকর্ণ কিনছেন। আসলে রিজিকে থাকলে এমনই হয়। আমিও এক প্যাকেট কিনলাম। লোকটির সাথে হেঁটে পারা মুশকিল। বিদায় বেলায় আবদার রাখলাম ছবি তোলার। তিনি রাজি হলেন। আমি ছবি তুললাম। এই ঘটনা থেকে আমার মতো সবাই যারা রাস্তাঘাটে কিংবা যাত্রাপথে হকারদের বকবকানিতে বিরক্ত হয়ে পড়েন, অনেক সময় অনেক কটু কথাও বলে ফেলেন; তারা একটু ভেবে দেখুন প্রতিটি হকারের বকবকানির পেছনে তার পরিবার, তার স্বপ্ন তার জীবনের এক চিরন্তন গল্প লুকিয়ে থাকে। ভালো থাকুক এ জীবন যোদ্ধারা।

 


আরো সংবাদ



premium cement