২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মোহন মিয়ার সংসার

-

মোহন মিয়ার সংসারে অধঃপতন নেমে এসেছে প্রতিবেশী ব্রহ্মপুত্রের করাল থাবায়। নদ যেমন যৌবনের তাড়নায় আশপাশের সব কিছু গ্রাস করেছে, তেমনভাবেই মোহন মিয়ার সংসারে ভাটা পড়েছে অথর্ব বৃদ্ধের মতো। এখন সহায় সম্বলহীন মোহন মিয়ার দিন গুজরাতে হয় তিন চাকার রিকশা চালিয়ে। এভাবে আর কত দিন! একদিন সে মনে মনে ভাবে অনেকেই তো বহু টাকা পয়সা নিয়ে বিয়েশাদি করে সহায় সম্পত্তির মালিক হয়। আমিও না হয় ভালোভাবে বেঁচে থাকার তাগিদে একটু লোভ করেই ফেলি। তার এসব ভাবনা রিকশার বেলের টুংটাং আওয়াজের সাথে পাল্লা দিয়ে মনের মাজারে বৃহৎ আকার ধারণ করতে থাকে। সে ভুলে যায় তার স্ত্রী সন্তান আছে, বিয়েযোগ্য কন্যা আছে, কন্যাদায় আছে তার মাথার ওপর।
একদিন এক মধ্যবয়সী মহিলা যাত্রী ও মোহন মিয়ার আলাপনে বড় অঙ্কের যৌতুকের দামদর মিটিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো স্ত্রী-সন্তানদের অগোচরে বিয়ের পিঁড়িতে বসে মোহন মিয়া। হয়তো তার ধারণা ছিল এত বড় অঙ্কের যৌতুকের টাকা হয়তো বা স্ত্রী-সন্তানদের জন্যও সহায়ক হবে। কিন্তু ওসব যে সবি তার দ্বিতীয় স্ত্রীর ভাঁওতাবাজি তা বুঝে উঠতে মোহন মিয়ার সময় লাগে মাস তিনেক। ইতোমধ্যেই তার রিকশা বিক্রির টাকায় প্রসাধনী কিনে ব্যবহার করে দ্বিতীয় স্ত্রী আরো রূপসী হয়ে ওঠে, আর প্রথম স্ত্রী স্বামীর অবর্তমানে সংসারের হাল ধরতে গিয়ে ভিক্ষা করে ঘোরে জামালপুর শহরের অলিতে-গলিতে।
প্রথমা স্ত্রীকে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হয় মোহন মিয়াকে রিকশা কিনে দেয়ার টাকার কিস্তি জোগাড় করতে। এনজিও কর্মীরা কিস্তি ছাড়া যেতে চায় না। বুঝতে চায় না স্বামীর অবর্তমানে কী করে চলছে সংসার। রাত দুপুর পর্যন্ত কিস্তির টাকার জন্য দলবেঁধে অপেক্ষা করে এনজিও কর্মীরা। অবশেষে একদিন নাকফুল খুলে এনজিও কর্মীর হাতে দিয়ে বলেন, স্যার, স্বামী যখন আমার অন্যই হয়ে গেছে তখন এ নাক ফুল দিয়ে আর কী হবে। কষ্ট করে বিক্রি করে অন্তত দুটি কিস্তি নেবেন।
অবশেষে মোহন মিয়া তার ভুল বুঝতে পারে। সে ফিরে আসে প্রথম স্ত্রীর কাছে, সন্তানদের কাছে। এখন আর তার নিজের রিকশাটিও নেই। ভাড়ায় চালিয়ে দু-চার পয়সা যা উপার্জন হয় তাই দিয়ে সংসার চলে। প্রতিদিন জামালপুর যাওয়া-আসার পথে নদের কানে কানে মোহন মিয়া বলে যায়, আর কত কষ্ট দিবি ভাই! দেনা আমার জমিগুলো ফিরিয়ে। আর কত ভাড়ায় রিকশা চালাই বল। মোহন মিয়ার চোখের পানি নদের পানিতে পড়তেই দু’কূল ভাঙতে যেন আরো মরিয়া হয়ে উঠে প্রতিবেশী ব্রহ্মপুত্র।

 


আরো সংবাদ



premium cement