২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

প্রকৃতির আচরণ মানুষের আচরণ

-

জীবনের অনুভূতিগুলো আর প্রকৃতির আচরণে আজ আর তফাৎ খুঁজে পাই না। প্রকৃতিতে এই রোদ, এই বৃষ্টি। এই গরম, এই ঠাণ্ডা। অনুভূতিগুলোও আজ একইভাবে প্রকাশ করে নিজের আকুতি। মন মেজাজ এই ভালো, এই খারাফ। এই হাসি, এই কান্না। প্রকৃতির সাথে অনুভূতির মিল দেখা দিলেও মানুষের আকাক্সক্ষা আর প্রকৃতির মাঝে দীর্ঘ দিনের বিরোধ দেখতে দেখতে অস্থির হচ্ছি। দিন দিন এই সব কিছু চরমে পৌঁছাচ্ছে। এখন আর হলফ করে বলা যায় না ‘বৃষ্টির দিনে শুধু বৃষ্টি হবে’! রোদের দিনে শুধু রোদ এখন শীতকালেও বৃষ্টি হয়। বর্ষাকালেও কোকিল ডাকে! আবার হুট করে গরম শুরু।
প্রকৃতি যেন মানুষের সাথে এক ধরনের খেলায় মেতে উঠেছে। মানুষের চাহিদার সাথে প্রকৃতির রুটিন মিলছে না। কখনো মিলবেও না কারণ সব মানুষের চাহিদারও মিল নেই। একজনের যেটাতে সুবিধা অন্যজনের সেটায় অসুবিধা। কেউ বৃষ্টি চায় কেউ চায় না। কেউ রোদ চায় আবার কেউ রোদ চায় না। আবার কোনো অবস্থা একটানা কয়েকদিন থাকলে বেশির ভাগ মানুষ তখন একই দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকৃতির বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করে। দু’দিন অঝোরে বৃষ্টি ঝরে পড়লে চার দিকে হায় হায় শুরু হয়। ‘বৃষ্টির কারণে ঘর থেকে বের হতে পারছে না। ভেজা কাপড় শুকানো যাচ্ছে না। পথ ঘাট শেষ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে বর্ষণ হতে থাকলে মাঠ-ঘাটের সাথে আমরাও তলিয়ে যাব’ ইত্যাদি ইত্যাদি কথা শোনা যায়! উক্তিগুলো শুনে শুনে কান ঝালাপালা করে ওঠে। আমি শুধুই শুনি। কোনো মন্তব্য করি না। নানা জনের নানা মত শুনতে আমার ভালো লাগে। এদের উক্তিগুলো আমি পর্যবেক্ষণ করি। কারণ আমি জানি ঠিক এই একই মানুষগুলো তাদের মুখের ভাষা বদলাবে। বৃষ্টি বন্ধ হয়ে দু’দিন সূর্যি মামাকে দেখা যাওয়ার পর মুচকি হাসে মন্তব্যকারীরা। কিন্তু দুপুরবেলা আসতেই তাদের চেহারা আর কথার ধরন বদলে যায়। সে সাথে হাসি উবে গিয়ে মুখে রাজ্যের আঁধার ঘনিয়ে আসে। ‘কী যে শুরু হলো! এমন গরম বাপের জন্মেও দেখিনি। আত্মা শুকিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। মন চায় সারাদিন পানিতে ডুবে থাকি। হে খোদা, বৃষ্টি দাও না ক্যান?’ শুরু হয় চার দিকে হাঁসফাঁস।
পরদিন থেকে যদি যথারীতি আবার বৃষ্টিপাত শুরু হয় তাহলে আবার সবার কথা বদলে যাবে বদলে যায়। সামনে শীত আসবে। তখন মুখে মুখে শোনা যাবে, ‘গত জীবনে এমন শীত আর পড়েনি। এবারই বুঝি জীবনের সময় শেষ হয়ে গেল! হাড্ডি মাংস সব জমে গেল শীতে। এত ঠাণ্ডার রাতে ঘন ঘন ওঠা লাগে! হে খোদা, তুমি কই? লেপের তলেও শীত লাগে ক্যা! মনে হয় ডিপ ফ্রিজে আছি। পানিগুলো বরফ হয়ে গেছে। পুকুরের তলানি দিয়ে যদি আগুন জালান যেত! এই শীতে মনে হয় আর বাঁচমু না,’ ইত্যাদি।
এরপর গরমকাল আসবে। তখন শোনা যাবে ‘গরমে সব রস বেরিয়ে গেল বুঝি! তালের সাথে আমরাও পেকে গেলাম বুঝি। ভেতরটা জ্বলে গেলে বরফ গিলে খাই। মোদ্দকথা ঋতু বদলের জন্য প্রতিনিয়ত হাহাকার করলেও মানুষ কোনো ঋতুতেই সন্তুষ্ট নয়। আর ঋতুও যেন নিজ খোলস পাল্টে অন্য ঋতুর রূপ ধরে মানুষের সাথে করছে নিত্য খেলা। তবে সবকিছুর জন্য দায়িও মানুষ। মানুষের কর্ম এবং প্রকৃতির ওপর যে অবিচার তারই প্রতিশোধ নিতে ফণা তোলে প্রকৃতি। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এটিই বলা হয়েছেÑ জলে স্থলে সমস্ত বিপর্যয় মানুষের কারণেই সংঘটিত।হ

 


আরো সংবাদ



premium cement