২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জী ব নে র গ ল্প

চিরবিদায়

-

সালমা বিনতে শামছ
সাধারণত অসুস্থতা দেখা দিলে সেবাশুশ্রƒষা করা হয় এটিই নিয়ম, আজীবন জেনে আসছে রহিমা বেগম।
কিন্তু কি দিন এলো, কোথাও যাওয়া যাবে না, কাউকে ছোঁয়া যাবে না, এ কেমন কথা?
কোনোভাবেই তা মেনে নিতে পারছে না ষাটোর্র্ধ্ব রহিমা বেগম।
সপ্তাহখানেক থেকে স্বামীর জ্বর, ঠাণ্ডা।
ভালো কথা... রোগ হবে, ওষুধ খাবে, সেরে যাবে।
তা নয়, ডাক্তার কাছ থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর, রিপোর্টে বলছে তার নাকি করোনা হয়েছে, আর তাই কতগুলো মানুষ ভূতের মতো সারা শরীর ঢেকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসছে মানুষটাকে নিয়ে যেতে।
রহিমা বেগম প্রিয়তম স্বামীর সাথে যেতে চাইলেন, অনেক জোরাজোরির পরও পারলেন না স্বামীকে সঙ্গ দিতে। ছেলেমেয়ে এসে মাকে বুঝাচ্ছে, ‘ডাক্তাররা বাবার দেখাশোনা করবে, আপনার যেতে হবে না’
রহিমা বেগম কোনোভাবেই সন্তানদের বুঝাতে পারছে না, তিনি নিজ হাতে পান না বানিয়ে দিলে যে মানুষটা পান খাবে না, আর এই অসুস্থতার সময় তাকে হসপিটালে একা রেখে তিনি বাড়িতে থাকবেন! তা কিভাবে সম্ভব!
অগত্যা দু’দিন পর সন্তানরা মা রহিমা বেগমকে নিয়ে গেলেন হসপিটালে, এক নজর প্রিয় স্বামীকে দেখাবে বলে
সেখানে গিয়েও বিপত্তি, দূর থেকে জানালা দিয়ে দেখা করতে বলে। কেউ কাছে যেতে দিচ্ছে না
শেষ বয়সে এসে রহিমা বেগমের এমন অবুঝ আর পাগলামো ভালোবাসা দেখে উপস্থিত সবার চোখে অশ্রু চলে আসে।
সবার বুঝানোতে প্রিয় মানুষটিকে ছেড়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন ঠিকই, কিন্তু সময় কাটে না। অপেক্ষা করে প্রিয় স্বামী আসবে, পাশে বসে পান চাইবে, আর রহিমা বেগম পান বানিয়ে স্বামীর হাতে তুলে দেবেন।
দীর্ঘ তিন সপ্তাহ পর অ্যাম্বুলেন্স আবার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল, তড়িঘড়ি করে রহিমা বেগম এগিয়ে এলেন।
‘মানুষটা অবশেষে এলো বুঝি!’
হ্যাঁ... এসেছে, সাদা কাপড়ে মোড়ানো কি যেন স্ট্রেচারে করে গাড়ি থেকে নামাচ্ছে দু’জন।
বুঝতে আর বাকি রইল না রহিমা বেগমের। মানুষটা ঠিক ফিরে এসেছে, একটা ছোট্ট মাটির ঘরে ঘুমাবে বলে।

 


আরো সংবাদ



premium cement