২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অশ্রু

চারাগল্প
-

ঝকঝকে পরিষ্কার আকাশ। ডানা মেলে দু’টি গাংচিল উড়ে যাচ্ছে। কোথাও মেঘের চিহ্নটি পর্যন্তও নেই। অথচ এখন বর্ষাকাল। বলা যায় না কখন চার দিক আঁধার করে আবার ঝুম বৃষ্টি নেমে আসে। জুলফিকার সাহেব আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন।
আজ তার মনটা ভীষণ ভালো। একমাত্র মেয়ে বুশরা বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির মেধাবৃত্তি স্কলারশিপ পেয়েছে। সামনের মাসেই সে উড়াল দেবে। কাল রাতে এতটুকু সময়ের জন্য ঘুম আসেনি চোখে। এ-পাশ ও-পাশ করেই রাত পার করে দিয়েছেন। মনোয়ারা কয়েকবার অবশ্য ডাক দিয়েছেন, অ্যাই বুশরার আব্বু, ঘুমাইলা নাকি? জুলফিকার সাহেব জেগে আছেন, তবে তিনি মনোয়ারার ডাকে সাড়া দেননি।
১২ হাজার টাকার মাইনে পাওয়া একজন সামান্য ফাইলপত্তর ঘাঁটা মানুষের ঘরে এমন হিরের টুকরো মেয়ের জন্ম হওয়া শুভ লক্ষণ কি না তিনি জানেন না। আকাশের দিক থেকে চোখ সরিয়ে চোখজোড়া ঘড়িতে রাখলেন। নাহ, আজ অফিস যেতে ইচ্ছে করছে না! মাঝে মধ্যে নিজেকে বস বস মনে হয় জুলফিকার সাহেবের। আজও তার এমন মনে হচ্ছে। চোখ বুজলে দেখতে পাচ্ছেন তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় পিএইচডি শেষ করা ডক্টর তাহিয়া বুশরার বাবা। হাঁটতে হাঁটতে একটা টি স্টলের টুলে বসে পড়লেন জুলফিকার সাহেব। রাতে না ঘুমানোর কারণে এখন ঝিমুনি আসছে। চোখ দুটো ডালিমের মতো লাল বর্ণ ধারণ করল। আদাকুচি রঙ চা খেয়ে উঠতে গিয়ে জুলফিকার সাহেব আবিষ্কার করলেন তার ডান পায়ের জুতাটির একটা অংশ ছিঁড়ে গেছে। গত ঈদে গুলিস্তান থেকে ২২০ টাকা দিয়ে কেনা জুতাজোড়া অনায়াসে এক বছর পার হয়ে গেলেও এমন অসময়ে জুতা ছিঁড়ে যাওয়ায় জুলফিকার সাহেবের প্রচণ্ড রাগ হলো। ফ্লাইওভারের নিচে লিকলিকে গড়নের একটা ছেলে জুতা সেলাই করে। এ শহরে সবাই যেন যন্ত্রমানব। ছেলেটা সস্তা বিড়িতে একটা টান দিয়ে আবার কাজে মন দেয়। জুতা একখানা তালি দিতে তার সময় লেগেছে ২০ মিনিট। এমন বিরস মুখে কাজটা সে করছে, যেন জুতা সেলাইটা পৃথিবীর অষ্টমাশ্চর্য কোনো কঠিন কাজের একটি।... জুতা সেলাই করে ফ্লাইওভারের নিচে জমাট হয়ে থাকা পচা ময়লা ভাগাড়ে চোখ পড়তেই জুলফিকার সাহেবের ঘৃণায় সারা শরীর রি রি করে ওঠে। তার তলপেটের ভেতর থেকে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে আসতে চায়! জুলফিকার সাহেব আবার ভাবলেন, আসলেই এ শহরে সবাই যন্ত্রমানব। এমন বিদঘুটে একটা জায়গায় আয়েস করে বসে মুচি ছেলেটা কী আপন মনেই না কাজ করে চলছে।
আরে খালু যে? ভালো আছেন খালুজান? জুলফিকার সাহেব ময়লার স্তূপ থেকে চোখ সরিয়ে দেখলেন মনোয়ারার ছোট বোনের ছেলে মাহফুজ দাঁড়িয়ে। কী খবর মাহফুজ। কই যাও? না খালু, ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বের হয়েছি, এখন আপনাদের বাসাতেই যাচ্ছিলাম। তাহিয়ার তো আজ ছবি ছেপেছে পত্রিকা... এই দেখেন এই... জুলফিকার সাহেব ছবি দেখতে গিয়ে দেখলেন তার চোখজোড়া ঝাপসা হয়ে আসছে। সেখানে নদীর বানের মতো পানি থোকা হয়ে ঝুলে আছে। মাহফুজ, রাস্তায় চলাটাই দুষ্কর বুঝলে! ধুলোবালিতে চোখও নিরাপদ রাখা যায় না! থেকে থেকে আকাশটা কেমন অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে আসছে। ছরছর করে পাতার শব্দ শোনা না গেলেও উল্কার মতো শহরের ধুলোয় জড়ানো বাতাস উ™£ান্ত হয়ে কোথাও ছুটেছে যেন। জুলফিকার সাহেব মাহফুজ থেকে পত্রিকাটি নিয়ে অফিসে গিয়ে পৌঁছলেন। এমন আনন্দের সংবাদ তরতাজা অফিসে দিতেই হবে।। ডুকতেই লক্ষ হলো, রিসিপশনে বসে থাকা আঁখি মেয়েটা মিটমিট করে হাসছে। কী জুলফিকার ভাই ... এতক্ষণে এলেন। বড় স্যার এ পর্যন্ত আপনাকে তিনবার খোঁজ করে গোছে। কী বলো! রাগ নাকি খুব? বকেছে? আঁখি মেয়েটা আবার হাসছে। মানুষের দুঃখে এরা হাসে কেনো? জুলফিকার সাহেব বিষণœ মনে বড় স্যারের কামরায় গিয়ে মূর্তির মতো দাঁড়ালেন... কী জুলফিকার সাহেব এলেন? জুলফিকার সাহেবের প্রচণ্ড ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেয়েটার খবর তিনি বলতে পারেননি! ... বড় স্যার চেয়ার থেকে সরে এসে জুলফিকার সাহেবকে জড়িয়ে ধরলেন... কনগ্রাচুলেশন জুলফিকার ভাই। আপনার প্রমোশন হয়েছে। এই নিন প্রমোশন লেটার। আপনি সোজা জিএম সাহেবের চেয়ারে গিয়ে বসবেন। জার্মান থেকে অডিট টিম এসেছিল, আপনার রেকর্ড চেক করে তারা তো মহাখুশি। সামনের মাসেই হয়তো একটা কনফারেন্সে যোগ দিতে জার্মান যেতে হবে আপনাকে। যান যান, গিয়ে বসুন। আমি আসছি। জুলফিকার সাহেব নির্বিকার ভঙিতে করিডর পেরিয়ে নতুন অফিসে পা ফেললেন। রিসিপশনের আঁখি মেয়েটা সামনে এগিয়ে এসে বলল, অভিনন্দন স্যার। তাহিয়া আপু কী আগামী মাসেই ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে যাচ্ছেন? জুলফিকার সাহেব খানিক হাসলেন। এ হাসিটা ঠিক তাকে মানাল না। তার জোড়া চোখে অশ্রুতে নদীর পানির মতো উত্তাল ঢেউ খেলে চলছে। ততক্ষণে এ কে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির বাহিরে বিজলী চমকিয়ে গমগম আওয়াজে বৃষ্টি নামতে শুরু করল অবিরাম...।


আরো সংবাদ



premium cement
দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন করা হলে হামাস অস্ত্র ছাড়তে রাজি শনিবার থেকে শুরু গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা, প্রস্তত জবি ক্যাম্পাসগুলোতে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেন বাইডেন: মুখপাত্র নোয়াখালীতে ইসতিসকার নামাজ আদায় জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব থাকবে বান্দরবানে বৃষ্টির চেয়ে চোখের পানি ফেলে বিশেষ নামাজ চকরিয়ায় যুবককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ৭ উপজেলা নির্বাচনে ব্যর্থ হলে গণতন্ত্র ক্ষুণ্ন হবে: সিইসি বাগাতিপাড়ায় ইসতিসকার নামাজ পরিবর্তনশীল জলবায়ুর জন্য কাসাভা উপযুক্ত, হেক্টরপ্রতি ফলন ৩৫-৫০ টন : বাকৃবি অধ্যাপক বৃষ্টির জন্য হাকাকার, সাভারে ইসতিসকার নামাজ আদায়

সকল