২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কেমন আছ বন্ধু

জীবনের বাঁকে বাঁকে
-

কলেজে দেরিতে ক্লাসে ঢুকলে কেউ জায়গা দিতে চায় না। পেছনে বসতে হয়। আর আমি প্রতিদিনই দেরিতে যেতাম আর পেছনে বসতাম। একদিন একটি মেয়ে আমাকে ডেকে এখানে বসো বলে একটু সরে গিয়ে জায়গা করে দিলো। আমি বসলাম। ও নানা কথা জিজ্ঞেস করতে লাগল। তুমি প্রতিদিন দেরি করে আসো কেন? তোমাদের বাসা অনেক দূরে? আমি বললাম, না বেশি দূর নয়। রিকশায় এলে পাঁচ মিনিট। ও বলল হেঁটে আসো। বললাম, না রিকশায়। ও অবাক হয়ে রইল। তারপর বলল, আচ্ছা, আমি তোমার জন্য এখন থেকে জায়গা রাখব। আমার নাম কী, ভাইবোন ক’জন, বাবা কী করে, বাসা কোথায়, নানা প্রশ্নে আমাকে জর্জরিত করল। আমি বিরক্ত হলাম না। বসতে দিয়েছে বলে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ওর প্রশ্নের উত্তর দিলাম।
প্রায় প্রতিদিনই ও আমায় বসতে দিত। ওর ধারণা আমি বুঝি বন্ধু হয়ে গেছি। আর আমার প্রতি আন্তরিকতার কারণে এড়িয়ে চলা যায় না। আমিও এতদিনেও ওর নাম জানতে চাইনি। ভেবে নিজেই অবাক হয়েছি। একদিন জিজ্ঞেস করলাম তোমার নাম কী? ও হেসে বলল, আমার নাম জানো না? মিথ্যা বললাম, মনে থাকে না। আজ বলো আর ভুলব না। ও বলল, ওর নাম লাবণী। নাম পর্যন্তই আমি ভদ্রতা শেষ করলাম। আমি কেন যে কারো সাথে আন্তরিক হতে পারি না! কারো সাথেই আমার মেলে না। আমি আমার নিজের প্রতি বিরক্ত। কিন্তু লাবণী কেমন করে যেন আপন করে নেয় মানুষকে। টিফিনের সময় আমি টিফিন নিয়ে যেতাম না। আবার কলেজ থেকে কিছু কিনেও খেতাম না। লাবণী প্রতিদিন টেনে নিয়ে টিফিন খাওয়াবে। আমি এড়িয়ে চলতাম। টিফিনের সময় এমন জায়গায় যেতাম যেন কেউ খুঁজে না পায়। টিফিন শেষে যখন আসতাম ওর কী রাগ। বলে, কোথায় ছিলে? সবখানে খুঁজলাম।
লাবণী গরিব মেয়ে। তবে এতটুকু কমতি নেই ওর আন্তরিকতার। ও আমার সাথে কথা বলতে ভয় পেত। আমি খুব একটা কথা বলতাম না। তাই ও ভাবত ওর কথায় কিছু ভাবি কি না। আমি কিছু ভাবতাম না। তবে ওর সাথে বেশি মিশতামও না। ও-ই আমাকে ডাকত। আমি নানা অজুহাতে এড়িয়ে যেতাম। ও যে এত বোকা এটি ও বুঝত না।
টেস্ট পরীক্ষা শেষ। এক সপ্তাহ পর রেজাল্ট দিলো। রেজাল্ট দেখতে গিয়ে ওর সাথে দেখা। দৌড়ে এসে বলল, জানিস আমি সব বিষয়ে পাস করেছি। তুইও করেছিস। ওর খুশিতে কথা বলাই দায়। তবে খুশি হওয়ারও কারণ আছে। প্রিন্সিপাল আগেই বলেছিলেন, যে এক বিষয়ে ফেল করবে তাকে ফরম ফিলাপ করতে দেয়া হবে না। লাবণী পাস করেছে বলে নেচে বেড়াচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ওর রেজাল্ট দেখতে নোটিশ বোর্ডের সামনে ভিড় ঠেলে যাচ্ছে। লাবণী খবর নিয়ে এলো পরশু দিন থেকে ফরম ফিলাপ শুরু। সময় মাত্র তিন দিন। আমাকে বলল, কবে করবি? বললাম পরশু দিনই। ও বলল, ঠিক আছে আমরা তাহলে এক সাথেই করব। আমাকে ঠিক ১০টায় আসতে বলে বিদায় নিলো। আমি ঠিক ১০টায় কলেজে গিয়েছিলাম। লাবণীর দেখা নেই। দাঁড়িয়ে আছি ও আসবে বলে। হঠাৎ লাবণীর এক বান্ধবী এসে বলল, জানো, গত রাতে লাবণী আত্মহত্যা করেছে। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম কেন? মেয়েটি বলল, ওর বাবার ওপর রাগ করে। এতক্ষণে মাটি দেয়াও হয়েছে। বলে মেয়েটি চলে গেল। হঠাৎ এ কেমন খবর! এলোমেলো হয়ে গেল সব। সবাই জানে। কলেজের স্যাররাও দেখতে গিয়েছিল। শুধু আমি জানি না। খুব খারাপ লাগতে শুরু করল। এক সাথে আর ফরম ফিলাপ করা হলো না। আমিও সেদিন করলাম না।
এখনো লাবণীকে মনে পড়ে। ওর স্মৃতি। ওর কথা। জানতে ইচ্ছে করে বেশ আছে ও।

রেহানা রিমি
গোয়ালপাড়া, ঠাকুরগাঁও।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল