১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বৃষ্টিভেজা বিষণœতার ঈদ

চারাগল্প
-

এখন বেশির ভাগ কোরবানি ঈদের দিন টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ে। এই বৃষ্টির কারণে ঈদ অনেক সময় পানসে হয়ে যায়। এ বছর বৃষ্টি আর করোনা দুটিই ভর করেছে ঈদের কালে।
গত বছর ঈদের সকাল। আকাশে মেঘমালা ভর করেছিল। সেই সাথে আমার মনেও! কারণ একটাই এতে ঈদগুলো দিন দিন পানসে হয়ে যাচ্ছে। মানুষের অনুভূতিও বদলে যাচ্ছে। আজ সব কিছু কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে...। গত ঈদের সকালে পশু জবাই শেষে বিষণœতা এসে আমার ওপর ভর করেছিল। ঈদের সারাটা সকাল টিপ টিপ করে বৃষ্টি ঝরে পড়ছিল।
বিকেল বেলায় বৃষ্টি কিছুটা থেমেছে। তবুও কিছুতেই কিছু ভালো লাগছিল না। ঘর থেকে বেরিয়ে পায়চারি করলাম কিছুক্ষণ। আকাশে এখনো মেঘেদের আনাগোনা। সাথে দমকা হাওয়ারা মাঝে মাঝে এসে ছুঁয়ে দিয়ে যায়। একটু বৈচিত্র্য আনতে বাড়ির পাশে গাছের মগডালে চড়ে বসলাম। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম আজ সারাদিন গাছের মগডালেই কাটাব। গাছের ওপর থেকে অন্যদের ঈদ উদযাপন দেখব। মগডালে বসে পা দুলাচ্ছিলাম আর গুন গুন করে ঈদের গান গাইছিলাম।
একটু পর দেখতে পেলাম, ছোট বেলার বন্ধু মাহফুজ খুব দ্রুত পায়ে আমাদের বাড়ির দিকে ছুটে আসছে। ছুটে আসার কারণ হলো আজ মন খারাপের কারণে ঈদগাহে মাহফুজের সাথে তেমন কোনো কথা না বলেই চলে এসেছিলাম। বিগত কোনো বছর এমন ঘটনা ঘটেনি! আমি গাছের আরো উঁচুতে উঠে আরেকটা ডালে চড়ে বসলাম। মাহফুজ যাতে করে আমাকে দেখতে না পায়। মাহফুজ খুব দ্রুতপায়ে আমার ঘরে গেল আর কিছুক্ষণ বাদে নিরাশ হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে এলো।
আমি জানি মাহফুজ কিছুক্ষণ পর আবার আসবে। আমাকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে না। কারণ প্রতি ঈদের বিকেল আমাদের একসাথে কাটে।
আমি চোখবুজে গাছের ডালে শুয়ে কিছু ভাবতে থাকলাম। ২০ মিনিট পর মাহফুজ আবার ফিরে এলো। আমাকে না পেয়ে সে খুব হতাশ। বারবার ফোন দিতে লাগল। আমি গাছে চড়ার আগেই ফোন বন্ধ করে ঘরে রেখে এসেছিলাম। কিছুক্ষণ পর মাহফুজ আমাকে খুঁজতে খুঁজতে আমি যে গাছটির ওপরে ছিলাম ঠিক তার তলায় এসে বসল। তার পর বিড় বিড় করে বলতে লাগল, ‘কোথায় যে লুকিয়ে গেলি?’
আমি শুনতে পেয়ে গাছের উপর থেকে উত্তর দিলাম, ‘তোর মাথার উপরে লুকিয়ে আছি। চলে আয়। আমার কথা শুনে সে চমকে উঠে উপরের দিকে তাকিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। তার হাসি দেখে আমিও হেসে উঠলাম। কিছুক্ষণের জন্য মন ভালো হয়ে গেল।
ছাগলনাইয়া, ফেনী


আরো সংবাদ



premium cement