২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনার বৃষ্টিদিন

জীবনের বাঁকে বাঁকে
-

ক’দিন একটানা বর্ষণে বিরক্ত লাগছিল। রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত। কোথাও বের হতে পারছি না। শুধু জানালা ধরে বাইরে তাকিয়ে বৃষ্টির সৌন্দর্য উপভোগ। একগাদা কাজ জমে আছে, শপিং আড্ডা সব বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু ফোনে একটু কথা বলা, তারপর খাওয়া আর ঘুম। বিরক্তিকর!
প্রতি সেকেন্ডে বিদ্যুৎ চলে যায় আবার আসে। টিভি দেখার সুখটাও অসুখ হয়ে গেছে। কী যে করি!!
মাকে বললাম আর ভালো লাগছে না। বাইরে যেতে মন চাচ্ছে। মা একটু মিষ্টি হাসি দিয়ে বলেছিল, কেন রে, বর্ষা তোর প্রিয় ঋতু। তাহলে এত বিরক্ত কেন। বৃষ্টি ভালোবাসিস এখন শব্দ শুনে মজা নে। পচা গলা ঋতু তাও আমার মেয়ের প্রিয় ঋতু। উদ্ভট ছেলেমেয়ে।
আসলে মা বর্ষা পছন্দ করত না। মায়ের প্রিয় ঋতু ছিল হেমন্ত। এ সময় নাকি নতুন ধানের ঘ্রাণ খুব সুন্দর হয়। আমার এসব তেমন পছন্দ নয়। বর্ষায় নানুবাড়ি নৌকায় ঘোরার মজটা আলাদা। মার সাথে এ নিয়ে প্রায়ই খুনসুটি হতো আমার। বৃষ্টিতে গোসল করতে দিত না কখনো। আমার টনসিলাইটিস ইনফেকশন হতো ঘনঘন। তাই বারণ ছিল। মাঝে মাঝে অনেক বুঝিয়ে যেতাম পরদিন শুরু হতো জ্বর। সারা রাত জেগে থাকত মা পাশে। পরে বকুনি তো কমন ছিল। একটু ঠাণ্ডা লাগলে মা জায়নামাজ থেকে উঠতে চাইত না।
সেদিনের সেই দৃশ্য এখন গল্প হয়ে গেছে। মা নেই পাশে। দু’বছর হয় মা আমাকে ছেড়ে চির হেমন্তের বাগানে পাড়ি জমিয়েছে। আমিও আজ চির একাকিত্ব নিয়ে পড়ে আছি ভালোলাগার এই পৃথিবীতে।
অবাক লাগছে এ বছর বর্ষাতে। সেই বর্ষা, সেই নদী, সেই কদম, হাঁসেদের জলকেলিÑ সবই আছে কিন্তু আমি বাইরে যেতে পারি না। ঘরে আটকা আছি গত তিন মাস। ছুটে চলা এ পৃথিবীজুড়ে এখন করোনা নামক ভয়াবহতা। এখন আর বিরক্ত হতেও বিরক্ত লাগে।
হারিয়ে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে একজন করে পরিচিত অপরিচিত মুখ।
বৃষ্টিতে ভেজার শখটা নিজেই নিজের ভিতরে আটকে রাখতে হচ্ছে। মা তোমার বারন তাই আমি ভিজতে পারি না। মনে পড়ে তোমাকে। এই ভয়ঙ্কর দুর্যোগে আমাদের জন্য রাতদিন আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করতে। ভয় পেয়ে কুঁকড়ে থাকতে। উল্টো রাগ হতাম তোমার বেশি বেশি দুশ্চিন্তা দেখে। আজ অসহায় লাগে নিজেকে নিয়ে ভাবনার দায়িত্ব নিজের নিতে হয়। কোনো শাসন বারণের বালাই নেই। আর অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে তোমার সেই বুকটাও নেই যেখানে মুখ লুকিয়ে চিরশান্তি মিলবে। তুমি যেখানে আছো ভালো থাকো আর ওখান থেকে দোয়া করো আমরা যেন এই দিনগুলো কাটিয়ে সুন্দর একটা পৃথিবীর বাসিন্দা হতে পারি।
গোপালগঞ্জ


আরো সংবাদ



premium cement