১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আকাশে ঘুড়ির মেলা

লকডাউনের এই সময় ঘুড়িপ্রেমীরা ঘুড়ি উড়িয়ে সময় পার করছেন। তাই ব্যস্ততা বাড়ছে ঘুড়ির কারিগরদের - ছবি : আবদুর রাজ্জাক -

আমাদের দেশের প্রাচীন উৎসবগুলোর মধ্যে ঘুড়িও একটি। অন্যান্য উৎসবের মতো ঘুড়ি উৎসবও দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথেই আবর্তিত হয়েছে। নতুন ফসল ঘরে ওঠা কিংবা অন্য যেকোনো আয়োজনের সাথে সংযুক্ত হয়ে আকাশে ডানা মেলেছে রঙ-বেরঙের ঘুড়ি। যার রঙ ছড়িয়েছে সব বয়সের মানুষের মনে। চিরকালীন ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে ঘুড়ি উৎসব। এক সময়ে দাপটের সাথে আকাশে উড়তে দেখা গেছে রঙ-বেরঙের ঘুড়ি। অতিমাত্রায় প্রযুক্তি ব্যবহারে তরুণরা ইন্টারনেট নিয়ে ডুবে থাকায় সেভাবে আকাশে ঘুড়ি উড়তে দেখা যায় না। তবে সম্প্রতি করোনাকালীন সময়ে সারা দেশের মানুষের কাছে ঘুড়ি উড়ানো যেন শখের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অফুরন্ত সময় থাকায় অনেকেই শখের ঘুড়ি উড়ানোর মধ্য দিয়ে বিকেলটা পার করছেন। বিকেল হলেই আকাশে হেলেদুলে উড়তে থাকে বর্ণিল যত সব ঘুড়ি, যা দেখলে দু’চোখ জুড়িয়ে যায়।
ঢাকার দোহার উপজেলার সবত্রই চোখে পড়ে ঘুড়ি উড়ানোর এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য! অতি সহজেই মনে হবে, ঘুড়ি উৎসবের অতীত ঐতিহ্য সগৌরবে ফিরে এসেছে। করোনাকালে ঘুড়ি জায়গা করে নিয়েছে মানুষের হৃদয়ে। ঘুড়ির মহোৎসব চলছে সবখানে। ছোট-বড় সবাই এই আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। কেউ ঘুড়ি উড়াচ্ছেন আবার কেউ ঘুড়ি তৈরির কাজে সহযোগিতার করছেন। আবার কেউ অবলোকন করছেন ঘুড়ি উড়ানো। এক কথায়, অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় সারা দেশে কদর বেড়েছে এই ঘুড়ির। করোনা আতঙ্কেও প্রতিটি বিকেল একটু হলেও আনন্দের মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন ঘুড়িপ্রেমীরা। আকাশ পানে চোখ মেললেই দেখা মেলে নানা রঙের ঘুড়ি। এসব ঘুড়ি উড়াউড়ি দেখে মনে করিয়ে দেয় ফেলা আসা অতীত স্মৃতিকে। তাই মানুষও মেতে উঠছেন এই ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতায়।
বাতাসের সাথে মিতালি করে আকাশে নেচে-গেয়ে বেড়াচ্ছে বর্ণিল ঘুড়ি। সারা দেশের আকাশে উড়ছে ঘুড়ি। ঘুড়ির চাহিদা থাকায় স্থানীয়রা করোনার সময়ে বেকার হয়ে পড়া অনেকেই ঘুড়ি তৈরি করে বিক্রি করছেন। বেচাবিক্রিও ভালো হচ্ছে। ৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ঘুড়ি।
স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় অনেকে নিজেরাই হাতে তৈরি করছেন ঘুড়ি। বিভিন্ন প্রকার ঘুড়ির মধ্যে রয়েছে চারকোণা আকৃতির বাংলা ঘুড়ি, ড্রাগন, ঈগল, মাছরাঙা, তারা, ডলফিন, সাপ, বেনা, ঝাপ, চরকি লেজ, চিলঘুড়ি, মানুষ, প্রজাপতি ও পালতোলা জাহাজ প্রভৃতি। এসব ঘুড়ি তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে রঙিন কাগজ , পলিথিন ও কাপড়।
ঘুড়িপ্রেমীরা দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেই রঙিন ঘুড়ি নিয়ে চলে যাচ্ছেন ফসলের ক্ষেতে পাশে খোলা আকাশে। করোনা নামক মহামারী থেকে বাঁচতে সরকারি নির্দেশনার কারণে অনেকটাই ঘরবন্দী মানুষ। যুবক-কিশোরদের পাশাপাশি বয়স্করাও রয়েছেন হোম কোয়ারেন্টিনে। তাই যান্ত্রিক জীবনকে ছুটি দিয়ে বর্ষার বিকেলকে উপভোগ করতে ছোট-বড় সবাই ঘুড়ি নিয়ে ছুটে চলেছেন গ্রামীণ ফসলের মাঠঘাট কিংবা খোলা আকাশের নিচে। করোনায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বন্ধু হিসেবে তারা বেছে নিয়েছে বিভিন্ন রঙ-বেরঙের ডানামেলা বাহারি রঙের ঘুড়ি। এ বিষয়ে উপজেলার সোনাবাজু এলাকার খোরশেদ আলম জানান, আমাদের ছোট বেলায় গ্রীষ্মকালে সবাই ঘুড়ি প্রতিযোগিতায় মেতে উঠত। তখন ঘুড়ি কাটার প্রতিযোগিতা হতো। কেটে যাওয়া ঘুড়ি ধরার জন্য দৌড়ে যেতাম অনেক পথ। বর্তমানে ঘুড়ির কাটাকাটি না হলে আকাশে উড়ে বেড়ানো দেখতে ভালোই লাগে। উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ এলাকার আলী হোসেন নান্টু বলেন, ঘুড়ি উড়ানোর আনন্দটা ভিন্নরকম। ছোটবেলায় অনেক ঘুড়ি উড়িয়ে অনেক সময় পার করেছি। কর্মব্যবস্থার জন্য ঘুড়ি উড়ানো সম্ভব হয়নি। করোনাকালে অবসর সময় পাওয়ায় ঘুড়ি উড়িয়ে বিকেলের সময়টা পার করছি।
করোনা আতঙ্কের প্রতিটা বিকেল একটু হলেও আনন্দে পার করছেন ঘুড়িপ্রেমীরা। আকাশের পানে তাকালে দেখা মেলে শত শত ঘুড়ির! করোনার বর্ষার বিকেলে সাদাকালো মেঘের ভেলায় রঙিন ঘুড়ির উড়াউড়ি ছোট-বড় সবাইকে মুগ্ধ করছে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement