২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বাবা দিবস

তোমাকে খুব ভালোবাসি বাবা

-

পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ মনে হয় প্রশস্ত বৃক্ষের মতো ছায়াদানকারী বাবার বুক। শত আবদার আর নির্মল প্রশান্তির এ গন্তব্যটি কারোরই অজানা নয়। বাবা শব্দের মাঝে জড়িয়ে আছে বিশালত্বের এক অদ্ভুত মায়াবী প্রকাশ। বাবা নামটা উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে যেকোনো বয়সী সন্তানের হৃদয়ে শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসা মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। শত রাগ, গাম্ভীর্য আর অনুশাসনের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা কোমল স্নেহময় রূপ হলেন বাবা। তিনিই সন্তানদের শেখান কিভাবে পাড়ি দিতে হয় জীবনের অলিগলি আর আঁকাবাঁকা বন্ধুর পথ।
আমাদের পরিবার মধ্যবিত্ত। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। বুঝ হওয়ার পর থেকেই দেখছি বাবা কতটা কষ্ট করে এই পরিবারটিকে এগিয়ে নিচ্ছেন। নিজের কষ্ট হলেও পরিবারের প্রতিটি সদস্যদের মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা করেন সব সময়। বাবাকে নিয়ে আমার শৈশবের কতগুলো সুন্দর স্মৃতি রয়েছে। সেগুলো কখনো ভোলার মতো নয়। আমার পড়ালেখার হাতেখড়ি হয়েছে বাবার হাত ধরেই। ভালোবাসা আর রাগের অদ্ভুত মিশ্রণে প্রাথমিক পড়াগুলো পড়াতেন আমাকে। এরপর ভর্তি করিয়ে দেন গ্রামের স্কুলে। প্রতিদিন নিয়ে যেতেন আবার নিয়ে আসতেন। টিফিন খাওয়ার জন্য প্রতিদিন দিতেন দু’টাকা করে। বর্ষাকালে যখন চারদিকে পানিতে থৈ থৈ করত, বাবা তখন আমাকে নৌকায় করে স্কুলে নিয়ে যেতেন। বৃষ্টি হলে বাবাকে দেখতাম একটা ছাতা মাথায় ধরে আরেকটা ছাতা হাতে নিয়ে এগিয়ে আসছেন আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তখন কী যে ভালো লাগা কাজ করত মনে!
কখনো ভুল করলে বাবা যদি মারতেন, তাহলে পরে নিজেই জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলতেন, ‘কেন এমন করিস? তোদের মারলে যে আমিই বেশি কষ্ট পাই!’
যতক্ষণ পড়তাম রাতে বাবা ঠিক ততক্ষণ আমার পাশে বসে থাকতেন। কখনো আমার আগে ঘুমাতেন না। পরীক্ষার সময়ও বাবা আমার সাথে জেগে থাকতেন আর এ রুম থেকে ও রুমে পায়চারি করতেন। যদি বলতাম, ‘ঘুমিয়ে পড়ো গিয়ে’, তখন বলতেন, ‘তোর পড়া শেষ কর, তারপর একসাথে ঘুমাব।’
মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার পর মাদরাসা হোস্টেলেই থাকতে হতো আমাকে। বাড়িতে ভালো কিছু রান্না হলেই তা নিয়ে ছুটে আসতেন আমার জন্য। পাশে বসে থাকতেন খাওয়া শেষ হওয়া অবধি। তারপর বাড়ি ফিরতেন। দু-তিন দিন পরপরই আমার পছন্দের জিনিসগুলো কিনে নিয়ে আসতেন।
বাবা কখনো আমার কোনো আবদার অপূর্ণ রাখেননি। শত কষ্ট হলেও সব চাওয়া পূরণ করেছেন। ঈদের সময় নিজে কিছু না কিনলেও আমার জন্য জামাকাপড় কিনে আনতেন। যখন ইন্ডিয়ার দারুল উলুম দেওবন্দে পড়ালেখা করি, তখন একটা স্মার্টফোনের খুব শখ ছিল আমার। এদিকে আর্থিক টানাপড়েনে জর্জরিত বাবা। আয়-উপার্জন নেই তেমন। তাই কখনো তাকে মোবাইল কিনে দেয়ার কথা বলিনি। হঠাৎ একদিন ফোন করে বললেন, ‘তোমার বিকাশ চেক করো, টাকা পাঠিয়েছি। ভালো দেখে একটা মোবাইল কিনে নাও।’
চেক করে দেখি ১৫ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। আমি তো আনন্দে আত্মহারা! জিজ্ঞেস করলাম, ‘এত টাকা কোত্থেকে পেলে?’
হাসতে হাসতে বললেন, ‘এত কিছু তোমার জানার প্রয়োজন নেই, ফোনটা কিনে আগে আমার কাছে ফোন দেবে’।
বাবারা বুঝি এমনই হন। শত অভাবের মাঝে সন্তানের মুখে হাসি ফুটানোই বুঝি তাদের একমাত্র কাজ।
দারুল উলুম দেওবন্দে যখন যাই, তখন প্রতিদিন ফোন করে খোঁজখবর নিতেন। ইন্টারভিউ দিয়েছি কি না, ভর্তি হতে পেরেছি কি না, সিট পেয়েছি কি না ইত্যাদি প্রশ্ন করতেন বারবার। বাড়ি এসে জানতে পারি, দেওবন্দে থাকা অবস্থায় কেউ আমার কথা বাবাকে জিজ্ঞেস করলেই তার দু’চোখ ছাপিয়ে বইত অশ্রুধারা। অনেক সময় প্রশ্নকারীকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলতেন।
বাবাকে নিয়ে এমন হাজারো স্মৃতি রয়েছে, যা লিখে শেষ করার মতো নয়। যতই বড় হচ্ছি, বাবা থেকে কেমন যেন দূরত্বও বাড়ছে। হয়তো সীমাহীন শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার কারণে। ছোটবেলার মতো যদি এখনো তার গলায় ঝুলে বিভিন্ন আবদার করতে পারতাম! মাঝে মধ্যে মুখের জড়তা ভেঙে বলতে ইচ্ছে করে, ‘আমি তোমাকে পৃথিবীর সব থেকে বেশি ভালোবাসি, বাবা।’ টঙ্গী, গাজীপুর


আরো সংবাদ



premium cement
চকরিয়ায় যুবককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ৭ উপজেলা নির্বাচনে ব্যর্থ হলে গণতন্ত্র ক্ষুণ্ন হবে: সিইসি বাগাতিপাড়ায় ইসতিসকার নামাজ পরিবর্তনশীল জলবায়ুর জন্য কাসাভা উপযুক্ত, হেক্টরপ্রতি ফলন ৩৫-৫০ টন : বাকৃবি অধ্যাপক বৃষ্টির জন্য হাকাকার, সাভারে ইসতিসকার নামাজ আদায় বরিশালে সালাতুল ইসতিসকার আদায় অর্ধ শতাব্দীতে ভ্যাকসিন সাড়ে ১৫ কোটি লোকের জীবন বাঁচিয়েছে : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আল্লাহর রহমত কামনায় সকলকে সিজদাহ অবনত হতে হবে-মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন কাউখালীতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা ভাঙ্গায় বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় ফুলবাড়ীতে বৃষ্টি চেয়ে ইসতিসকার নামাজ

সকল