১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পাঠক সংখ্যা

অন্তরালে

-

রাহাত আলী একজন তরুণ নাট্যনির্মাতা। তার নির্মিত নাটক টিভি চ্যানেলগুলোতে নিয়মিত প্রচার হচ্ছে। সে মূলত নতুনদের নিয়ে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। নতুন এমন অনেক তারকা আছে, যারা রাহাত আলীর নাটকে অভিনয় করে অল্প সময়ে পরিচিতি লাভ করেছে। ফেসবুকে ছবি দেখে এ যাবত তিনটি মেয়েকে নাটকে সুযোগ দিয়ে রাহাত আলী তাদের তারকা বানিয়েছে। তারা এখন ছোট পর্দায় বেশ দাপিয়ে কাজ করছে।
সম্প্রতি নতুন নাটক তৈরিতে হাত দেবে রাহাত আলী। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সাথে চুক্তি মোটামুটি ফাইনাল হলেও বাবা চরিত্রে একজন অভিনেতা দরকার। কোনো প্রবীণ অভিনেতাকেই তার মনের মতো সিলেক্ট হচ্ছে না। বাবার চরিত্রে নতুন কাউকে নিলে কেমন হয়! কিন্তু নতুন কেউ তো নেই। কাকে নেয়া যায়! হঠাৎ রাহাত আলীর মনে হলো জহির উদ্দিনের কথা। হ্যাঁ, এ নাটকে বাবার চরিত্রে জহির উদ্দিনই উপযুক্ত।
এক বছর আগে মাঝ বয়সের জহির উদ্দিনকে ফেসবুকে পায় রাহাত আলী। দু’জনে দু’জনের পোস্টে লাইক কমেন্ট করলেও কখনো দু’জনের ম্যাসেঞ্জারে আলাপ হয়নি।
রাহাত আলী জহির উদ্দিনকে ফেসবুকে নক করে টেক্সট পাঠায়Ñ ‘সালাম নেবেন চাচা। আমার পরের নাটকে বাবা চরিত্রে আপনাকে নিয়ে কাজ করাতে চাই। যদি রাজি হতেন।’ টেক্সট পাঠানোর একদিন পার হলেও ওপার থেকে জহির উদ্দিন এখনো জবাব দেননি। লোকটার চেহারা বেশ ভালো। কিন্তু অভিনয় পারবে তো! দেখে তো শিক্ষিতই মনে হচ্ছে। শিখিয়ে দিলে নিশ্চয়ই পারবে। ভাবে রাহাত আলী।
সন্ধ্যায় ওপার থেকে জহির উদ্দিন টেক্সট দেখে রিপ্লাই পাঠায়Ñ ‘আমি তোমাকে চিনি বাবা। ভালো নাটক বানাও তুমি। কয়েকটা দেখেছিও। তোমার নাটকে আমাকে সুযোগ দেবে, এটা তো পরম সৌভাগ্য আমার।’ জহির উদ্দিনের টেক্সট পড়ে ম্লান হেসে রাহাত আলী আবার লেখেÑ ‘তাহলে আপনি রাজি?’ জহির উদ্দিন লেখেনÑ ‘কিন্তু সমস্যা আছে বাবা। হাত দিয়ে লিখে সমস্যার কথা আর কতটুকুই বা বোঝাতে পারব!’ এ টেক্সট পড়ে রাহাত আলী লেখেÑ ‘আপনার ফোন নাম্বার দেন’। জহির উদ্দিন নাম্বার লিখে দেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পার হওয়ার পরও রাহাত আলীর কোনো কল আসে না। জহির উদ্দিন মনে মনে রাহাত আলীর কলের অপেক্ষায় থাকেন।
পরদিন সকালে ফেসবুক ওপেন করতেই জহির উদ্দিন রাহাত আলীর টেক্সট পান। মধ্যরাতে পাঠানো টেক্সটে রাহাত আলী লিখেছেÑ ‘কল করে বিষয়টি আপনাকে বোঝাতে পারব না চাচা। আপনার বাসার ঠিকানা দেন। আমি আসব।’ জহির উদ্দিন তার শান্তিনগরের বাসার ঠিকানা লিখে দেন।
বিকেল বেলায় রাহাত আলী জহির উদ্দিনের বাসায় আসে। কিন্তু জহির উদ্দিনকে দেখে তার বিস্ময়ের সীমা রইল না। জহির উদ্দিন হুইল চেয়ারে বসে আছেন। তার দুটি পা-ই নেই।
একান্ত গল্প আড্ডায় রাহাত আলী জেনেছে, জহির উদ্দিন একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে পাকিস্তানিদের আক্রমণে তার দুটি পা-ই শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মরতে মরতে অবশেষে বেঁচে যান। হুইল চেয়ারে আজ তার জীবন কাটছে। নিঃসঙ্গতা দূর করতে ফেসবুক খুলেছেন। এ জগতটা ভালো লাগে তার। অনেক মানুষের সাথে তার সখ্য। ভালোই সময় কাটে। কিন্তু কেউ জানে না জহির উদ্দিন দুই পা হারানো একজন মুক্তিযোদ্ধা। এসব মানুষকে জানাতে তার ভালো লাগে না বলে অনেকটা অন্তরালে থাকেন তিনি।
রাহাত আলী এসব তথ্য জেনে স্তব্ধ হয়ে যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা এতদিন ধরে তার ফ্রেন্ডলিস্টে আছে, জানাই ছিল না। রাহাত আলী সিদ্ধান্ত নেয়, সে এই মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র বানাবে। জহির উদ্দিনকে সে তুলে ধরবে। অন্তরালে থাকতে দেবে না। মুক্তিযোদ্ধারা অন্তরালে থাকবে কেন, তারা থাকবে সবার ঊর্ধ্বে। জাতি তাদের চিনবে।
রাহাত আলী চলে যাচ্ছে। তাকে তার পরবর্তী নাটকে বাবার চরিত্রে কাউকে খুঁজতে হবে। নাটকের শুটিং শেষ হলেই সে জহির উদ্দিনকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র বানাবে।
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী।


আরো সংবাদ



premium cement