২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সূর্যমুখীর অপরূপ সৌন্দর্য

-

সুনামগঞ্জের হাওরে এবার সূর্যমুখী বাগান ঘিরেই এ বছর হঠাৎ প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে জামালগঞ্জের রামপুর ও বিশ^ম্ভরপুরের ভাদেরটেকের সালামপুর এলাকা। হাওরে সূর্যমুখীর অপরূপ সৌন্দর্য নজর কাড়ছে পথচারী ও পর্যটকদের। কৃষি বিভাগের প্রণোদনায় বাণিজ্যিকভাবেই কিছু জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন স্থানীয় কৃষক। ফেব্রুয়ারি মাসে গাছে গাছে ফুল ফুটেছে। বসন্তের মৃদু হাওয়ায় কয়েক দিনের ব্যবধানেই প্রতিটি চারায় ফুল ফুটায় পুরো জমিতে সৌন্দর্যের হাতছানি দিচ্ছে। সূর্যের দিকে মুখ করে ফুটে থাকা ঘন ফুলের সমারোহই জামালগঞ্জের রামপুর ও বিশ^ম্ভরপুরের সালামপুরে সৌন্দর্যপ্রেমীদর হাতছানি দিচ্ছে। সূর্যমুখী বাগানে সৌন্দর্যপিপাসুদের ছবি এখন সামাজিক যেগাযোগমাধ্যমে সবার দৃষ্টি কাড়ছে।
জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নে রামপুর গ্রামে সূর্যমুখীর প্রদর্শনী প্লট পরিদর্শন করেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ। এ সময় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মদ সফর উদ্দিন, জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা পাল, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আজিজল হক, জেলা-উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত লোকজন উপস্থিত ছিলেন। প্রতিদিনই পরিদর্শন করছেন বিভিন্ন বয়সী লোকজন। জানা যায়, ফেনারবাঁক ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের কৃষক তাজ উদ্দিন জামালগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদফতরের প্রণোদনায় ৩৬০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। এতে আনুমানিক ব্যয় হয়েছে ৯৬ হাজার টাকা। ২৫ হাজার চারা লাগিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকা বিক্রি হবে বলেও জানান তিনি। বোরো ফসল ধান ও রবিশস্যের চেয়ে সূর্যমুখী বেশি লাভ হবে বলে অগ্রহায়ণ মাসে শুরু করে চৈত্র মাসে ফসল (বীজ) ঘরে তোলার আশা করছেন কৃষক।
এদিকে বিশ^ম্ভরপুরের ভাদেরটেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সল আহমদ, আবু মুগিরা, আলবি, তিশা রহমান, ইভা রহমান ও মুতাহা বলেন, যাত্রাপথে হলুদ বর্ণের ফুল আমাদের কাছে টেনে নিয়েছে। স্মৃতি ধরে রাখতে সূর্যমুখীর সংস্পর্শে গিয়ে কিছু ছবি তুলেছি। ঢাকার পর্যটক ছাব্বির, রাফি জানান, একসাথে হাজারো ফুলের সমারোহে মুগ্ধ হয়েছেন তারা। ফুলের সৌন্দর্যে কিছু সময় আনন্দে থাকতেই সূর্যমুখীর বাগানে সময় কাটাচ্ছেন তারা।
অন্য দিকে কৃষক আবদুর রহমান জানান, ধানের বিকল্প হিসেবে সূর্যমুখীর আবাদ করছেন তিনি। শ্রমিক সঙ্কট, উচ্চ মজুরি, কৃষি উপকরণের চড়া দাম, ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে হাওরের ফসল ক্ষতি হওয়ার কারণে বোরো আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন কৃষকরা। অপ্রচলিত শস্য (ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখী) আবাদ করতে খরচ কম কিন্তু উৎপাদন বেশি ও লাভজনক। ফলে এসব ফসলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা।
এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা পাল বলেন, জামালগঞ্জে সূর্যমুখীর প্রদর্শনী প্লটে বাম্পার ফলন হবে আশা করি। সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মদ সফর উদ্দিন বলেন, কৃষি খাতে সূর্যমুখী চাষে বিপ্লব ঘটবে। আমাদের আরো ৯টি প্লট রয়েছে, এটা সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেন, হাওরাঞ্চলের সাধারণ কৃষকের মাঝে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারিভাবে যতটুকু সম্ভব সূর্যমুখী চাষের জন্য ততটুক সহযোগিতা করা হয়েছে। সূর্যমুখী প্রদর্শনী প্লট দেখার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে নারী,পুরুষ ভিড় জমাচ্ছেন। কৃষকরাও দেখার জন্য আসছেন। হাওরের কৃষকরা সূর্যমুখী চাষে সফল হবে বলে আশা করছি।

 


আরো সংবাদ



premium cement