২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জ্বলে না আর সবুজ বাতি

চারাগল্প
-

লাভ ইউ।
লাভ ইউ টু।
লাভ ইউ থ্রি।
লাভ ইউ ফোর।
লাভ ইউ একশো।
লাভ ইউ পাঁচশো।
হি হি হি। হাসির রিয়েক্ট পাঠায় তিশা। হয়েছে, হয়েছে। আর লাভ ইউ পাঠাতে হবে না। এত লাভ ইউ আমি রাখব কোথায়?
বুক পকেটে।
আমি তো মেয়ে। আমার বুক পকেট নেই। হৃদয়ের পকেটে রাখো।
সে পকেটেও কী আর খালি আছে ? তুমি প্রতিদিন যেভাবে লাভ ইউ পাঠাও, এত জায়গা থাকে কী করে!
একটা কাজ করো।
কী?
আজ বাজারে যাও।
বাজারে! আমি? আমি যাবো বাজারে?
হুমমম। তুমি যাবে বাজারে।
এই শোনো।
বলো।
আমাদের ফ্যামিলির কোনো মেয়ে বাজারে যায় না।
তুমি যাবে।
আশ্চর্য তো! আমি কেন বাজারে যাবো?
বিক্রি করতে।
কী বিক্রি করব?
ভালোবাসা। আমার ভালোবাসা তো তোমার কাছে রাখার জায়গা নেই, মানে তোমার বুক পকেট ভর্তি, তাই কিছু বাজারে গিয়ে বিক্রি করে এসো।
হি হি হি। আবারো হাসির রিয়েক্ট পাঠায় তিশা।
হাসছ যে!
সত্যিই তুমি না একটা...
কী?
রামছাগল।
এ্যাঁ!
হুমমমম। তুমি একটা রামছাগল। ইয়া বড় রামছাগল। একটু থামে তিশা। তার পর বলে,
আমি কাল চীন যাচ্ছি।
কেন?
তোমার ভালোবাসা বিক্রি করতে।
তোমার কী মাথা ঠিক আছে?
হুমমম।
তুমি জানো না চীনে করোনাভাইরাস ঢুকেছে?
জানি, জানি বলেই তো যাচ্ছি।
মানে? মানে কী?
আমার ছোট ভাই আর ছোট কাকু থাকে চীনে। আমি তাদের আনতে যাচ্ছি।
তিশার সাথে আমার পরিচয় ফেসবুকে। পরিচয় থেকে একটু আধটু মেসেজ আদান প্রদান। তারপর দুষ্টুমী। মিস ইউ বলা, লাভ ইউ বলা। এইটুকুই।
পনেরো দিন হলো তিশা আর ফেসবুকে আসে না। আমি ফেসবুকে ঢুকেই অপেক্ষা করি কখন তিশার নামের পাশে সবুজ বাতিটা জ্বলে ওঠে। কিন্তু জ্বলে না। একদিন। দুইদিন। তিনদিন। বিশ দিন হলো, তিশা আর ফেসবুকে আসে না।
আমার বুক টনটন করে ওঠে। এই প্রথম অনুভব করলাম, তিশার সাথে দুষ্টুমীগুলো আসলে শুধু দুষ্টমীই ছিলো না। ছিল ভালোবাসা। প্রেম।
মনটা কেমন ভার হয়ে আছে আজ। ভালো লাগছে না কিছুই। বসলাম টিভির রুমে। টিভিটা অন করলাম। ভেসে এলো একটা বাংলা চ্যানেল। সন্ধ্যা সাতটার খবর হচ্ছে। খবর পড়ছে একটা মেয়ে। অবশেষে বাংলাদেশেও মিলল করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব। চীন থেকে আসা তিশা নামের এক মেয়ের শরীর থেকে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি পিজি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আছেন গভীর পর্যবেক্ষণে।
টলতে থাকি আমি। কী করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। একসময় নিজেকে আবিষ্কার করি রাস্তায়। দৌড়াচ্ছি আমি। আমি কি তিশার কাছে যাচ্ছি? ডাক্তাররা কী আমাকে তিশার কাছে যেতে দিবে? আমি কি একটিবার দেখতে পাবো তাকে?
সেতাবগঞ্জ, দিনাজপুর


আরো সংবাদ



premium cement