২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পাঁচ টাকায় কোরবানি!

-

সমাজের এমন কিছু মানুষ আছেন যারা কখনোই কোরবানি দিতে পারেননি, কিন্তু মনের ভেতর কোরবানি দেয়ার স্বপ্ন লালন করে বেড়ান, তাদের এই স্বপ্নটি পূরণ করতেই দিনাজপুরের বিরল থানার কিছু উদ্যমী তরুণ স্বপ্নফিউ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ‘পাঁচ টাকায় কোরবানি’ দেয়ার উদ্যোগটি গ্রহণ করেছেন।

পাঁচ টাকায় কোরবানি কী
‘পাঁচ টাকায় কোরবানি কী?’ এই প্রশ্ন উদ্যোগ গ্রহণকারী শাব্বির আহমাদকে করা হলে তিনি বলেন, স্বপ্নফিউ ফাউন্ডেশন মৌসুমভিত্তিক সমাজের চাহিদা অনুসারে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেই ধারাবাহিকতায় কোরবানি উপলক্ষে ‘পাঁচ টাকায় কোরবানি’ নামক উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়। আপাতদৃষ্টিতে প্রশ্ন আসতে পারে, কিভাবে পাঁচ টাকায় কোরবানি সম্ভব? ‘পাঁচ টাকায় কোরবানি’ একটি গাণিতিক সংখ্যাবিশিষ্ট বাক্য মাত্র। আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছেন যাদের আত্মমর্যাদাবোধসহ সমাজে ভালো ইমেজ রয়েছে, কিন্তু আর্থিক দিক থেকে তারা সামর্থ্যহীন, তাদের অবস্থা অনুসারে তাদের কাছে কোরবানি দেয়া একটি স্বপ্নের মতো। সেসব মানুষের জন্যই পাঁচ টাকায় কোরবানির এই উদ্যোগ।
তিনি আরো বলেন, ‘সমাজের সামর্থ্যবান, সমাজসেবায় আগ্রহী ও সমাজসেবায় চিন্তাশীল মানুষদের কাছ থেকে সহযোগিতার মাধ্যমে কিছু কোরবানির পশু ক্রয়ের জন্য তহবিল গঠন করা হয়। ক্রয় করা কোরবানির পশু যোগ্য মানুষদের কাছে আমরা পাঁচ টাকায় হস্তান্তর করি।’

কেন পাঁচ টাকায় হস্তান্তর
স্বপ্নফিউ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আদিল হোসেন বলেন, ‘কোরবানি সামর্থ্যবানদের ওপর ফরজ। পাঁচ টাকায় যে কেউ যেকোনো কিছু কেনার সামর্থ্য রাখেন। একটি প্রশ্ন আসতে পারে, পাঁচ টাকায় বিক্রি করার চেয়ে দান করে দেয়া কি উত্তম নয়? আমরা চেয়েছি যাকে এই কোরবানির পশুটি দেয়া হবে, তিনি যেন উপলব্ধি করতে পারেন; তিনি তার সামর্থ্যে কোরবানি দিচ্ছেন; তাকে কেউ অনুগ্রহ করছে না। তাই এই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
যারা এগিয়ে এসেছেন
এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বিরল উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, বিরল থানা অফিস ইনচার্জ (অসি) এটিএম গোলাম রব্বানি, বিরল মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফরিন আক্তার (সোনা) ও এলাকার সর্বস্তরের মানুষসহ স্বপ্নফিউ ফাউন্ডেশনের সব সদস্য আর্থিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন।
শাব্বির আহমাদ বলেন, ‘আমাদের সবার সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় ২০১৯ সালে আমরা চারটি পরিবারের কাছে পাঁচ টাকায় কোরবানির পশু বিক্রি করেছি। যারা কখনো কোরবানি দেননি ও তাদের ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ্য ছিল না। আমরা লক্ষ করেছি, যারা পাঁচ টাকা দিয়ে কোরবানির পশু নিয়েছেন তাদের কাছে সেই পাঁচ টাকাই পাঁচ হাজার টাকার সমমূল্যের মর্যাদা পেয়েছে। যা আমরা বাস্তবিক অর্থে আশা করেছিলাম।’
তিনি আরো বলেন, ‘তবে একটি আক্ষেপ ছিল, আমরা ২১ পরিবারের কাছে এভাবে পাঁচ টাকায় পশু দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তহবিলে পর্যাপ্ত কালেকশন না থাকায় আমরা প্রথমবারের মতো চারটি পরিবারের কাছে পাঁচ টাকায় পশু হস্তান্তর করেছি। আমাদের বিশ্বাস, আমাদের এই উদ্যোগ খুব অল্প সময়ের মধ্যে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে এবং আমরা সর্বস্তরের মানুষকে কোরবানির আওতায় আনতে পারব ইনশাআল্লাহ।’
সেতাবগঞ্জ, দিনাজপুর।


আরো সংবাদ



premium cement