২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অটোগ্রাফ

জীবনের বাঁকে বাঁকে
-

মাসজুড়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বিকেল হলেই মন পড়ে থাকে মেলায়। কিন্তু সংসার আমায় ছুটি দেয় না বলে যাওয়া হয় না। তার ওপর অভ্র এবার দশম শ্রেণীতে, ওকে নিয়ে ব্যস্ততা একটু বেশি। এ বছর আমার একটা গল্পের বই বের হয়েছে। বইটির নাম ‘জীবনের টুকরো গল্প’। বইমেলায় স্টলে দাঁড়িয়ে নিজের বইতে অটোগ্রাফ দিতে কার না ভালো লাগে। আমিও অন্যদের থেকে আলাদা নই। ২০১৫ সালে প্রথম বই ‘মুক্ত আকাশ কতদূর’। বইটা বের হলো, আমি মেলায় গেলাম। স্টলের সামনে দিয়ে হেঁটে আসি। স্টলে নিজের বই দেখে আনন্দ পাই। স্টলে থাকা কেউ চিনতে পারেনি আমায়। মেলায় ঘুরছি, হঠাৎ সামনে এক পরিচিত ভাইয়ের সাথে দেখা। দেখেই বললেন,
— Ñআপা আপনার বই নেবো।
— Ñভাই আমার কাছে তো নেই, স্টলে বই রাখা।
— Ñচলেন স্টলে, অটোগ্রাফ নিয়েই বই নেবো।
গেলাম স্টলে, প্রথম অটোগ্রাফ দিচ্ছি আমি। এক অন্যরকম সুখ অনুভব করলাম। একটা ছবিও তুলেছিলাম সেদিন। মাঝে মাঝেই ছবিখানা দেখি, ভালো লাগে অনেক।
২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় মুক্তিযুদ্ধের বই ‘একাত্তর ও নারী’। বইটা প্রকাশ করে ‘বাঙালি’ প্রকাশক। যার কর্ণধার আরিফ নজরুল। কেউ কেউ স্টলে এসে লেখককে খোঁজ করেন, অটোগ্রাফ চান, কিন্তু আমার তো মেলায় যাওয়া হয় না। খুব হলে দু’দিন যাই। প্রথম দিকে এক দিন আর শেষ দিকে এক দিন। তবে অটোগ্রাফ দিয়ে অনেক বই কুরিয়ারে পাঠিয়েছি। আমার মতো ক্ষুদ্র লেখকের জন্য এটা অনেক পাওয়া। পাঠক ভক্ত শুভাকাক্সক্ষীরা বই নেবেন বলে ঠিকানা দেন, আমি কুরিয়ারে বই পাঠিয়ে দিই আর তারা বিকাশে বইয়ের সম্মানী দিয়ে দেন।
এ বছর আমার দু’টি বই আসার কথা থাকলেও এসেছে একটি বই। জীবনভিত্তিক কিছু গল্প দিয়ে সাজিয়েছি বইটি। নাম দিয়েছি, ‘জীবনের টুকরো গল্প’। বইটি সম্পর্কে আমি বলি, ‘জীবনের সব গল্প ডায়রিতে লেখা যায় না, কয়েকটা পেইজ সাদা রাখতেই হয়, নতুবা থেকেই যায়। এই সাদা পেইজগুলোর জন্যই জীবনের গল্প টুকরো টুকরো হয়ে যায়। সে জন্যই বইটির নামকরণ করেছি এমন। এই বইটিসহ আমার মোট তেরোটি বই প্রকাশ পেয়েছে। কোনো বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়নি।
এ বছর মেলার মাঝামাঝি বইটি আসে মেলায়। প্রথম দিকে এক দিন মেলায় যাই, ২৪ ফেব্রুয়ারি মেলায় গিয়ে কিছু সময় বসি ‘বাঙালি’ প্রকাশনের স্টলে। এই প্রকাশন থেকেই বের হয়েছে ‘জীবনের টুকরো গল্প’ বইটি। আমি আর স্টলের সেলসম্যান আপু গল্প করছি। অপরিচিত তিন পাঠক এলেন, একজন হাতে নিয়ে দেখছেন আমার ‘একাত্তর ও নারী’ বইটি। আমি চুপে চুপে একটা ছবি তুলি। তিনি দেখতে পান না। বইটা দিতে বললেন, বইয়ের সম্মানী বুঝিয়ে যেই বই নেবেন অমনি আপুটা বলেন,
Ñচাইলে আপনি লেখকের অটোগ্রাফ নিতে পারেন।
Ñতাই নাকি, নিশ্চয়ই নেবো।
আমি পার্স থেকে কলম বের করে, বইতে লিখি, ‘দেশটা ছোট হলেও অর্জনগুলো বিশাল, অর্জন করেছে বাবা রক্ষার দায়িত্ব আমার।’ এরপর নিজের নাম আর স্বাক্ষর দিয়ে দিই।
একটু পর কবি ও গল্পকার হাফিজ রহমান আসেন স্টলে।
Ñমৌ তোমার নতুন বইটা দাও তো অটোগ্রাফসহ।
আমি বইটিতে লিখি, ‘জীবনে সাদা পেইজ থাকে বলেই জীবনের গল্প ভেঙে যায়, কিন্তু জীবন একটাই থাকে।’
নিজের প্রয়োজনীয় কিছু বই সংগ্রহ করি। সন্ধ্যার সাথে সাথে বেরিয়ে যাই অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে। যতটুকু সময় ছিলাম বেশ আনন্দেই ছিলাম। মনে এক ধরনের কিছু দায়িত্ব থেকে সরে ছিলাম। সামনে আরো দু’দিন সময় আছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ছিলাম দুই হাজার কুড়িকে বিদায় দিতে। স্মৃতি হয়ে থাকবে আমার অটোগ্রাফ।
লেখক : সাহিত্যিক, কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক

 


আরো সংবাদ



premium cement