১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অটোগ্রাফ নিতে আসা মেয়েটি

চারাগল্প
-


মুখোমুখি দাঁড়াল মেয়েটি। দাঁড়িয়েই হাসল। সুন্দর হাসি। এতক্ষণে আসার সময় হলো আপনার?
আমি থতমত খেলাম। মানে!
সেই কখন থেকে আপনার অপেক্ষায় বসে আছি।
কেন?
আপনার অটোগ্রাফ নেয়ার জন্য। দিন, একটা অটোগ্রাফ দিন। বলে মেয়েটি ব্যাগ থেকে একটা বই বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিলো।
আমি চোখ রাখলাম বইয়ের প্রচ্ছদের ওপর। আমারই লেখা বই। প্রেমের উপন্যাস। উপন্যাসের নাম- আমার একটা তুমি চাই।
এবারই প্রথম বইমেলায় আমার এই বইটা বের হয়েছে। অপরিচিত কারো হাতে আমার বই দেখে মনে মনে খুব পুলক অনুভব করলাম। শিরা বেয়ে যেন বয়ে গেল এক আনন্দের ঢেউ। তবে অটোগ্রাফ চাওয়ায় খাকিনটা লজ্জিত ও ইতস্ততবোধ করলাম। তোতলানোর মতো করে বললাম, অটোগ্রাফ!
মেয়েটি মুখটা হা করে এমনভাবে আমার দিকে তাকাল, আমি যেন ভিনগ্রহ থেকে নেমে আসা বিরল প্রজাতির কোনো প্রাণী। এমন প্রাণী কোনো দিন দেখেনি সে। তাই মুখ হা করে, চোখ বড় বড় করে বলল, ওমা, লেখক হয়েছেন আর অটোগ্রাফ দেবেন না, তা কি হয়? দিন দিন, একটা অটোগ্রাফ দিন।
বইটা হাতে নিয়ে আমি অটোগ্রাফ দিলাম।
মেয়েটি হাসল। জানেন?
কী?
আমি বাজিতে জিতে গেছি।
মানে?
আমি ফ্রেন্ডদের সাথে বাজি ধরেছি, আমি যদি আপনার অটোগ্রাফ নিতে পারি, তাহলে সব ফ্রেন্ড আমাকে খাওয়াবে।
আমি হাসলাম। তাই নাকি?
হুমমম।
বাহ!
হুমমম।
ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। আমি সামনে পা বাড়ালাম। মেয়েটি পেছন থেকে ডাকল। শুনুন।
জি। কিছু বলবেন?
হ্যাঁ।
বলুন।
আপনি কি খুব ব্যস্ত।
কেন বলুন তো?
না মানে.... ইয়ে ....। আপনি যদি কিছু মনে না করেন, তাহলে একটা কথা বলি।
বলুন।
চলুন না আপনিও।
কোথায়?
আমাদের সাথে। সবাই মিলে একসাথে বসে কফি খাবো। একটু আড্ডা দেবো। গল্প করব।
না মানে ...
গেলে সবাই খুব খুশি হবো। আমার ফ্রেন্ডরা আপনার বড় ফান।
মেয়েটির জোরাজুরিতে আর না করতে পারলাম না। রাজি হলাম।
মেলার মুখে একটা কফি হাউজে বসলাম।
পড়ন্ত বিকাল। হু হু করে বইছে ফালগুনের পশ্চিমা বাতাস। বাতাস এসে লাগছে সবার চোখে, মুখে, চুলে। সবার হাতে কফি। সবাই কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর বাতাসে তাদের চুল উড়ছে। আমি তাকালাম অটোগ্রাফ নিতে আসা মেয়েটির দিকে। কফিতে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়াচ্ছে সে। অমায়িক ভঙ্গিমায়। চমকালাম আমি। এই ভঙ্গিমাটা খুব পছন্দ আমার। এটা মিলির ভঙ্গিমা। মিলি এই ভঙ্গিমায় কফি খেত। আমি অপলক চোখে তাকিয়ে থাকলাম মেয়েটির দিকে। এইতো মিলির মতো তারও ঠোঁটের বাঁদিকে উপরে একটা তিল আছে। হাসলে গালে টোল পড়ে, চোখ ছলছল করে!
কে এই মেয়ে? মিলির কি কোনো আত্মীয়?
এই যে লেখক সাহেব, ওভাবে কী দেখছেন হা করে? হাতের কফি তো ঠাণ্ডা হয়ে গেল।
সবাই হো হো করে হেসে উঠে বলল, লেখক বুঝি তোর প্রেমে পড়েছে রে!
আমি থতমত খেলাম। না মানে ... আপনার তো নামটাই জানা হলো না।
মিলি।
চমকালাম আমি। মানে?
আশ্চর্য তো! এখানে মানে মানে করার কী আছে?
আপনার নাম মিলি!
কেন আমার নাম মিলি হতে পারে না?
পারে।
তাহলে এত অবাক হওয়ার কী আছে?
কিন্তু ...।
আপনার কিন্তু রাখেন। কফি খান।
আমি কফিতে চুমুক দিয়ে ভাবতে লাগলাম, এ কী করে সম্ভব! সবকিছু মিলির সাথে মিলে যাওয়া কী করে সম্ভব? নামটাও!
রাতে খেয়েদেয়ে বিছানায় গেলাম সোয়া ১১টায়। বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে প্রতিদিনের মতো আজো ডাটা অন করে ফেসবুকে ঢুকলাম। ফেসবুক লগইন করতেই একটি মেসেজ এলো। অপরিচিত আইডি থেকে।
সরি লেখক, আমি তখন আপনাকে একটা মিথ্যা মেসেজ দিয়েছি। আসলে আমার নাম মিলি নয়, অহনা। আর ঠোঁটের বাঁদিকে উপরের তিলটাও আমার আসল নয়, নকল বসানো। আর আমি অমায়িক ভঙ্গিমায় কফি খাওয়াটা শিখেছি আপনার উপন্যাস ‘আমার একটা তুমি চাই’ বই থেকেই। একচ্যুয়ালি আমি আপনার উপন্যাসের নায়িকা মিলি হতে চাই। পেরেছি কী মিলি হতে?
আমি তাকালাম দেয়ালের দিকে। দেয়ালে মিলির ছবি। মিলি হাসছে। জগৎ ভুলানো হাসি। গালে টোল পড়া হাসিমাখা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। বালিকার মেসেজের কোনো রিপ্লাই দিলাম না। বেরিয়ে পড়লাম ফেসবুক লগআউট করে।
সেতাবগঞ্জ, দিনাজপুর

 


আরো সংবাদ



premium cement