১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রাণের মেলা বইমেলা

-

শুরু হয়েছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের এ মাসেই মাতৃভাষা বাংলার জন্য ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করেছে। সে স্মৃতি বাঙালি জাতির কাছে আজো চির অম্লান। ফেব্রুয়ারি এলেই ভাষা শহীদদের স্মরণে বাংলা একাডেমি মাসব্যাপী আয়োজন করে বইমেলার। বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। বইমেলা এলেই পাঠক-লেখক আর প্রকাশকদের নিয়ে তৈরি হয় অন্যরকম এক অনুভূতির জায়গা। সরগরম থাকে মেলাপ্রাঙ্গণ। বইমেলাকে কেন্দ্র করে বইপ্রেমীরা প্রিয় লেখকের বই কেনার জন্য ছুটে আসেন মেলায়। বলতে গেলে ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে বাঙালির প্রাণের এ মেলা।
প্রতিবারের মতো এবারো ২ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের মেলা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে উৎসর্গিত করা হয়েছে।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় আট লাখ বর্গফুট বিস্তৃত জায়গা নিয়ে বসানো হয়েছে বইমেলা। পরিধি বাড়ানোয় এবার দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরতে পারবেন। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২৬টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৯৪টি ইউনিট; মোট ৫৬০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৭৩টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ৩৩টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৩৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে লিটল ম্যাগাজিন বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রাখা হলেও তা এ বছর স্থানান্তরিত করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে ১৫২টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দের পাশাপাশি ছয়টি উন্মুক্ত স্টলসহ ১৫৮টি লিটলম্যাগকে স্টল দেয়া হয়েছে।
মেলার তৃতীয় দিন অর্থাৎ ৪ ফেব্রুয়ারি মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, মেলার প্রথম দিন থেকেই আসতে শুরু করেছে নতুন নতুন সব বই। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে সামনে রেখে বইমেলাকে সেভাবেই সাজানো হয়েছে। বইমেলার পভতরে ও বাইরে ব্যানার সাইনবোর্ডে মুজিববর্ষের শুভেচ্ছা দিয়েছে বিভিন্ন সংস্থা। এ পর্যন্ত সেসব বই প্রকাশিত হয়েছে এদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বইয়ের সংখ্যাই বেশি। এ ছাড়া উপন্যাস, গল্প, কবিতা, ছড়া , গবেষণাধর্মী, রান্না ও রূপচর্চাবিষয়ক বই প্রতিদিনই মেলায় আসছে। আমাদের জনপ্রিয় লেখকদের বই বিক্রি সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে বলে জানান প্রকাশকরা। মেলায় শিশু সাহিত্যের ওপর লেখা বইও বিক্রি ভালো বলে জানান তারা।
বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এসএসসি পরীক্ষা চলমান থাকায় ও এখনো সাপ্তাহিক বন্ধ পড়েনি বলে মেলা তেমনটা জমেনি। তারা জানান, প্রতি বছর শেষের দিকে মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড়ের পাশাপাশি বিক্রিও হয়ে থাকে। এ বছর এমনটাই হবে বলে মনে করছেন তারা।
মেলায় দর্শনার্থী কিছু থাকলেও এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে চলে যাচ্ছেন। বিক্রেতেরা অভিযোগ করে বলেন, সাপ্তাহিক বন্ধের দিনগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় থাকায় এবারো শিশুচত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। এই কর্নারকে শিশুকিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে । মাসব্যাপী বইমেলায় এবারো ‘শিশুপ্রহর’ ঘোষণা করা হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি। এ জন্য আগের দিন বাংলা একাডেমি তথ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এর প্রচার কার্যক্রমের জন্য তথ্যকেন্দ্র থাকবে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এ ছাড়া মেলায় আগত মানুষের বসার স্থানসহ নান্দনিক ফুলের বাগানও নির্মাণ করা হয়েছে। সাংবাদিকদের অবাধ তথ্য আদান-প্রদানের সুবিধার্থে বইমেলায় মিডিয়া সেন্টার রয়েছে তথ্যকেন্দ্রের উত্তর পাশে-পশ্চিম পাশে। বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কর্তৃপক্ষ গ্রন্থমেলায় তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, তথ্যকেন্দ্রের সর্বশেষ খবরাখবর এবং মেলার মূল মঞ্চের সেমিনার প্রচারের ব্যবস্থা করবে। মেলায় ওয়াইফাই সুবিধা থাকবে।
গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বের হওয়ার মোট ছয়টি পথ থাকবে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার নিরাপত্তাকর্মীরা। নিñিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রন্থমেলা সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুবিষয়ক ২৫টি নতুন বই নিয়ে আলোচনা করা হবে। একুশে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী একুশে বক্তৃতা। এ ছাড়া মাসব্যাপী প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, এই অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রতিদিনই রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ এবং আবৃত্তি। অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা এবং সঙ্গীত প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০১৯ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০১৯ গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থ প্রকাশের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে। এছাড়া ২০১৯ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে।
বইমেলা ২ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত মেলা চলবে।


আরো সংবাদ



premium cement
আফ্রিদির সাথে বিবাদের বিষয়ে কথা বললেন বাবর বাংলাদেশে গ্রিসের দূতাবাস হচ্ছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানের সাথে টেস্ট খেলতে চান রোহিত অধ্যাপক মাযহারুল ইসলামের বাসভবনে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ইউক্রেনের ২০টি ড্রোন, ২টি ক্ষেপণাস্ত্র নিষ্কিৃয় করল রাশিয়া তালেবানকে আফগান মাটি অন্যদের ব্যবহারের সুযোগ না দেয়ার আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের। গত দুই দিনের রেকর্ডের পর চুয়াডাঙ্গায় আজও বইছে তীব্র তাপদাহ বগুড়ায় শিশুকে গলা কেটে হত্যা, নানা আটক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের সম্ভাব্য একাদশ তালতলীতে ইউপি চেয়ারম্যানের নগ্ন ও আপত্তিকর ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল ভারতের নির্দেশের পর পোস্ট ব্লক করল এক্স

সকল