ঘুরতে চাই একদিন সারা দিন
জীবনের বাঁকে বাঁকে- রহিমা আক্তার মৌ
- ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
বইমেলা নিয়ে অনেকের অনেক অভিজ্ঞতা আছে, আছে অনেক বইমেলা ঘুরার আনন্দ আর বেদনা। অনেকের আছে মজার মজার গল্পও। কিন্তু আমার তো এমন কিছুই নেই, অমর একুশে বইমেলা ছাড়া আর কোনো বইমেলায় যাওয়া-দেখার ভাগ্য আমার হয়নি। তবে পাবলিক লাইব্রেরিতে অনুষ্ঠিত হুমায়ূন বইমেলা, হেমন্তের বইমেলা বা সাইন্টিফিক বইমেলায় গিয়েছি দুই-তিনবার।
‘ঘুরতে চাই একদিন সারা দিন’ শিরোনামটাই অনেকের কাছে ভিন্ন। আর কেনইবা এমন একটা শিরোনামে লিখতে এলাম তা পড়লেই বোঝা যাবে। লেখাটা অনেক বেশি প্রিয় বলেই মনের কথাগুলো সহজে বের করতে চাচ্ছি, জানি না কতটা বলতে বা লিখতে পারব।
২০১৫ সালে অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশ পায় প্রথম বই ‘মুক্ত আকাশ কত দূরে’ বইটি। ২০১৬ সালে অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশ পায় আমার আর আমার দুই মেয়ে রৌদ্র মালিহা আর অভ্র ফারিহার যৌথ শিশু-কিশোর গল্পের ‘মেঘনার মিষ্টি স্বপ্ন’ বইটি। (অভ্র এখন ফারিহা আহসান অভ্র নামে লিখে, ২০১৯ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় শিশুতোষ গল্পের বই, ‘ওদের পাশে আমরা’ প্রকাশ পায় পাতা প্রকাশনী থেকে) এরপর প্রকাশ পায়, প্রবন্ধের বই ‘নক্ষত্ররাজির কথা’, গল্পের বই ‘গল্পের আয়নায় মানুষের মুখ’, কলামের বই ‘দেশ আমার ভাবনা আমার’, চিঠির বই ‘মৌ’র চিঠির সাতকাহন’, মুক্তিযুদ্ধের বই ‘একাত্তর ও নারী’, শিশুতোষ গল্পের বই ‘প্রিয়ন্তির সারা বেলা’ অনুগল্পের বই ‘অল্প স্বল্প গল্প’, গল্পের বই ‘বেলা শেষের গদ্য’, শিশুতোষ গল্প ‘গল্পগুলো তুলতুলির’, প্রকাশিতব্য আছেÑ গল্পের বই, ‘জীবনের টুকরো গল্প’ শিশুতোষ গল্পের বই, ‘শিউলীতলায় ফুল কুড়াই’। এ ছাড়া চিঠিবিষয়ক চিঠির বই, ‘আকাশের ঠিকানায় চিঠি’ সম্পাদনা করছি। এ পর্যন্ত প্রকাশ হয়েছে তিনটি সংখ্যা। খুবই আক্ষেপ একটি বইয়েরও মোড়ক উন্মোচন করতে পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা নয়, এটা আমার নিয়তি।
বইমেলায় ২০০৮-০৯ সাল থেকে নিয়মিত যাই, তবে এটাকে যাওয়া বলে না। বলা হয় রাউন্ড দেয়া। পাবলিক পরীক্ষার সময় দেখেছি ম্যাজিস্ট্রেট হলে আসেন, এই রুম ওই রুম আর কেন্দ্রের এই মাথা থেকে ওই মাথা ঘুরেন। বইমেলায় যাওয়া আমার ভাগ্যটা অনেকটাই পাবলিক পরীক্ষার ম্যাজিস্ট্রেটের মতো। বইমেলায় যাওয়ার সাথী হয় মেয়েরা। প্রতি বছর অমর একুশে বইমেলা শুরু হলে একদিন যাওয়ার অনুমতি পাই, তাও সন্ধ্যার আগেই ফেরার কথা দিয়েই বের হই। কিন্তু পুরো ফেব্রুয়ারি মাস মন পড়ে থাকে বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলায়। মার্কেটে যাওয়ার অনুমতি পাই, বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার অনুমতি পাই, কিন্তু বইমেলায় যাওয়ার অনুমতি মেলে না। শুধু বইমেলায় নয়, বাংলা মোটর (বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে), শাহবাগ আর বাংলা একাডেমি যাওয়ার অনুমতি নেই।
পুরো মাসজুড়ে অপেক্ষায় থাকি কোন দিন কোন অজুহাতে বের হবো, প্রাণের বইমেলায় যাবো। দুই মেয়ে বইপোকা, ওরা কখনো কারো কাছে কিছুই গিফট চায়নি। কেউ কিছু দিতে চাইলেই বই চায়। নতুবা বাজেট চাই। বইমেলা শুরু হলেই পত্রিকা-ম্যাগাজিন দেখে বইয়ের লিস্ট করে, সে লিস্ট ধরে বই কিনতে যায়। তাও সামান্য সময় পায় যাওয়ার। এ কারণে ঘরে বসেই বই কিনি। রকমারি কিংবা প্রকাশনী বা পাবলিকেশন্স থেকে বই কিনি ঘরে বসে। যদি কখনো কমিশনে বই বিক্রির কথা শুনি, মা-মেয়ে যেকোনো অজুহাতে বেরিয়ে পড়ি।
বইমেলা চলাকালে প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সব চ্যানেল লাইভ দেখায়। অনেকে মনের আনন্দে নিজের বই নিয়ে লাইভে যায়, আর আমি বইমেলায় গেলে ক্যামেরা এড়িয়ে চলি। যদি কোনো চ্যানেলে দেখা যায়, যদি বাসায় এসে প্রশ্নের সম্মুখীন হই। তাই কখনোই এসব আমার হয়নি, হয় না। নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে হলে সামান্য যে প্রস্তুতি দরকার তা করতে পারি না বলেই আজও পারিনি। উন্মোচন করার প্রস্তুতি নিয়ে যদি না যেতে পারি, তাহলে কেমন করে হবে বলেও কখনো পারিনি।
অনেক লেখক-লেখিকাকে দেখি অন্যদের সাথে আড্ডা দিতে, বইমেলায় ঘুরতে। আমার তা কখনোই হয়নি। মেলা শুরু হয় বিকেল ৪টায়, আমি প্রবেশ করি তখন আর বেরিয়ে পড়ি ৫টায়। কারণ সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরতে হবে। ছুটির দিনে সকাল থেকে বইমেলা শুরু হয়, আমার বের হওয়া হয় না, সবার আগে ঘর-সংসারকে সময় দিতে গিয়েই বইমেলার সময় শেষ হয়ে যায়। অথচ বইমেলায় লেখক-পাঠকদের আড্ডা জমে সন্ধ্যার পর।
বইমেলা শুরু হলে নতুন বই আসছে শুনে কেউ কেউ যোগাযোগ করেন। কবে কখন বইমেলায় যাবো জানতে চান, তারা দেখা করবেন, বই নেবেন। তাদের কাউকেই সঠিক সময় বলতে পারি না বলে পাঠকদের সাথে লেখকের যে বন্ধন তাও হয়ে ওঠে না। পাঠকদের অনেক চাহিদা আছে, কিছু কিছু পাঠক চান বই কেনার সময় লেখকের সাথে দেখা হোক। একটা অটোগ্রাফ বা ফটোগ্রাফ নিয়ে বই কিনবেন। লেখকের সাথে পরিচিত হবেন, আমার ক্ষেত্রে এমনটা কখনো হয়ে ওঠেনি, হয় না। অটোগ্রাফ চাইলে সেই শুভাকাক্সক্ষীকে বলিÑ
ঠিকানা দিন, অটোগ্রাফ দিয়ে বই পাঠিয়ে দেবো।
অবশ্য এমন অনেক বই পাঠিয়েছি। খুব ইচ্ছে করে বইমেলা শুরু হলে যখন ইচ্ছে চলে যাই। সকাল থেকে সন্ধ্যা ঘুরে বেড়াই মেলার এপাশ থেকে ওপাশে। যে সামান্য পাঠক তৈরি হয়েছে তারা জানতে পারবে, তাদের সাথে গল্প হবে, পরিচয় হবে। নিজে লিস্ট ধরে ধরে বই কিনব, ক্লান্ত হয়ে গেলে ঘাসের ওপর একটু বসব। নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করব, টিভির বইমেলা লাইভে দাঁড়িয়ে নিজের বইয়ের পাতা থেকে দু’লাইন পড়ে শোনাব। মনের মাঝে লুকিয়ে থাকা সামান্য কথা বলব। ‘একাত্তর ও নারী’ বইটি বের হওয়ার পর ইচ্ছে করেছিল বইমেলার মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে প্রিয় লেখিকাদের নিয়ে বইটির মোড়ক উন্মোচন করি। সামনে থাকবে অনেক ক্যামেরা, অনেক অনেক প্রিয় ব্যক্তি। সেই স্বপ্ন সফল হয়নি। একশ’ লেখিকাকে নিয়ে একটা কাজ শুরু করেছি, একশ’ লেখিকাকে নিয়ে একশ’ প্রবন্ধ লিখছি। ৩২ জনকে নিয়ে লেখা হয়েছে। পড়ছি, লিখছি পাশাপাশি পত্রিকার সাহিত্য পাতায় প্রকাশ হচ্ছে। আল্লাহ চায় তো এই একশ’ জনকে নিয়ে লেখা বইটি প্রকাশ পেলে স্বপ্নের সেই মঞ্চে উঠব প্রিয় লেখিকাদের নিয়ে।
আনন্দ আর বেদনার জীবন মানুষের, আমারো তাই। বইমেলা আসছে ভাবতেই ভালো লাগে। সারা দিনের না হোক একবেলা করেই না হয় যাবো, ঘুরব, বই কিনব, বুঝতে হবেÑ জীবন যেখানে যেমন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা